এ কেমন উৎসব আমাদের!
প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির সমন্বয়ে ২০২২ শেষ করে ২০২৩ সালে পা দিল বিশ্ব। সবারই আশা, বিদায়ী বছরের অপ্রাপ্তিগুলো নতুন বছরে পূরণ হবে। সফলতা ও সুখশান্তিতে সমৃদ্ধ হবে জীবন। তাই তো প্রতিবছর নানা রকম জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করা হয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও আতশবাজি, গানবাজনা, ফানুস ওড়ানো ইত্যাদির মধ্য দিয়ে উৎসবে মেতে উঠে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়। নতুন বছর উপলক্ষে উৎসব করাই যায়, কিন্তু আমাদের জাতিগত সমস্যা হলো, যেকোনো বিষয়ে অতি আবেগপ্রবণ হয়ে যাই। তার টাটকা প্রমাণ সম্প্রতি থার্টি ফার্স্ট নাইট। এ রাতে উৎসবের নামে আমরা দেখেছি, ফানুস বিদ্যুতের তারে আটকে থাকায় দুই ঘণ্টা মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ছিল। ওই রাতে ওড়ানো শত শত ফানুস গিয়ে পড়ে মেট্রোরেলের লাইনে। একটু অসতর্কতার জন্য হতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।
এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এক ভিডিওতে দেখেছি, আতশবাজির শব্দে গাছে থাকা পাখিগুলো ভয়ে–আতঙ্কে দিগ্বিদিক ছুটে বেড়াচ্ছে। এ দৃশ্য সমগ্র দেশবাসীকে আহত করেছে। ওই পরিস্থিতিকে কেউ উৎসব বলতে পারে না। উৎসব করতে গিয়ে হিতাহিত জ্ঞানকে বিসর্জন দেওয়া কোনো সুস্থ মানুষের কাজ হতে পারে না। উৎসবের নামে মাত্রাতিরিক্ত এ মাতামাতিতে বহু পাখি মারা গেছে। ফেসবুকে এক ছবিতে দেখা গেছে, পাখি মরে এক জায়গায় স্তূপ হয়ে গেছে। এগুলো কোনো সুস্থ মানসিকতার মানুষের কাজ হতে পারে না। গত বছর আতশবাজি ফোটানোর শব্দে এক বাচ্চা মারা যাওয়ার ঘটনা দেশবাসীকে নাড়া দিয়েছিল। তারপরও এ বছর যেন কোনো ভাবান্তর নেই।
আতশবাজি ফোটানো, সারা রাত উচ্চ শব্দে গান বাজানো—এগুলোর ক্ষেত্রে প্রশাসনের পদক্ষেপও তেমন নেই। সারা দেশের মতো রাজশাহীতেও ৪৪তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা হচ্ছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীই ছুটিতে বাড়ি না গিয়ে হলে থেকে পড়াশোনা করছেন। কিন্তু এর আশপাশের আবাসিক এলাকার লোকজনের যেন বিন্দুমাত্র ভাবান্তর নেই। শহীদ জিয়াউর রহমান ও শহীদ হবিবুর রহমান হলের পেছনে মেহেরচণ্ডী নামক জায়গায় তো সন্ধ্যা থেকে উচ্চ শব্দে একটানা গান বাজানো হয়েছে। পরদিন অনেকেরই পরীক্ষা ছিল। এগুলো কেমন উৎসব! উৎসব করতে গিয়ে মনুষ্যত্ব নামক গুণটাও আমরা ভুলে যাই। আমাদের আশপাশে অসুস্থ ও বয়স্ক মানুষ থাকে—স্বাভাবিক এ ভাবনাও আমাদের মধ্যে আসে না! আর একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই বসবাস করা মানুষ এমন কাজ করতে পারে কীভাবে!
উৎসবেরও একটা নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধতা আছে। নিজে আনন্দ করতে গিয়ে অন্যের ক্ষতি করাকে উৎসব বলে না। আমাদের চিন্তাভাবনার প্রসার ঘটাতে হবে। উৎসবের নামে আমরা যা করছি, এগুলো তো আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি—কোনো কিছুর সঙ্গেই মেলে না। সবার আগে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হতে হবে, একে অপরকে সচেতন করতে হবে। আমাদের চিন্তাভাবনাও সংকীর্ণ, যা আমাদের অগ্রগতির অন্তরায়। আমাদের সমাজ ও দেশের কথাও ভাবতে হবে। সুস্থ চিন্তার লালন করতে হবে। প্রশাসনকেও এ বিষয়ে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে।
*লেখক: শাকিবুল হাসান, শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়