স্বপ্নের চেয়ে সুন্দর

যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ফারহানা আহমেদ লিসা দীর্ঘদিন ধরে লিখছেন। সাবলীল গদ্যে দারুণ লেখেন। কাহিনি ও লেখার শৈলীতে তাঁর উপন্যাস হয়ে ওঠে হৃদয়গ্রাহী। মানুষ এক অসম্ভব সৃষ্টিশীল প্রাণী। অসীম সৃষ্টিশীলতা নিয়ে ইতিহাসের পথে তার পদচারণ। ফারহানা আহমেদ লিসাও সে পথের এক পথিক। দারুণ এক সম্ভাবনাময় ঔপন্যাসিক।

পৃথিবী একটা উপন্যাস। এখানে জীবন অনেক বৈচিত্র্য। জীবন আনন্দ–বেদনার এক উপাখ্যান। উপন্যাসে থাকে এর বহিঃপ্রকাশ। থাকে জীবনের নানা প্রশ্ন ও জীবন–জিজ্ঞাসার উত্তর। একটি ভালো উপন্যাস জীবন বদলে দিতে পারে।

উপন্যাসের চরিত্রেরা হয়তো অবিকল জীবন নয়। কিন্তু জীবনের মতোই কথা বলে। ফারহানা আহমেদ লিসার ‘স্বপ্নের চেয়ে সুন্দর’ উপন্যাস এমনই একটি আখ্যান। এর চরিত্রেরা পাঠককে অভিভূত করবে। খুব কাছে থেকে তাদের জীবনের গল্প শোনাবে।

এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র জাহেদ। খুব ছোটবেলায় সে বাবাকে হারায়। তারপর এই বিশাল পৃথিবীতে সে একা হয়ে যায়। একাই পথ চলতে হয়। জীবনের প্রয়োজন কোনো বাধা মানে না। এই প্রয়োজনেই তাকে চাকরি সূত্রে একদিন যেতে হয় গভীর অরণ্যে। সেখানে শুরু হয় এক নতুন জীবন। এ জীবন ভয়ংকর কঠিন।

কিন্তু ওই যে কবিতায় আছে,
“…চিনিলাম আপনারে
আঘাতে আঘাতে
বেদনায় বেদনায়;
সত্য যে কঠিন,
কঠিনেরে ভালোবাসিলাম…”

তাই সে হার মানে না। তাকে জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে হবে। জাহেদ ভীষণ মানবিক। সে জানে, বনের প্রাণী মারা অপরাধ। কিন্তু একদিন এক মানবসন্তানকে বাঁচাতে সে একটি কুমির মেরেছিল। এমনই আরেক প্রয়োজনে একটি বাঘও মারতে হয়েছে তাকে। এ জন্য তার ভীষণ দুঃখবোধ হয়েছে। কিন্তু এই গ্রহে মানুষই শ্রেষ্ঠ। মানুষের চেয়ে প্রাণীর মূল্য বেশি হতে পারে না। এ জন্য তাকে কিছু নির্মম কাজও করতে হয়।

মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। সে স্বপ্ন দেখে। তাকে বড় হতে হবে। ঘুরে দাঁড়াতে হবে। এ জন্য জাহেদ সেই অরণ্যের কঠিন জীবন মেনে নেয়। কর্তৃপক্ষ তার ওপর খুশি হয়। তার প্রমোশন হয়। সে আরও ওপরের পদে আসে। একসময় সে অরণ্য থেকে ফিরে আসে শহরে। এখানে শুরু হয় তার আরেক জীবন। জাহেদ জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে চায়। চাকরির পাশাপাশি সে লেখাপড়া করে। এভাবে এমএ পাস করে। তার জীবনে একের পর এক চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা আসতে থাকে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সফল হয় জাহেদ।

একবার সে মাকে দেখতে গ্রামে যায়। সেখানে রেনু নামের এক মেয়েকে দেখে। প্রথম দেখাতেই জাহেদের ভালো লাগে রেনুকে। সেই ভালো লাগা থেকে ভালোবাসা। মাত্র কয়েক দিনে মেয়েটিকে দারুণভাবে মনে ধরেছে জাহেদের। জীবনে সে হার মানেনি। আজও মানবে না। এই ভালো লাগাকে সে চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নিতে চায়। সে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায় রেনুর পরিবারের কাছে। রেনুর বাবা ডাক্তার। তারা অভিজাত। রাজি হয় না। জাহেদের জীবনে চ্যালেঞ্জ আছে। ব্যর্থতা নেই। শেষ পর্যন্ত এই চ্যালেঞ্জেও জয়ী হয়। একসময় জাহেদের হাত ধরে রেনু। তারা ঘর বাঁধে। জীবনের দুঃখ–কষ্টগুলো দূর হয়ে যায় দুজনের ভালোবাসায়।

উপন্যাসটি সবার ভালো লাগবে বলে আশা করি। জাহেদরা চিরকাল তারুণ্যের সাহসের প্রতিনিধি হয়ে বেঁচে থাকবে।

এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র জাহেদ ছাড়া আরও চরিত্র আছে। উপস্থাপনের কুশলতায় চরিত্রগুলো জীবন্ত হয়ে ওঠে। ফারহানা আহমেদ লিসা জীবনের গভীর থেকে এসব চরিত্রের সুখ-দুঃখ অনুভব করেন। উপন্যাসের নায়ক জাহেদ তারুণ্যের প্রতীক। যেকোনো তরুণের জীবনে জাহেদের মতো চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা আছে। বেঁচে থাকার মতো আনন্দ আর নেই। জাহেদ সংগ্রাম করে বিজয়ী হয়।

রেনুর সঙ্গে ঘর বাধার পর জাহেদের আরও উন্নতি হয়। একদিন তাদের ঘর আলো করে আসে এক কন্যা সন্তান। তার নাম কনক।

কনক ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। একপর্যায়ে সে চিকিৎসক হওয়ার জন্য মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা দেয়। এই সময় জাহেদ তার প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদে উন্নীত হয়। সংসারে দারুণ স্বাচ্ছন্দ্য আসে। স্বপ্নের চেয়ে সুন্দর হয় তাদের জীবন। তখন জাহেদ আর রেনু ভাবে, কনক পারবে তো তাদের মতো স্বপ্নের চেয়ে সুন্দর জীবন রচনা করতে…।

আশফাকুজ্জামান: লেখক, সংগঠক ও সাংবাদিক। উপদেষ্টা, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম। সদস্য, প্রথম আলো বন্ধুসভা