খোলাচিঠি: এক কাপ চা, অতঃপর একটি মহাকাব্য

চিঠিঅলংকরণ: সব্যসাচী চাকমা

তুমি আমার কাছে ধূসর খামে রঙিন স্বপ্নের চিঠি চেয়েছিলে। আমি চিঠি লেখায় অপটু বলে চিঠি আর লেখা হয়নি। তুমি কিঞ্চিৎ অভিমানও করেছিলে বটে। ভেবেছিলাম, আসন্ন চিঠি দিবসে শব্দের সুনিপুণ গাঁথুনিতে হৃদয়ের কথা বলব তোমায়। অতঃপর চিঠি দিবস এল এবং চিঠির প্রেরকও রইল। শুধু নেই চিঠির সেই প্রাপক। তবু তোমায় নিয়ে আমার বিস্তৃত অনুভূতির ছোট্ট খোলাচিঠি রয়ে যাক আরও অন্তত এক যুগ।

প্রিয় হৃদয়গ্রাহী,

শুরুতেই তোমার প্রতি হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার উষ্ণতা ও শরতের নীলাকাশের ভাঁজে ভাঁজে মিশে থাকা মেঘের স্নিগ্ধতাময় প্রীতি। তোমায় নিয়ে চিঠি লেখা আমার জন্য দুঃসাহসিক কাজ। তোমায় নিয়ে আমার ভেতরে যে বাঁধভাঙা অনুভূতি রয়েছে সেটাকে পুঁজি করে মহাবাক্য লেখা যাবে। অবশ্য আমাদের পথচলা শুরু হয় তোমার হাতে বানানো এক কাপ চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে; অর্থাৎ আমাদের সম্পর্কের শিরোনাম হতে পারে, এক কাপ চা, অতঃপর একটি মহাকাব্য। বিশ্বাস করো, আমি শরৎচন্দ্র হলে কালজয়ী উপন্যাস রচনা করে তোমার প্রতি আমার গভীর প্রণয় শত শত বছর বাঁচিয়ে রাখতাম। আমি যদি নজরুল হতাম, তাহলে সুরের মূর্ছনায় ভালোবাসার কথা বাতাসের কানে কানে জানিয়ে দিতাম আর আকাশকে করতাম মাতোয়ারা। আমি লেওনার্দো দা ভিঞ্চি হলে রংতুলিতে জগদ্বিখ্যাত মোনালিসার চেয়েও সুন্দরভাবে ক্যানভাসে তোমার মুখখানি আঁকতাম। তবে আমি তেমন কেউই নই বলে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হবে না, সেটা তো হতে পারে না! এই তো লিখছি তোমায় এলোমেলো ভাবনা বুঝে নিয়ো তোমার অনুভবে।

চিঠি
প্রতীকী ছবি

মনে পড়ে, জ্যোৎস্না রাতে একসঙ্গে হাজার মিটার হাঁটার কথা। সেই রাতের সাক্ষী আসমানের চাঁদ আর রাস্তার নিশ্চুপ ল্যাম্পপোস্ট। স্মৃতিতে ভাস্বর আবছা আলোয় হেঁটে হেঁটে চা পান আর তোমার সঙ্গে গল্প করার কথা। তুমি নেই, তবে তোমার ভালোবাসার উষ্ণতা  আমি খুঁজে পাই নিঝুম রাতে ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে। তোমার প্রতি আমার নেই কোনো অভিযোগ, রয়েছে সীমাহীন অনুরাগ। অনন্তকাল তুমি অনিন্দ্যসুন্দরের উৎকৃষ্ট উপমা হয়ে বেঁচে রইবে আমার হৃদয়মন্দিরে। আমি পূজারি হয়ে তোমার সৌন্দর্যের পূজায় উৎসর্গ রাখব আমায়। এ কথা কেউ না জানুক, শুধু তুমি জেনো। পরিশুদ্ধ আত্মায় ফুলের মতো প্রস্ফুটিত হোক তোমার জীবন। সজীবতার ছোঁয়ায় প্রাণোচ্ছল হোক পৃথিবী।

তোমারই

মুহম্মদ সজীব প্রধান

শরতের ১৭, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

*লেখক: মুহম্মদ সজীব প্রধান, শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ।

নাগরিক সংবাদে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]