বাবা, তোমাকে বলতে চাই
বাবা দিবস পালিত হয়েছে ১৬ জুন। এ-সংক্রান্ত পাঠকের পাঠানো লেখা থেকে বাছাই করা লেখা প্রকাশিত হচ্ছে নাগরিক সংবাদে।
বাবা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সম্পদ। আদর, স্নেহ, ভালোবাসা, বিশ্বাস, ভরসা আর পরম নির্ভরতার নাম। আল্লাহ তাআলা বাবাদের অনেক বিস্ময়কর গুণ দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, যা সন্তানদের কাছে এক বিশেষ নিয়ামত।
পরকালেও হিসাবের দিনে মহান আল্লাহ আদম সন্তানদের যাঁর নামের সঙ্গে যুক্ত করে ডাকবেন, তিনি হলেন বাবা। ‘বাবা’ ডাকটা খুব প্রেমময়, মধুর এবং একটি বিশেষ উপাধি। জীবনে সব সুখ-শান্তি বিসর্জন দিয়ে, অনেক ত্যাগ স্বীকার করে সন্তানদের ছায়ার মতো যিনি আগলে রাখেন, তিনি আর কেউ নন, একমাত্র বাবা।
বাবারা সন্তানদের কাছে একজন সুপারহিরো। বিশেষ ক্ষমতাধর কোনো ব্যক্তি। যাঁর হাতের ছোঁয়ায় অনেক কিছুই সম্ভব। যাঁর কাছে অসম্ভব বলে আদৌ কোনো কিছু নেই। তাঁর শক্তি, সাহসিকতা আর আদর্শ সন্তানদের চলার পথে অনুপ্রেরণা দেয়, সাহস জোগায়। বাবার প্রতি সন্তানদের ভালোবাসা চিরন্তন; যা প্রতিনিয়তই দেখা যায়, শুধু বিশেষ কোনো দিনে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে, এমনটি নয়। একজন বাবার ভালোবাসা অফুরন্ত এবং সব সময় সন্তানদের জন্য বিদ্যমান। আসলে একজন সন্তানের জন্য প্রতিদিনই ‘বাবা দিবস’। বাবা মানে একটু শাসন আর সমুদ্র সমতুল্য ভালোবাসা।
বাবা মানে একটা ঠিকানা, নির্ভরতার আকাশ। বাবা শাশ্বত, চিরন্তন ও চির আপন। বাবা হলেন নিরাপত্তার চাদর। বাবা মানে একটি ‘মজবুত খুঁটির ঘর’। সন্তানের প্রতি বাবার ভালোবাসার পরিমাপ করা যেমন অসম্ভব, তেমনি সন্তানকে নিয়ে দেখা বাবার স্বপ্নের সীমা মাপা যায় না।
বাবা নামের মানুষটি একটি বটবৃক্ষের মতো। যে গাছের ছায়া সন্তানদের জন্য একমাত্র রক্ষাকবচ। সন্তানকে জীবনের সব বিপদ থেকে বাঁচিয়ে রাখে। সন্তানেরা দৃঢ়বিশ্বাসের সঙ্গে শক্তি, সাহস আর ভরসা পায় যার কাছ থেকে, তিনি হলেন বাবা। বাবা নামের বৃক্ষটি হারিয়ে গেলে দুঃখ এসে সন্তানের জীবনে হানা দেয়, জীবনে নেমে আসে অনিশ্চয়তার দোলাচল। বটবৃক্ষের নিচে থাকা গাছের মতো পিতৃহীন সন্তানদের পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য তখন প্রতিদিন সংগ্রাম আর যুদ্ধ করে যেতে হয়। ঝড়বৃষ্টি-রোদ মোকাবিলা করে পৃথিবীতে টিকে থাকতে হয়।
‘বাবা’ শব্দটি দুটি অক্ষর নিয়ে গঠিত, কিন্তু এর ভেতরে সীমাহীন গহিনে রয়েছে হৃদয়ের স্পন্দন। প্রতিটি সন্তান জানে তার বাবার হাজারো ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং সহস্র লুকানো ভালোবাসার কথা। আমার বাবাকে নিয়ে আমার অনেক কথা, বহু স্মৃতি; যা আমি সারা জীবন লিখেও শেষ করতে পারব না। শুধু এই একটি লেখায় যা কখনোই পুরোপুরি ব্যক্ত করা সম্ভব নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করেছি। চেষ্টা করেছি নানাভাবে সংসারে সহায়তা করার। কিন্তু সেসব একেবারে যৎসামান্য। কোভিডের কারণে অনেক দিন বাড়িতে থাকতে হয়েছিল। দিনের পর দিন পিতৃ–তহবিল থেকে ভাতা নিয়ে গেছি। সময়টা ছিল জীবনের অন্যতম কঠিন পর্ব। তবে শিখেছি অনেক কিছু। এখন মনে হয়, ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে জীবনে এ রকম কঠিন অভিজ্ঞতার ভীষণ রকমের প্রয়োজন।
আমি জানি, পৃথিবীর সব বাবাই তাঁর সন্তানকে জীবন দিয়ে ভালোবাসেন। আমার বাবা যে ত্যাগ দিয়ে আমাকে ভালোবাসা দিয়ে এসেছেন, তার বাইরে তো আমার নিজের পৃথিবী নেই। পুনর্জন্ম বলে আদৌ কিছু আছে কি না, আমি জানি না। যদি থাকে, তাহলে আমি এই মানুষটার সন্তান হয়েই আবার ফিরে আসতে চাই। আমার বাবা এমনই একজন, যাঁকে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আর আদর্শে ধারণ করে আজও পথ চলছি এবং চলব সারা জীবন তাঁর গর্বিত সন্তান হয়ে।
লেখক: আসিফ আল মাহমুদ, স্নাতকোত্তর, ফার্মেসি বিভাগ
*নাগরিক সংবাদে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]