শেষের সুর

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

মায়া আর রুদ্রের পরিচয় হয়েছিল এক বর্ষার সন্ধ্যায়, যেন প্রকৃতির মায়াবী আবেশ তাদের মিলনের সাক্ষী ছিল। মায়ার সেই হাসি—যা কিনা গোধূলির আভায়ও আলোকিত হতে পারে—রুদ্রকে মন্ত্রমুগ্ধ করে। ধীরে ধীরে তাদের বন্ধুত্বের অজানা বাঁধন প্রেমের চাদরে জড়িয়ে যায়। রুদ্রের কাছে মায়া যেন ছিল এক শূন্যতায় পূর্ণতা আর মায়ার কাছে রুদ্র ছিল গভীর অথচ নিশ্চুপ ভালোবাসার স্বর।

কিন্তু জীবনের খেলা বড় নিষ্ঠুর। যখন তাদের প্রেম আকাশের দিকে ডানা মেলতে প্রস্তুত, তখনই মায়ার পরিবার তাকে দেশের বাইরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। মায়ার চোখে তখন এক অদ্ভুত বিষণ্নতার ছাপ, আর রুদ্রের মনে এক নীরব হাহাকার। মায়া কাঁপা গলায় রুদ্রকে বলে, ‘তুমি ছাড়া আমি শূন্য, কিন্তু বাস্তবতা বড় কঠিন।’

বিদায়ের দিন এলে তারা দুজনেই চুপচাপ, যেন শব্দহীন এক সংলাপের মধ্যে সব কথা বলে ফেলেছে। মায়া ফিসফিসিয়ে বলে, ‘তুমি অপেক্ষা করবে, তাই না?’ রুদ্র মাথা ঝাঁকায়, কিন্তু তার চোখ বলে দেয়, সে জানে, এই প্রতীক্ষা নিঃশেষ হবে শুধুই বেদনার রক্তাক্ত পথে।

বছরের পর বছর পেরিয়ে যায়। রুদ্রের কাছে আসে এক নির্মম সত্য: মায়া আর ফিরবে না, সে অন্য কারও জীবনের সঙ্গী হয়ে গেছে। রুদ্রের হৃদয় যেন চিরজীবনের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়।

আজও বর্ষার দিনে, যখন আকাশ অশ্রুবর্ষণ করে, রুদ্র সেই বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে অনুভব করে মায়ার স্পর্শ, তার মৃদু হাসি। এক নিশ্বাসে সে বলে, ‘মায়া, তুমি হয়তো দূরে, কিন্তু আমার প্রতিটি বৃষ্টি তোমায় খুঁজে ফিরবে, যেমন হৃদয় খুঁজে ফেরে তার চিরন্তন প্রেমের শেষ সুর।’

লেখক: রিয়াদ রহমান রুদ্র, এসএসসি পরীক্ষার্থী, পাবনা কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ