বিখ্যাত তুরগুত আল্পের বহুল প্রতীক্ষিত আগমন কুরুলুস ওসমানে

বিশ্ব বিখ্যাত তুর্কি সিরিজ ‘দিরিলিস আরতুগ্রুল’–এর  জনপ্রিয় ঐতিহাসিক চরিত্র ‘তুরগুত আল্প’ ইতিমধ্যে আরেকটি বিশ্ব বিখ্যাত তুর্কি সিরিজ ‘কুরুলুস ওসমান’–এ যোগদান করেছে। তুরগুতের আগমন নিয়ে বেশ নড়েচড়ে বসেছেন ‘কুরুলুস ওসমান’ সিরিজের দর্শকেরা। তবে ‘দিরিলিস আরতুগ্রুল’ সিরিজ শেষ হওয়ার প্রায় ছয় বছর পর তুরগুত আল্প চরিত্রের এমন আকস্মিকভাবে ‘কুরুলুস ওসমান’–এর ষষ্ঠ সিজনে যোগ দেওয়াটা বেশ আশ্চর্যজনকও মনে হচ্ছে দর্শকদের।

উল্লেখ্য যে ২০১৯ সালে পঞ্চম সিজনের সমাপ্তির মধ্য দিয়ে বিশ্ব বিখ্যাত ‘দিরিলিস আরতুগ্রুল’ সিরিজ শেষ হয়। একই বছরের নভেম্বরে ‘দিরিলিস আরতুগ্রুল’–এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোজদাগ প্রোডাকশন দিরিলিসের কেন্দ্রীয় চরিত্র আরতুগ্রুলের পুত্র ওসমানের ইতিহাস অবলম্বনে ‘কুরুলুস ওসমান’ সিরিজ শুরু করেন। তবে কুরুলুস ওসমান সিরিজের প্রথম থেকে দিরিলিসের কয়েকটি জনপ্রিয় চরিত্র যেমন বামসি বে, সেলজান হাতুন, আবদুর রহমান গাজী, গুন্দুজ বে, দুন্দার বে প্রমুখ থাকলেও তুরগুত আল্পের অভাব অনুভব করছিলেন দর্শকেরা। এ নিয়ে অনেক জায়গায় লেখালেখিও হয়েছিল ওই নতুন সিরিজে তুরগুত আল্পের চরিত্র ফিরিয়ে আনতে। তবে ২০২১ সালে তুরগুত আল্প চরিত্রের অভিনেতা চেঙ্গিজ চোসকুন একটি টিভি শোতে জানিয়ে দেন যে তিনি কুরুলুস ওসমান সিরিজে ফিরবেন না। তাই কুরুলুস ওসমানের পাঁচটি সিজন শেষ হয়ে যখন ষষ্ঠ সিজনও প্রায় শেষের দিকে, তখন ওই সিরিজে তুরগুত আল্পের এমন আগমন বিশ্বব্যাপী দর্শকদের মধ্যে বাড়তি উন্মাদনা যোগ করেছে।

অনেকেই বলছেন যে তুরগুত আল্পকে এখন শতবর্ষী বৃদ্ধ দেখানো হবে। আবার কেউ কেউ তাঁর প্রকৃত ইতিহাসও জানতে আগ্রহী। সত্যি বলতে, তুরগুত আল্প ঐতিহাসিক সূত্রমতে ১৩৫ বছর (মতান্তরে ১২৫ বছর) বেঁচে ছিলেন। তিনি ১২০০ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন ওসমান গাজীর পিতা আরতুগ্রুল গাজীর সহচর, কমান্ডার ও বে। এমনকি ওসমান গাজীর দাদা সুলেইমান শাহর সময় থেকে তিনি ওসমানের মৃত্যুর পরও ওসমানের পুত্র ওরহান গাজীর সময়েও ওসমানী রাষ্ট্রের সেবা করেছিলেন। তুরগুত আল্প ছিলেন একজন খুবই চৌকস ও দক্ষ যোদ্ধা। যুদ্ধের সময় কুঠার নিয়ে তাঁর দক্ষতার দরুন তিনি কয়েক মুহূর্তের মধ্যে বেশ কয়েকজন শত্রু সৈন্যকে পরাস্ত করে ফেলতে পারতেন। তাঁর যুদ্ধের কৌশল বেশ আকর্ষণীয় ছিল। এ জন্য দিরিলিস আরতুগ্রুল সিরিজের বিশ্বব্যাপী দর্শকদের কাছে তুরগুত আল্প তাঁর অসীম সাহসিকতা এবং যুদ্ধের কৌশলের জন্য বেশ জনপ্রিয়। তবে হ্যাঁ, কুরুলুস ওসমান সিরিজের ষষ্ঠ সিজনে বর্তমান সময়কাল হয়তো ১৩১৪-১৫ সালের মতো হতে পারে।

তাই এ সময়কালে তুরগুত আল্পের এমন আগমনে যাঁরা সত্যিই আশ্চর্যিত হয়েছেন, তাঁদেরকে বলতে চাই, তুরগুত আল্পের ১৩৫ বছরের জীবন ও ইতিহাস তৎকালীন ওসমানীয় সাম্রাজ্যের সূচনায় একসঙ্গে গাথা। তুরগুত আল্প এমনই এক ঐতিহাসিক শক্তিশালী মুসলিম যোদ্ধা যাঁর জীবনের অধিকাংশ সময়ই কেটেছে যুদ্ধের ময়দানে। এমনকি কয়েকটি ঐতিহাসিক সূত্রমতে, তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার আগে যুদ্ধের ময়দানে যুদ্ধ করছিলেন। তিনি এমন শক্তিশালী যোদ্ধা ছিলেন, যিনি ১০০–এর অধিক বয়সেও রোমান সাম্রাজ্য ও মোঙ্গলদের কাছে ভয়ংকর যোদ্ধা হিসেবে অভিহিত হয়েছিলেন।

বলা বাহুল্য, সম্প্রতি কুরুলুস ওসমান সিরিজও বেশ সমালোচনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল বিতর্কিত স্ক্রিপ্টের কারণে। অনেকেই বিরক্ত হচ্ছিলেন ওই সিরিজের কিছু বিতর্কিত ইতিহাসের কারণে; বিশেষ করে চতুর্থ ও পঞ্চম সিজনের বেশ কিছু উপস্থাপিত ঘটনা এবং দৃশ্য নিয়ে। ষষ্ঠ সিজনের মাঝপথে আবারও তুমুল সমালোচনা শুরু হলে ওই সিরিজের নির্মাতা মেহমেত বোজদাগ সিরিজের স্ক্রিপ্ট রাইটারকে বরখাস্ত করে দিরিলিস আরতুগ্রুল সিরিজের স্ক্রিপ্ট রাইটারকে নিয়োগ দেন। এরপরই কয়েকটি ঐতিহাসিক চরিত্রের আগমন ঘটা শুরু করে সিরিজে। তাই ঐতিহাসিক চরিত্র তুরগুত আল্পের এমন আগমন শুধু যে বাড়তি উন্মাদনা যোগ করেছে তা–ই নয়, বরং বিশ্বব্যাপী দর্শকদের কাছে সিরিজটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

তবে এটাও বলা বাকি রাখে না যে তুরগুত আল্পের মতো শতবর্ষী শক্তিশালী ও দক্ষ-সাহসী যোদ্ধার ইতিহাস শুধু ওসমানীয় সাম্রাজ্য ছাড়া বিশ্ব বিখ্যাত যেকোনো সাম্রাজ্যের ইতিহাসেই দেখতে পাওয়া বিরল।

লেখক: তাওহীদ জানান অভিক, শিক্ষার্থী, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়