প্রযুক্তি (চিপ)–যুদ্ধ, ভূরাজনীতি: চীন বনাম যুক্তরাষ্ট্র
অধুনা প্রচলিত বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস হাজারো ধরনের ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর যন্ত্রাংশের সমন্বয়ে গঠিত। যন্ত্রাংশগুলো একটি অন্যটির পরিপূরক, অর্থাৎ একটি ছাড়া অন্যটি কর্মক্ষম হতে পারে না। এ যন্ত্রাংশগুলো দিয়ে যদি একটি চক্র তৈরি করি, তাহলে চক্রের সবচেয়ে অত্যাবশ্যকীয় ধাপটি হবে মাইক্রোচিপ। এই মাইক্রোচিপ যদি চক্র থেকে সরিয়ে ফেলা যায়, তাহলে পুরো চক্রটি (ডিভাইসটি) অকার্যকর হয়ে পড়ে। স্মার্টফোন, স্মার্ট ওয়াচ, স্মার্ট টিভি, রকেট থেকে শুরু করে গাড়ি—আধুনিক বিশ্বের প্রায় প্রতিটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস তৈরি করতে দরকার পড়ে এ মাইক্রোচিপের।
বর্তমানে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে বাণিজ্যযুদ্ধ চলছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্যবস্তু চীনের প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলো। মাইক্রোচিপের নিয়ন্ত্রণ যার হাতে থাকবে, পুরো ডিভাইস তৈরির নিয়ন্ত্রণও তার কবজায় থাকবে। অন্যভাবে বলতে গেলে স্বভাবতই এই চিপ তৈরির নাটাই যার হাতে থাকবে, আগামী বিশ্বের নিয়ন্ত্রণও তার হাতেই থাকবে। একটা উদাহরণ দিয়ে বিষয়টা পরিষ্কার করে দিচ্ছি।
বর্তমানে স্মার্টফোনের বৈশ্বিক বাজারের একটা উল্লেখযোগ্য হিস্যা আছে চীনা কোম্পানি শাওমির। কিন্তু এই কোম্পানির স্মার্টফোন তৈরিতে যে মাইক্রোচিপ ব্যবহৃত হয়, তার অধিকাংশই মার্কিন কোম্পানি কোয়ালকম ও তাইওয়ানের কোম্পানি মিডিয়াটেক থেকে কেনা হয়। এ কোম্পানিগুলো আবার বিভিন্ন থার্ড পার্টি (TSMC, UMC, SK Hynix, Samsung প্রভৃতির) মাধ্যমে চিপ তৈরি করিয়ে নেয়। এখন যুক্তরাষ্ট্র যদি শাওমির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাহলে কোয়ালকম বা মিডিয়াটেক শাওমির কাছে মাইক্রোচিপ বিক্রি করতে পারবে না। এমনকি চীনের চিপ ডিজাইন কোম্পানি ইউনিসক বা হাইসিলিকনও শাওমির কাছে চিপ বিক্রি করতে পারবে না। কেননা, তারাও তাইওয়ান বা দক্ষিণ কোরিয়ার থার্ড পার্টি কন্ট্রাক্ট চিপ মেকিং কোম্পানিগুলো ব্যবহার করে শাওমির জন্য চিপ তৈরি করতে পারবে না। এখন মাইক্রোচিপ বা মাইক্রো প্রসেসর না পেলে শাওমি স্মার্টফোনও তৈরি করতে পারবে না। ফলে শাওমির স্মার্টফোন ব্যবসা অল্প দিনেই লাটে উঠবে।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমারা বিশ্বব্যাপী যে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা কায়েম করেছে, এর লক্ষ্যই হলো বিশ্বের নেতৃত্ব দেবে পশ্চিমা দেশ এবং তাদের তাঁবেদার কোম্পানিগুলো আর সেই নেতৃত্ব অন্য কোনো দেশ বা দেশের কোম্পানি দিক, সেটা তারা কখনোই মেনে নেবে বলে মনে হয় না। এ কারণে চীনকে যেকোনো মূল্যে চিপ তৈরির বলয়ের বাইরে রাখতে এশীয় মিত্র জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ ইউরোপীয় মিত্রদের নিয়ে প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। চীন যাতে সর্বশেষ প্রযুক্তির মাইক্রোচিপ (৩ ন্যানোমিটার বা তার চেয়ে কম দৈর্ঘ্যের) তৈরি করতে না পারে, সে জন্য বাণিজ্যযুদ্ধের নেপথ্যে ঠুনকো অভিযোগে পশ্চিমা দেশগুলো চীনের প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলোকে; বিশেষ করে চিপ তৈরি অথবা ডিজাইনের কোম্পানিগুলোকে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যাচ্ছে। আর অধিকাংশ বিশ্লেষকের মতে, এ নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে কখনোবা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অজুহাতে অথবা গণতন্ত্রের আড়ালে, নয়তোবা জাতীয় নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে। কিন্তু কেন নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্যবস্তু এ মাইক্রোচিপ? কী আছে এই মাইক্রোচিপে? নিতান্ত কৌতূহলবশত জানার স্পৃহা থেকে বিভিন্ন উৎস ঘেঁটে যে তথ্যগুলো পেয়েছি, সেগুলোই পাঠকের সামনে তুলে ধরছি।
পুরো ডিভাইসের তুলনায় মাইক্রোচিপ নিতান্তই ক্ষুদ্র একটি যন্ত্রাংশ। তবে এ ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশই ডিভাইসের প্রাণভোমরা, জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ জন্যই মনে হয় মাইক্রোচিপকে বলা হয় কম্পিউটারের মস্তিষ্ক বা ব্রেন। আধুনিক যুগের একটি স্মার্ট এসইউভি (SUV) গাড়ি তৈরি করতে প্রায় ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ডলারের মাইক্রোচিপ দরকার হয়। পাঠক, একবার ভাবুন, সব যন্ত্রাংশ আছে কিন্তু এ ক্ষুদ্র মাইক্রোচিপের অভাবে কোম্পানিগুলোকে পুরো গাড়ি তৈরি পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হয়! গাড়ির সঙ্গে তুলনা করলে যেটি আসলে নিতান্তই ক্ষুদ্র।
আগেই উল্লেখ করেছি, মাইক্রোচিপ হলো ডিভাইসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল যন্ত্রাংশ। মাইক্রোচিপ আসলে সিলিকনের তৈরি অতিক্ষুদ্র ট্রানজিস্টরের সমাহার। মাইক্রোচিপের প্রতি বর্গ মিলিমিটারে ট্রানজিস্টরের সংখ্যা যত বেশি এবং ক্ষুদ্র হবে, মাইক্রোচিপের কর্মদক্ষতা ততটাই বেড়ে যাবে। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ খরচ ঠিক ততটাই হ্রাস পাবে। যেমন ধারণা করা হচ্ছে, একটি ২ ন্যানোমিটারের চিপ একটি ৭ ন্যানোমিটারের চিপের চেয়ে ৪৫ শতাংশ বেশি দ্রুতগতির হবে এবং ৭৫ শতাংশ বিদ্যুৎ খরচ কম হবে। পাঠক জেনে অবাক হবেন, প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট দ্য ভার্জের তথ্যমতে, একটি টিএসএমসির তৈরি ৫ ন্যানোমিটার চিপের প্রতি বর্গ মিলিমিটারে প্রায় ১৭৩ মিলিয়ন ট্রানজিস্টর থাকে। ধারণা করা হচ্ছে ভবিষ্যতে বাজারে আসা একটি ২ ন্যানোমিটার চিপের প্রতি বর্গ মিলিমিটারে প্রায় ৩৩৩ মিলিয়ন ট্রানজিস্টর থাকবে। সে ক্ষেত্রে পুরো চিপে ট্রানজিস্টরের সংখ্যা দাঁড়াবে ৪৫-৬০ বিলিয়ন।
এত জটিল যে যন্ত্র, সেটি তৈরি করতে আরও অধিক জটিলতর যন্ত্রের প্রয়োজন হয়। যেমন একটি ৫ ন্যানোমিটার অথবা ৭ ন্যানোমিটার চিপ তৈরির জন্য প্রয়োজন হয় এক্সট্রিম আলট্রাভায়োলেট লিথোগ্রাফি মেশিন (EUV lithography machine)। এ ধরনের মেশিন তৈরিতে বিশ্বব্যাপী একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক কোম্পানি এএসএমএল (ASML- Advance Semiconductor Materials Lithography)। এ ধরনের মেশিন তৈরিতে সাংহাইভিত্তিক এসএমইই (SMEE—Shanghai Micro Electronics Equipment) এবং জাপানভিত্তিক ‘ক্যানন’ ও ‘নিকন’ কোম্পানির নাম শোনা গেলেও সেগুলো আসলে ২৮ ন্যানোমিটার বা তদূর্ধ্ব দৈর্ঘ্যের চিপ তৈরির জন্য উপযোগী। লিথোগ্রাফি মেশিন তৈরিতে পুরোধা এ এএসএমএল আবার যন্ত্রাংশের জন্য বিভিন্ন কোম্পানির ওপর নির্ভরশীল। যেমন এ লিথোগ্রাফি মেশিনে যে লেন্স ব্যবহার করা হয়, সেটি তৈরি করে জার্মানভিত্তিক জিস (ZEISS)। এ ছাড়া এমকেএস ইনস্ট্রুমেন্টস ইনক. (MKS Instruments Inc.) এবং ব্রুকস অটোমেশন ইনক.-ও (Brooks Automation Inc.) সম্মিলিতভাবে প্রায় ২৫ শতাংশ যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে। চিপ তৈরিতে অন্যান্য যে যন্ত্রপাতির দরকার হয়, তার অনেকগুলো তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘অ্যাপ্লাইড ম্যাটেরিয়ালস’ ও ‘ল্যাম রিসার্চ’। এ ছাড়া জাপান ও কোরিয়াভিত্তিক কিছু কোম্পানির নামও শোনা যায়। তা ছাড়া হার্ডওয়্যারের পাশাপাশি চিপের ডিজাইনের জন্য উচ্চমানের সফটওয়্যারের প্রয়োজন হয়। যেমন ডিজাইনের জন্য এআরএমের (ARM) আর্কিটেকচার বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়। যেটি আসলে যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি কোম্পানি, যার মালিকানায় রয়েছে জাপানভিত্তিক সফট ব্যাংক গ্রুপ। জিপিইউ, চিপটির গতি কেমন হবে, সেটি কত রেজল্যুশন সাপোর্ট করবে, রিফ্রেশ রেট কত হবে, কত মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা সাপোর্ট করবে ইত্যাদি হাজারো বিষয় এ ডিজাইনের সঙ্গে যুক্ত। তাই কোনো একটি নির্দিষ্ট দেশের পক্ষে চিপ তৈরির সব যন্ত্রপাতি জোগাড় বা তৈরি করা প্রায় অসম্ভবই বলা চলে।
বিশ্লেষকদের মতে, চীনের চিপ তৈরির ফাউন্ড্রিগুলো একালের তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়ার ফাউন্ড্রিগুলোর তুলনায় কমপক্ষে এক যুগ পিছিয়ে আছে। যেমন চীনের সবচেয়ে অগ্রগামী চিপ তৈরির প্রতিষ্ঠান এসএমআইসি (SMIC—Semiconductor Manufacturing International Corporation) বর্তমানে ১২ ন্যানোমিটারের চিপ তৈরি করতে পারে। যেখানে তাইওয়ানভিত্তিক টিএসএমসি (TSMC—Taiwan Semiconductor Manufacturing Company) এবং স্যামসাং ৫ ন্যানোমিটার দৈর্ঘ্যের চিপ অবমুক্ত করেছে।
তবে বছর দুই আগে এসএমআইসি ঘোষণা দেয়, টিএসএমসি ও স্যামসাংয়ের সঙ্গে তারাও ৭ ন্যানোমিটারের চিপ বাজারে আনবে। ঘোষণা অনুযায়ী তারা এএসএমএলকে উচ্চ প্রযুক্তির ইইউভি লিথোগ্রাফি মেশিন অর্ডার করে। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্র নেদারল্যান্ডসকে চাপ দেয়, তারা যেন এসএমআইসিকে উচ্চ প্রযুক্তির লিথোগ্রাফি মেশিন না দেয়; দিলে তাদেরও নিষেধাজ্ঞার ভয় দেখায়। চাপে পড়ে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক কোম্পানিটি চীনা কোম্পানিকে উচ্চপ্রযুক্তির লিথোগ্রাফি মেশিন দিতে সময়ক্ষেপণ করে। যদিও কোম্পানিটির বার্ষিক আয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ আসে চীন থেকে। এনিয়ে চীন সরকারের সঙ্গে নেদারল্যান্ডস সরকারের কূটনৈতিক টানাপোড়েন চলে বেশ কিছুদিন। হংকংভিত্তিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানায়, এএসএমএল চীনভিত্তিক এসএমআইসিকে এমন কিছু লিথোগ্রাফি মেশিন দিতে রাজি হয়েছে, যেগুলো দিয়ে কেবল ২৮ ন্যানোমিটার বা তদূর্ধ্ব দৈর্ঘ্যের চিপ তৈরি করা যাবে। উচ্চ প্রযুক্তির ইইউভি লিথোগ্রাফি মেশিন না পেয়ে চীনভিত্তিক কোম্পানিটি ঘোষণা দেয় যে তারা বিশেষ (n+2) প্রক্রিয়ায় ৭ ন্যানোমিটারের চিপ তৈরি করবে। হংকংভিত্তিক আরেক পত্রিকা এশিয়া টাইমস জানায়, বিশেষভাবে তৈরি এ ৭ ন্যানোমিটারের চিপ টিএসএমসির তৈরি ৭ ন্যানোমিটার চিপের চেয়ে কিছুটা কম গতিসম্পন্ন হবে। গোল্ডম্যান স্যাকসের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি জানায়, ৭ ন্যানোমিটারের চিপ তৈরি করতে চীনের কোম্পানিগুলোর ২০২৩ সাল পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। তবে এ বছরের শেষ কোয়ার্টারে এসএমআইসি কিছুটা অবিশ্বাস্যভাবেই ৭ ন্যানোমিটারের চিপ অবমুক্ত করেছে। সেই চিপ আবার পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা জর্জরিত চীনের আরেক কোম্পানি হুয়াওয়ের ফ্লাগশিপ স্মার্টফোন মেট ৬০ সিরিজে ব্যবহৃত হয়েছে। যেটিকে ‘টেক ইনসাইডার’–এর বিশ্লেষক ড্যান হাচিসন যুক্তরাষ্ট্রের গালে চপেটাঘাত হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
আবার বেশ কয়েক বছর আগে চীনভিত্তিক একটি কোম্পানি (ক্যানিয়ন ব্রিজ ক্যাপিটাল) যুক্তরাষ্ট্রের একটি চিপ কোম্পানিকে (লেটিস সেমিকন্ডাক্টর) অধিগ্রহণ করতে চাইলে ট্রাম্প প্রশাসন তা আটকে দেয়। যুক্তরাষ্ট্র যখন চীনের চিপ তৈরি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যাচ্ছে, তখন এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র তাইওয়ানভিত্তিক টিএসএমসি ঘোষণা দেয়, তারা যুক্তরাষ্ট্রে ১২ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে উচ্চ প্রযুক্তির চিপ তৈরি কারখানা করবে। এর কয়েক দিন পরে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক এশীয় মিত্র দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক স্যামসাংও একই ঘোষণা দেয়। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ঘোষণা দেয় যে তারা সম্মিলিতভাবে উচ্চ প্রযুক্তির চিপ উৎপাদনে ১০ হাজার কোটি ডলার ব্যয় করবে। এর কিছুদিন পর প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট গিজমোচায়না জানায়, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানসহ এশীয় মিত্রদের নিয়ে সেমিকন্ডাক্টর শিল্প জোট গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্লেষকদের মতে, এর উদ্দেশ্য হলো চীনের উত্থান ঠেকিয়ে দেওয়া। অর্থাৎ চীনকে যেকোনো মূল্যে উচ্চ প্রযুক্তির চিপ তৈরি থেকে বিরত রাখার জন্য মিত্রদের নিয়ে মরিয়া যুক্তরাষ্ট্র।
জাপানভিত্তিক নিক্কেই এশিয়ার তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৩৬০ চীনা কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। কালো তালিকাভুক্ত করা কোম্পানির মধ্যে বেশ কিছু কোম্পানি রয়েছে, যারা ব্যবসায়িক দিক দিয়ে বিশ্বে সেরা। যেমন সিসিটিভি ক্যামেরা তৈরিতে বিশ্বে প্রথম হিকভিশন, আবার ড্রোন তৈরিতে বিশ্বে প্রথম ডিজেআই যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে নেটওয়ার্কিং যন্ত্রপাতি ও স্মার্টফোন তৈরিতে বিশ্বে প্রথম (নিষেধাজ্ঞার আগে) হুয়াওয়ে। তালিকায় প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের প্রাধান্য থাকলেও মহাকাশ গবেষণা, বিমানের ইঞ্জিন তৈরি সংস্থা থেকে শুরু করে ইউনিভার্সিটি, চিকিৎসা গবেষণাপ্রতিষ্ঠান কোনোটাই বাদ যায়নি। তবে লক্ষণীয় বিষয় হলো, প্রায় প্রতিটি কোম্পানির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার নেপথ্যে কারণ হলো মানবাধিকার লঙ্ঘন, জাতীয় নিরাপত্তা অথবা উইঘুর ইস্যু। অনেক এশীয় বিশ্লেষকের মতে, অন্য দেশের বৈশ্বিকভাবে নেতৃত্ব দেওয়া কোম্পানিগুলোর টুঁটি চেপে ধরতে নিষেধাজ্ঞাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে পশ্চিমা দেশগুলো।
যুক্তরাষ্ট্র যতই গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ধুয়া তুলে চীন বা অন্যান্য দেশের কোম্পানিগুলোকে কালো তালিকাভুক্ত করুক না কেন, নেপথ্যের কাহিনি হলো যেকোনো মূল্যে নিজ দেশের কোম্পানিগুলোর স্বার্থ রক্ষা, মতান্তরে কঠিন প্রতিযোগিতার হাত থেকে রক্ষা করা; তা কেউ বলে না দিলেও সহজেই বোঝা যায়। কেননা, যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা হরহামেশাই প্রকাশ্যে বলে থাকেন; অ্যালফাবেট (গুগলের মূল কোম্পানি), মেটা (ফেসবুকের মূল কোম্পানি), মাইক্রোসফট, এনভিডিয়া, অ্যাপলের মতো কোম্পানিগুলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করে। সুতরাং কোনো কোম্পানি এ কোম্পানিগুলোর ব্যবসাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে অথবা প্রতিযোগিতার মুখে ফেলে, তা যুক্তরাষ্ট্র কখনোই মেনে নেবে না।
তবে এভাবে একের পর এক দেশ, ব্যক্তি অথবা কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বুমেরাং হতে পারে। কেননা, এভাবে লাগাতার নিষেধাজ্ঞা চাপানো হলে সংশ্লিষ্ট দেশ ও জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হতে থাকবে; আর ‘মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ভালো হয় না’, কথাটি বলেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক এক রাষ্ট্রদূত।
*লেখক: মজিদ সম্রাট