বাজি
ঝুম বৃষ্টি পড়ছে। বিকেলের সোনালি আকাশ কালো করে বৃষ্টির ধারা ভিজিয়ে দিচ্ছে প্রান্তর। এমন বাদলদিনে বন্ধুদের ফুটবল ম্যাচ চলছে। ম্যাচের উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিতে বাজি ধরা হলো। যে গোল করতে পারবে, তাকে ৫০ টাকা দেওয়া হবে, আর জয়ী দলের আলাদাভাবে প্রাইজ তো আছেই।
দলের সুবিধাবাদী ছেলে দুলাল বলল, ‘ঠিক আছে, যে গোল করতে পারবে, তাকে আমি একাই ৫০ টাকা দেব, আর না পারলে তোরা সবাই মিলে দিবি।’
প্রস্তাবটা সবার মনে ধরল, তাই সবাই রাজি হয়ে গেল। শুরু হলো ম্যাচ। আবিদ কিক করল, বল বাম্পারে বাড়ি খেয়ে অন্যদিকে চলে গেল। ঠিক তখনই চিৎকার করে উঠল দুলাল।
হবে না, হবে না।
কী হবে না?
৫০ টাকা বাজি হবে না। তুই তো গোল দিয়ে দিবি। বাজিটাজি বাদ।
দোস্ত, বাজি ধরে ফেলেছিস, এখন বাদ দিলে তো হবে না।
ঠিক আছে, বাজি থাকবে। তবে পা দিয়ে নয়, মাথা দিয়ে গোল করতে হবে।
না না, এটা তো সম্ভব নয়, গোলপোস্ট ছোট।
কোনো কথা হবে না, মাথা দিয়ে দিলেই বাজি থাকবে।
উপায় না দেখে দলের সবাই রাজি হলো। দুলাল জানত, মাথা দিয়ে গোল দেওয়া যাবে না, যার ফলে ও বাজি জিতে যাবে। আবার শুরু হলো ম্যাচ। দুলাল ম্যাচ জয়ের কল্পনায় বিভোর। রাফি কিক করল, বল মাঠের গর্তে ধাক্কা খেয়ে খানিকটা ওপরে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আবিদ নিচু হয়ে হেড করল আর গোল...
বর্ষার কাদাভরা মাঠে আবিদ হাত-পা ছুড়তে ছুড়তে ইয়াহু ইয়াহু করে উঠল। দলের সবাই ওকে কাঁধে নিয়ে নাচতে লাগল। উল্লাস শেষে আবিদ সার্চ ইঞ্জিনের মতো দুলালকে খুঁজতে লাগল, কিন্তু বল নিয়ে দুলাল গায়েব।
তারপর ১০ দিন দুলালের কোনো দেখা পাওয়া যায়নি। অবশেষে জুমার নামাজের সময় মসজিদে দুলালের দেখা পাওয়া গেল। দলের সবার সঙ্গে চোখাচোখি হতেই দুলাল সামনের কাতারে চলে গেল, তারপর যেতে যেতে একেবারে ইমামের কাতারের পেছনে।
নামাজ শেষে সবাই একে একে বের হয়ে এল, কিন্তু দুলাল আসছে না। মসজিদের তালিমের পর দুলাল বের হয়েই ফাঁকা পকেট দেখিয়ে বলল,
এই দেখ, আমার কাছে কোনো টাকা নেই।
আমরা কি তোর কাছে টাকা চাইছি? তুই এত দিন কই ছিলি, দোস্ত? রাশেদ বলল।
দুলাল তার শরীর খারাপ, পেট খারাপের গল্প শোনাতে লাগল। আর আবিদ গোয়েন্দা নজরে ওর আপাদমস্তক দেখতে লাগল।
দোস্ত, সত্যি আমার কাছে কোনো টাকা নেই।
আবিদ ধমক দিয়ে বলে, ওই কাঁদবি না, চুপ। ওর পেছনের পকেটে দেখ তো।
পেছনের পকেট থেকে একটা মোড়ানো কাগজ পায় রাশেদ।
রাশেদ বলে, দোস্ত, দেখে তো মনে হচ্ছে চিঠি।
আবিদ বলল, খোল।
ওই খুলবি না, খুললে কসম, তোর সব চুল পড়ে যাবে। দুলাল বলে ওঠে।
চিঠিটা খুলতে গিয়ে থেমে যায় রাশেদ, কারণ সে ওর চুলকে খুব ভালোবাসে।
রাশেদ বলে, দোস্ত, চুল কেন? অন্য কিছুর কসম দে।
দুলাল বলল, না না, চুলেরই কসম।
আবিদ বলে ওঠে, ওই, এটা আমার কাছে দে তো।
দোস্ত তোরও কসম।
কিসের কসম?
আমতা-আমতা করে আবিদের দুর্বলতা খুঁজতে থাকে দুলাল। আবিদ কাগজটি খুললে বের হয়ে আসে ১০০ টাকার চকচকে নোট।
পেয়েছি পেয়েছি বলে এক দৌড়ে সবাই চলল হোটেলের দিকে। দুলাল কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নতুন টাকাটা মামা দিয়েছিলেন সালামি হিসেবে।
*লেখক: কবি, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ
নাগরিক সংবাদে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]