তবু পত্রিকা পড়েন আলমগীর হোসেন
প্রতি মাসে পত্রিকা বাবদ ব্যয় হয় ৩৬০ টাকা। মাস শেষে একই পত্রিকা বিক্রি করে পান মাত্র ৬০ টাকা। মাঝখানে ৩০০ টাকা হাওয়া। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে গ্রামের ছোটখাটো একজন কফি বিক্রেতার অর্থনৈতিক সমীকরণে ৩০০ টাকা নাই হয়ে যাওয়াটা বড় ঘটনা। তবু পত্রিকা পড়েন তিনি।
নাম আলমগীর হোসেন। বয়স ৬০। কফিশপের দোকান করেন চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার সারিকাইত ইউনিয়নের শিবেরহাটে। সামান্য আয়, তবু কেন পত্রিকা কেনেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এক দিন পত্রিকা না পড়লে অস্বস্তি লাগে। একবার চোখে অপারেশনের কারণে আট দিন পত্রিকা পড়তে পারিনি। পত্রিকা ছুঁয়ে মেটাতে হয়েছিল পড়ার তৃষ্ণা।’
পত্রিকা থেকে দেশ–বিদেশের খবর জানেন আলমগীর হোসেন। সন্ধ্যায় গ্রামের লোকজন তাঁর দোকানে আসেন বিভিন্ন মাধ্যমে শোনা দেশ–বিদেশের খবরের সত্যতা যাচাই করতে। পত্রিকা পড়ে কী লাভ, এমন প্রশ্নের উত্তরে একটি ছোট ঘটনার কথা উল্লেখ করেন আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, ‘অনেক দিন আগের ঘটনা। মসজিদের ঘড়ি দেখে ভুল সময়ে ফজরের নামাজ পড়ছিলেন সবাই। পত্রিকায় প্রতিদিন নামাজের সময় দেওয়া থাকে। সেটা দেখে আমি নামাজের সঠিক সময়মতো ঘড়ি ঠিক করে দিতে পেরেছিলাম।’
আলমগীর হোসেনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পত্রিকার সব পাতা পড়লেও তিনি পছন্দ করেন সম্পাদকীয় পাতার কলাম। সেখানে বিভিন্ন খবরের বিশ্লেষণ পড়ে দেশ–বিদেশের ভেতরের খবর পান তিনি। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘১৯৮৮ সাল থেকে পত্রিকা কিনে পড়ি। আগে পড়তাম দেশের প্রথম সারির একটি দৈনিক পত্রিকা। পত্রিকার একটি খবরকে কেন্দ্র করে ওই পত্রিকা পড়া ছেড়ে দিই। কারণ, আমার সামনে ঘটা ঘটনা পরদিন পত্রিকায় দেখি অন্য রকম। তাই এখন পড়ি অন্য পত্রিকা।’
ফেসবুক পেজ, ই-পেপারের রাজত্বের যুগে অনেকেই ছাপা পত্রিকা পড়া বন্ধ করে দিলেও ছাপা পত্রিকার আবেদন যে এখনো ফুরায়নি, তার প্রমাণ আলমগীর হোসেন।
লেখক: নজরুল নাঈম, সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম, শিক্ষার্থী, বিজয় সরণি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ