কাজী নজরুল ফজিলাতুন্নেছার গল্প
ক’ফোঁটা চোখের জলে এক ফোঁটা রক্ত হয়, তোমার বিজ্ঞান সেটা বলতে পারে? বিরহের যন্ত্রণায় কাতর কবি কাজী নজরুল প্রশ্নটা করেছিলেন প্রিয় বন্ধু কাজী মোতাহার হোসেনকে। মোতাহার হোসেন সে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন কি না, সেটা জানা যায়নি। কিন্তু নজরুল যে ফজিলাতুন্নেছার জন্য অনেক অশ্রু বিসর্জন দিয়েছেন, মোতাহার হোসেনের কাছে লেখা চিঠিগুলোতে তার অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায়।
বয়সে তরুণ হলেও সে সময় দুই বাংলার সাহিত্যজগতে বেশ আলোড়ন তুলেছিলেন আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তার ফলশ্রুতিতে ঢাকা মুসলিম সাহিত্য সমাজের অধিবেশন (১৯২৮) উদ্বোধন করতে ঢাকায় এসেছেন তরুণ কবি নজরুল। লেখালেখির পাশাপাশি কবি মানুষের হস্তরেখা দেখে ভাগ্য গণনা করতে পারেন, এমন একটা কথা সে সময় ঢাকার সাহিত্যপাড়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এতেই গন্ডগোলের শুরু হয়। কবি আসলে সে রকম কিছু জানতেন, এমন তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু অনেকে হাত দেখানোর জন্য তাঁর কাছে আসতে থাকেন।
এদিকে তুখোড় মেধাবী ফজিলাতুন্নেছা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম ছাত্রী এবং তাঁর পড়াশোনার খ্যাতি সে সময়ে দুই বাংলায় ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। তিনি মোতাহার হোসেনকে বড় ভাই বলে সম্বোধন করতেন এবং অত্যন্ত সম্মান করতেন। মোতাহার হোসেনও ফজিলাতুন্নেছাকে বোনের মতো স্নেহ করতেন। মোতাহার হোসেন যেহেতু ঢাকা সাহিত্য সমাজের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত, সে জন্য মিস ফজিলাতুন্নেছা তাঁকে অনুরোধ করেন, কবিকে তাঁদের বাসায় নিয়ে আসার জন্য।
ছোট বোনের অনুরোধ ফেলতে পারেননি মোতাহার হোসেন। ফজিলাতুন্নেছা ও তাঁর বোন আফিকুন্ননেসাকে নিয়ে ঢাকার দেওয়ান বাজারে হাসিনা মঞ্জিলে থাকতেন। একপর্যায়ে ফজিলাতুন্নেছা মোতাহার হোসেনকে অনুরোধ করেন, কবি যেন তাঁর ও তাঁর বোনের হাতের রেখা দেখে ভবিষ্যৎ গণনা করে দেন। চিরযৌবনা নজরুল ফজিলাতুন্নেছাকে দেখে এতটাই মুগ্ধ ও মোহিত হয়েছিলেন যে হাতের রেখা গণনা করতে গিয়ে মনের রেখা গণনা করে ফেলেন। কবি পরদিন একাই সেই বাসায় আসেন এবং আগপাছ না ভেবে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে বসেন। ঘটনার আকস্মিকতায় হকচকিয়ে যান ফজিলাতুন্নেছা এবং সঙ্গে সঙ্গে কবিকে কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেন। এভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়ে লজ্জায় অপমানে সে রাতেই নজরুল ঢাকা ত্যাগ করেন।
কাজী নজরুল ইসলাম অতিথি হয়ে ঢাকায় এসেছিলেন কিন্তু হঠাৎ এভাবে কিছু না বলে চলে যাওয়ায় আয়োজকেরা হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। বুদ্ধদেব বসু, আবুল হোসেন, কাজী আবদুল ওদুদসহ তৎকালীন ঢাকার লেখকেরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান। এসবের প্রমাণ পাওয়া যায় কবির লিখিত স্বীকারোক্তিতে। তিনি লিখেছেন, বুদ্ধদেব খুব রেগে চিঠি দিয়েছে, কেন অমন করে না বলে চলে এলাম। কেন যে এলাম, তা কি আমি জানি (নজরুল রচনাবলী, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪০৭)। আসলেই ফজিলাতুন্নেছার প্রতি অসময়ে সৃষ্টি এত প্রেম, এত মোহের কারণ কবি নিজেও জানতেন না!
ঢাকা ত্যাগ করলেও ফজিলাতুন্নেছার প্রতি কবির প্রেমের যে আগুন প্রজ্জ্বলিত হয়, সেটা দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে। প্রেমের আবেগে দেউলিয়া কবি একের পর এক মেলোড্রামাটিক চিঠি লিখতে থাকেন। বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত নজরুল রচনাবলীর চতুর্থ খণ্ডে এ বিষয়ে মোট আটখানা চিঠির সন্ধান পাওয়া যায়। সে চিঠি কখনো ফজিলাতুন্নেছাকে, আবার কখনো বন্ধুবর মোতাহার হোসেনকে পাঠিয়েছেন। মূলত অধিকাংশ চিঠি ফজিলাতুন্নেছাকে উদ্দেশ করে মোতাহার হোসেনকে লিখেছেন। তার প্রমাণ মেলে চিঠি লেখার ধরন দেখে। এ চিঠি শুধু তোমার এবং আরেকজনের। একে সিক্রেট মনে করো। আর একজনকে দিও এ চিঠিটা দুদিনের জন্য (নজরুল রচনাবলী, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪০৫)।
সেসব চিঠিতে প্রকাশ পেয়েছে নজরুলের ভয়, আবেগ, উচ্ছ্বাস আর ভালোবাসার গভীর ও নিবিড় আকাঙ্ক্ষা। ফজিলাতুন্নেছা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতের এক অধ্যাপকের (নলিনী মোহন বোস) সঙ্গে পড়াশোনা নিয়ে আলোচনা করতেন। তাতে ঈর্ষান্বিত হয়ে, বিস্ময় নিয়ে নজরুল লিখেছেন, সুন্দরের উপাসিকা নারী—কোনো অঙ্কশাস্ত্রীর কবলে পড়েছে, এ আমি সইতে পারি নে। নারী হবে সুন্দরের অঙ্কলক্ষী, সে অঙ্কশাস্ত্রের ভাঁড়ার রক্ষী হবে কেন? (নজরুল রচনাবলী, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪০৪)
কথায় আছে প্রেমের সংস্পর্শে মানুষ কবি হয়ে ওঠে। তাহলে প্রেমের স্পর্শে কবির কী হয়? সম্ভবত কবি গণিত শিখতে চান! মোতাহার হোসেনের কাছে কবি নজরুলের লেখা চিঠি পড়লে অন্তত সে রকমই মনে হয়। তিনি লিখেছেন, একটা সত্য কথা বলব? হেসো না কিন্তু। আমার এত দিনে ভারী ইচ্ছে করছে অঙ্ক শিখতে। হয়তো চেষ্টা করলে বুঝতে পারি এখনো জিনিসটে। আমি এক চেনা অঙ্কের অধ্যাপকের কাছে পরশু অনেকক্ষণ আলাপ–আলোচনা করলাম অঙ্ক নিয়ে। এমএ ক্লাসে কী অঙ্ক কষতে হয়। সব শুনলাম সুবোধ বালকের মতো রীতিমতো মন দিয়ে। কেন যেন এখন আর অত কঠিন বোধ হচ্ছে না জিনিসটে। আমি যদি বিএ টা পাস করে রাখতাম, তাহলে দেখিয়ে দিতাম যে, এমএ-তে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট কবিও হতে পারে ইচ্ছে করলে। যদি ঢাকায় থাকতাম তাহলে তোমার কাছে আবার একবার যাদব চক্রবর্তীর অ্যালজেবরা (Algebra) নিয়ে বসে যেতাম। সত্যি ভাই মতিহার, আমায় অঙ্ক শেখাবে? এমন অঙ্ক শিখিয়ে দিতে পারে না কেউ, যাতে করে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট এমএ কে হারিয়ে দিতে পারি। এখন কেবলই মনে হচ্ছে, কি ছাই করলাম কবিতা লিখে। তার চেয়ে অঙ্কের অধ্যাপক হলে ঢের বেশি লাভবান হতে পারতাম (নজরুল রচনাবলী, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪১৪)। উল্লেখ্য যে বেগম ফজিলাতুন্নেছা এমএ–তে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েছিলেন।
মোতাহার হোসেনের কাছে চিঠি লিখলেও সেগুলোর আসল প্রাপক ফজিলাতুন্নেছা ছিলেন। প্রেমে উন্মাদ কবি নিজেও বুঝতে পেরেছিলেন এসব লেখা উদ্দেশ্যহীন এবং অন্যকে বিব্রত করা ছাড়া কিছু নয়। তাই তো লিখেছেন, সকালে তোমার বোনকে শেষ চিঠি লিখলাম। শেষ চিঠি মানে তাঁর ইচ্ছের বিরুদ্ধে চিঠি দিয়ে আর অপমানিত করবো না তাঁকে এবং আমাকেও (নজরুল রচনাবলী, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪০৬)।
একের পর এক অসংলগ্ন চিঠি পেয়ে আসল প্রাপক ফজিলাতুন্নেছা ত্যক্ত–বিরক্ত হয়ে একদা একটা চিঠির উত্তর দিয়েছিলেন। তাতে সম্ভবত বেশ কড়া ভাষা ছিল এবং কবি তাতে ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলেন। তার প্রত্যুত্তরে নজরুল লিখেছেন, বড্ড শক পেয়েছি কাল ওর চিঠি পড়ে। বাজপাখির ভয়ে বেচারি কোকিল রাজকুমারীর ফুল বাগানে লুকোতে গিয়ে বুকে সহসা ব্যাধের তীর বিঁধে যেমন ঘাড়মুড় দুমড়ে পড়ে, তেমনি। তবে ঐ এক চিঠি পেয়েই যতদূর বুঝেছি—আমায় তিনি দ্বিতীয় চিঠি দিয়ে দয়া করবেন না (নজরুল রচনাবলী, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪০৬)।
অসম প্রণয়ের আবেগে ব্যাকুল নজরুল রাখঢাক ছাড়াই বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করেছেন, আচ্ছা মোতাহার, তুমি কোনদিন কাউকে ভালোবেসেছিলে? তখন তোমার কী মনে হত? খুব কি যন্ত্রণা হত বুকে? সে ছাড়া সব কিছুই কি বিস্বাদ ঠেকত তখন? (নজরুল রচনাবলী, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪০৭)
প্রেমের ক্ষেত্রে একটা কথা সর্বদা সত্য, মানুষ যেখানে আঘাত পাবে, সেখানে বারবার ফিরে আসবে। সম্ভবত আঘাত পাওয়ার আনন্দের জন্যই ফিরে আসে। এ আঘাতের মধ্যে অপ্রাপ্তির এক প্রত্যাশা মানব হৃদয়কে পুলকিত করে। সে জন্য ক্ষতবিক্ষত হৃদয়ে কবি তাঁর বন্ধুকে লিখেছেন, আচ্ছা বন্ধু, ক’ফোঁটা রক্ত দিয়ে এক ফোঁটা চোখের জল হয় তোমার বিজ্ঞানে বলতে পারে? এখন কেবলি জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে—যার উত্তর নেই, মীমাংসা নেই সেসব জিজ্ঞেসের (নজরুল রচনাবলী, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪১১) একখানা চিঠির প্রত্যাশায় চির–বিদ্রোহী কবির অন্তরাত্মা শুকিয়ে ঊষর মরুভূমি হয়ে যায়। তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে এভাবে, অতিরিক্ত শৈত্যে জল জমে পাথর হয়, ফুল যায় ঝরে, পাতা যায় মরে, হৃদয় যায় শুকিয়ে। (নজরুল রচনাবলী, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪১০)
নজরুল কবিতা, গানে যতটা বিদ্রোহী বা বিপ্লবী ছিলেন, তার চেয়ে ঢের বেশি প্রেমিক ছিলেন।
খুব সহজেই সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়ার একটা সহজাত প্রবণতা ছিল নজরুলের। তাই তো নার্গিস, প্রতিভা বসু ওরফে নোটন মৈত্র কিংবা জাহানারা চৌধুরীর সঙ্গে সহজেই সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন আবার সহজেই বেরিয়ে এসেছেন সব বাধা ছিন্ন করে। এদিক দিয়ে ফজিলাতুন্নেছা ছিল অন্য ধাতুতে গড়া এবং উপেক্ষা করার অসামান্য শক্তি ছিল এই তরুণীর। নজরুল যতবারই প্রেমের শতদল নিয়ে তাঁর পদতলে অঞ্জলি দিতে এসেছেন, সে ততবারই আঘাত-অপমান, ব্যঙ্গবিদ্রূপ অবহেলায় জর্জরিত করেছেন কবির হৃদয়।
মোতাহার হোসেনের কাছে কবি বড় বড় চিঠি লিখতেন। প্রতিটি চিঠিতে ইনিয়ে–বিনিয়ে অনেক কিছু লেখা থাকলেও শেষ হতো ফজিলাতুন্নেছায় এসে। একবার পাঁচ পৃষ্ঠার চিঠির শেষে লিখলেন, তাঁর খবর একটু দিস ভাই। এ কয়দিন ত শুয়েই থাকবো, ওটুকু পেলেও বেঁচে যাব (নজরুল রচনাবলী, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪১৭)। শত অপমানের পরেও প্রেমিকার একটু সংবাদই আফিমের কাজ করে!
সেবার বন্ধু মোতাহার হোসেনের চিঠি আর আসছে না। কবি সদ্য প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া কিশোরের মতো ছটফট করছিলেন। তাই সরাসরি মিস ফজিলাতুন্নেছাকে লিখলেন। চিঠিতে আশীর্বাদ করে কবি লিখেছেন, আপনাকে দিয়ে বাংলার অন্তত মুসলিম নারী সমাজের বহু কল্যাণ সাধন হইবে ইহা আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। তাই আপনার অন্তত কুশল সংবাদটুকু মাঝে মাঝে জানিতে বড্ড ইচ্ছে করে। যদি দয়া করিয়া দুটি কথায় শুধু কেমন আছেন লিখিয়া জানান, তাহা হলে আমি আপনার নিকট চির ঋণী থাকব। আমার এটা বিনা অধিকারে দাবি (নজরুল রচনাবলী, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪১৭)।
একই চিঠিতে আরও জানা যায়, মিস ফজিলাতুন্নেছা বার্ষিক সওগাত পত্রিকায় প্রকাশের জন্য ‘শুধু দুদিনের দেখা’ শীর্ষক একটা গল্প দিয়েছিলেন। তখন দুই বাংলাতেই নজরুল ফজিলাতুন্নেছার প্রেমের ঘটনা ছিল খানিকটা রসাল গল্প। সে জন্য হয়তো সম্পাদক নাসিরউদ্দিন সেটা সম্পাদনা করার জন্য নজরুলের কাছে পাঠিয়েছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে কবি লিখেছেন, আমি লেখাটি পড়েছি। যদি ধৃষ্টতা মার্জনা করেন তাহলে আমি উহার এক আধটু অদল বদল করিয়া ঠিক গল্প করে তুলবার চেষ্টা করি (নজরুল রচনাবলী, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪১৮)। পরে সেটা ‘দুদিনের দেখায়’ নামে সওগাতে প্রকাশিত হয়।
নজরুলের নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে আসে এক বিদ্রোহী তরুণের ছবি। তাঁর বিদ্রোহী হৃদয় ছিল কমল ও অভিমানী। না পাওয়ার আক্ষেপে খানিকটা অভিমান নিয়ে লিখেছেন, ছেলেবেলা থেকে পথে পথে মানুষ আমি। যে স্নেহে, যে প্রেমে বুক ভরে উঠে কানায় কানায়, তা কখনো কোথাও পাইনি। বুকের রক্ত চোখের জল হয়ে দেখা দেওয়ার আগেই তাকে গলার কাছে প্রাণপণ বলে আটকিয়েছি। এক গুণ দুঃখ হলে দশ গুণ হেসে তার শোধ নিয়েছি। সমাজ, রাষ্ট্র, মানুষ—সকলের ওপর বিদ্রোহ করেই ত জীবন কাটল! (নজরুল রচনাবলী, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪১১)
নজরুলের ওপর চিরসুন্দরের কবি জন কিটস ও শেলির প্রভাব ছিল অপরিসীম। তাই তো বলেছেন, আমার রক্তে রক্তে শেলিকে কিটসকে এত করে অনুভব করছি কেন (নজরুল রচনাবলী, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪০৯)? এমনকি রবীন্দ্রনাথ এ কথা স্বয়ং বলেছেন, কিটস ও শেলির সঙ্গে নজরুলের সম্পর্কের কথা। এর প্রমাণ পাওয়া যায় নজরুলের আরেক চিঠিতে, রবীন্দ্রনাথ আমায় প্রায়ই বলতেন, ‘দেখ উন্মাদ, তোর জীবনে শেলীর মত, কীটসের মত খুব বড় একটা ট্র্যাজেডি আছে, তুই প্রস্তুত হ’ (নজরুল রচনাবলী, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪১৭)। মূলত নজরুলের জীবন ছিল ট্র্যাজেডিতে ভরপুর। কিটস লিখেছেন প্রেমিকা ফ্যানি ব্রাউনকে আর নজরুল লিখেছেন মিস ফজিলাতুন্নেছাকে। কালের পরিক্রমায় এসব লেখাই হয়ে উঠেছে অমর সাহিত্যকর্ম।
অবশেষে বলা যায়, মিস ফজিলাতুন্নেছা নজরুলকে প্রত্যাখ্যান করে স্বমহিমায় দ্যুতি ছড়িয়েছেন, হয়েছেন ইতিহাসের চর্চিত বিষয়। আর প্রত্যাখ্যাত হয়ে বিরহী নজরুল আরও সুনিপুণ সৃষ্টিশীল হয়েছেন। কবির এই একতরফা অসমাপ্ত প্রেমের কল্যাণে কিছুটা হলেও বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়েছে।
*লেখক: রূপক, মিরপুর, ঢাকা
**নাগরিক সংবাদে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]