মশা মারতে কামান দাগা!
ছোট থেকেই একটি প্রবাদ শুনে আসছি যে মশা মারতে কামান দাগা! ছোট্ট একটি প্রবাদ কিন্তু অনেক তার গুরুত্ব। হরেক রকমের কয়েল, লিকুইড, স্প্রে ইত্যাদি ইত্যাদি থাকার পরও মশা নামক এই ছোট্ট প্রাণীকে কোনো কিছুতেই যেন হারানো যাচ্ছে না। তাই হয়তো গুণীজনেরা বলে থাকেন, ছোট্ট বলে কাউকে হেও করো না। আজ এই মশার কারণেই শত শত মানুষ প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছেন, মারা যাচ্ছেন অনেক মানুষ। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ অনেক ধরনের রোগ সৃষ্টিকারী এই মশা আজ যেন মানবজাতির বড় শত্রু।
সেদিন বাজারে গিয়েছি মশার স্প্রে কিনব। হঠাৎ দেখি হন্তদন্ত হয়ে একজন ভদ্রলোক দোকানের দিকে ছুটে এলেন, কাছে আসতেই চিনলাম, উনি তো আমাদের পাশের ভবনেই থাকেন, যার কিনা বিশাল ছাদবাগান। এই ছাদবাগানের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে আমার সঙ্গে এর আগেও বেশ কয়েকবার তর্কবিতর্ক হয়েছে। উনি এসেই পাঁচটি মশার স্প্রে চাচ্ছেন। আমি তো অবাক।
আমি: ভাই, কী সমস্যা। এতগুলো স্প্রে একেবারে কিনছেন?
ভদ্রলোক: আর বইলেন না ভাই, আমার বাসায় দুজনের ডেঙ্গু ধরা পড়ছে। তাই সারা বাড়ি আজ স্প্রে করব।
আমি: খুবই ভালো উদ্যোগ। তবে ছাদবাগানটা পরিষ্কার করেন আগে, ওখানে মশার লার্ভা থাকতে পারে, যেখান থেকে ওদের উৎপত্তি। কারণ, আমি দেখেছি, আপনার ছাদে অনেক জমা পানি।
ভদ্র লোক: দূর ভাই, আপনি সেই আবার আগের প্যাচাল শুরু করছেন। এসব মশা নিচের ড্রেন থেকে আসে, সিটি করপোরেশন ঠিকমতো কাজ করলে ডেঙ্গুবেঙ্গু থাকে নাকি দেশে। এই স্প্রে করলেই সব মশা সাফ হয়ে যাবে। আর আপনি ওই জমা পানি নিয়ে আছেন, আরে ভাই ওটা থেকে মশা এলে বাংলাদেশের অর্ধেক মানুষই আক্রান্ত হতেন। ছাদ কার বাসায় নাই বলেন। ভাগ্যে লেখা আছে ডেঙ্গু, কিছু করার নাই।
আমি: দেখেন যা ভালো মনে হয়!
আমরা সবাই একে অপরকে দোষ দিয়ে চলি বলেই তো তৃতীয় পক্ষ দাপিয়ে বেড়ায়, যেমনটা মশা এখন করছে। কিন্তু কে এই ভদ্রলোককে বোঝাবে! আমরা যদি কমপক্ষে নিজের ঘরটা মশামুক্ত রাখতে পারি, তাহলেই কিন্তু ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব অনেক কমে যাবে। সতর্ক থেকেও যদি আক্রান্ত হই, তখন না হয় ভাগ্যর দোষ দিয়ে নিজেকে সান্ত্বনা দেব, তার আগে নয়। সরকারি-বেসরকারিভাবে বিভিন্ন প্রচারণা করলেও আমরা কজন তা মেনে চলি! নিজেদের এরিয়া পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন না রেখে যদি শুধু কয়েল বা স্প্রে দিয়েই যদি মশা ধ্বংস হতো, তাহলে তো আর এত সচেতনতা প্রোগ্রাম দরকার ছিল না।
নাগরিক সংবাদ-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
বাংলাদেশে ডেঙ্গু নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে, এখনো চলছে এবং আরও বেগবান হবে। মাইক্রোবায়োলজি ডিপার্টমেন্ট নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এতে রয়েছে জীবাণুর উৎপত্তি, গতিপথ, মিউটেশন আর দায়ী জীবাণুর প্রোফাইল বিশ্লেষণ। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন এলামনাই যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাইক্রোবায়োলজি এলামনাই অ্যাসোসিয়েশন (ডিইউএমএএ) সচেতনতামূলক কর্মসূচিসহ বিভিন্ন গবেষণামূলক কাজে ব্যাপকহারে সময় দিয়ে যাচ্ছে। সেমিনার, আলোচনা, গবেষণা, ট্রেনিং চলছে, চলতেই থাকবে। অবশ্যই আমরা একদিন আলোর মুখ দেখব। কিন্তু নিজেরা সচেতন না হলে কোনো কিছুতেই কিছু কাজ হবে না। আমার বাসায় জমে থাকা পানি আমাকেই পরিষ্কার করতে হবে, এটা না বুঝলে গবেষণা পুরোটাই বৃথা যাবে। দেশের অগণিত গবেষকদের এই শ্রম আমাদের ভণ্ডুল করা কি ঠিক হবে!
ডেঙ্গু নিয়ে ভয় নয়, দরকার চরম সচেতনতা। একমাত্র নিজে সচেতন হলেই পাশের মানুষকে সচেতন করতে পারব। দোষারোপের কালচারে না গিয়ে সমাধানের পথ খুঁজি। কারণ, আমার পরিবার আক্রান্ত হলে আমাকেই দৌড়াতে হবে। এখন সিদ্ধান্ত আপনার!