ক্যারিয়ার যখন ব্যারিয়ার

ছবি: চাকরি-বাকরি

বাংলাদেশে বেশির ভাগ কর্মজীবী মানুষের একটাই আলোচনার বিষয় থাকে, সেটা হলো নিজের অবস্থানকে ছোট ভাবা আর পাশের মানুষটার অবস্থানকে অনেক উচ্চস্তরে নিয়ে যাওয়া। চায়ের আড্ডায় বসে আছি অনেক বন্ধু, সিনিয়র, জুনিয়র। এখন আলোচনার বিষয় হচ্ছে ‘কে কেমন আছে’–

ব্যবসায়ী বন্ধু: তোরাই ভালো আছিস, ব্যবসাতে অনেক রিস্ক। আর ভালো লাগে না। মন চায়, সব বাদ দিয়া চাকরি শুরু করি। তোরা কি সুন্দর ৮টা-৫টা অফিস করস, মাস শেষেই টাকা আসে। খুব মজা...

বিসিএস ক্যাডার বন্ধু: কি যে বলেন ভাই, সরকারি চাকরি করি, মন খুলে সব বলাও যায় না, লেখাও যায় না, ঘোরা যায় না, চারপাশে লোক লেগেই থাকে। আপনারা কত সুন্দর ঘুরেফিরে বেড়ান। ফেসবুকে পোস্ট দেন। আপনারই ভালো আছেন।

ব্যাংকার বন্ধু: ব্যাংকে শান্তি নাইরে বন্ধু। সকালে ঢুকি আর সন্ধ্যায় বের হই। সারা দিন গ্রাহকদের কত ঝামেলা মেটানো লাগে। লেনদেন সব আবার চেক দিয়ে বাসায় ফিরতে হয়। তোরাই ভালো আছিস। মন চায় বিদেশ যাইতে।

ফার্মাসিস্ট বন্ধু: আমরা অফিসে ঢুকি, কিন্তু বের হবো কখন অনেক সময় ঠিক থাকে না। অডিট এলেই দিন-রাত সব সমান। মানুষের জীবনরক্ষাকারী ওষুধ নিয়ে কাজ করি। করোনা, হরতাল, ঝড়–বৃষ্টি এসব মোকাবিলা করেই চাকরি করে যাচ্ছি। কি আর বলব! মন চায় বিদেশ যাইতে।

নেতা বন্ধু: রাজনীতিতে জড়াইয়া আরও ঝামেলা। আজ ক্ষমতা আছে তো কাল নেই। কি আর করা।

‘নাগরিক সংবাদ’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

গবেষক বন্ধু: তোরাই ভালো আছিস। গবেষণায় টাকা নেই, কেউ দামও দেয় না। সারা দিন ল্যাবে থাকি, লাইফ শেষ করে দিলাম।

প্রবাসী বন্ধু: তোরা অনেকেই বিদেশ যাইতে চাস বুঝলাম। আমি তো মনে মনে চাই দেশে থাকতে, মা–বাবা, আত্মীয়—সবাই মিলে একসঙ্গে থাকতে। বিদেশে সব ভালো, কিন্তু প্রাণের টান নেই যে।

সদ্য চাকরি হারানো বন্ধু: তোদের তা–ও চাকরি আছে, আমার তো কিছুই নেই। বাংলাদেশে থাকাই ভুল। ভাবছি এবার ব্যবসায় মনোযোগ দেব। না হলে বিদেশ।

শিক্ষক বন্ধু: আমার জীবন তো এমনি এমনি গেল। আগের মতো কোচিং নেই, শিক্ষকদের দাম নেই। এ লাইনে আসাই ভুল ছিল।

এসব শুনে হঠাৎ চা–দোকানদার হেসে বলে উঠল: বড় ভাইয়েরা, আমি কিন্তু ভালো আছি আপনাদের দোয়ায়। বেশি আশা নাই, তাই হতাশা নাই। তাই বলে কেউ আবার আমার লাইনে আইসেন না কিন্তু, হা হা হা হা হা হা।

তাহলে আমাদের ক্যারিয়ার কোথায়! বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পার করে সবাই চায় নিজেকে তার মতো করে জীবন সাজাতে। কেউ পারে আবার কেউ পারে না। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বেতন, নিরাপত্তা আর সুযোগ–সুবিধা অনেক সীমিত জেনেও আমরা হতাশায় ভুগে থাকি। চাকরির শুরুতেই যোগ্যতার পাশাপাশি রয়েছে পাবলিক-প্রাইভেট, মামা-কাকার দৌরাত্ম্য। এর দৌড়ে আবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনেক পিছিয়ে রয়েছে, এর কারণ অজানা। মানবসম্পদ বিভাগ অনেক যাচাই–বাছাই করে টপ ক্যান্ডিডেট চয়েস করে, কিছুদিন পরে অনেকেই আবার জব চেঞ্জ করে লাপাত্তা হয়ে যায়। মেধার কিছু শূন্যস্থান পূরণ হয়, আবার কিছু হয় না।

তাহলে উত্তরণের উপায় কী? বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই সঠিক কাউন্সিলিং, ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যাপক মুক্ত আলোচনা আর বাংলাদেশের জব নিয়ে সম্যক ধারণা না দিলে আত্মতুষ্টিহীনতায় ভুগতেই থাকবে সবাই। মেধা বিদেশ গেলে দেশের উন্নতি কে করবে! এখনই ভাবা দরকার।