আমার বিশ্বকাপ ফুটবল ভাবনা
ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে এত বেশি মাতামাতি আমার কাছে বিরক্ত লাগছে। প্রথমেই একটা বিষয় পরিষ্কার করে রাখি।
আমিও খেলা দেখি। ফুটবল খেলা আমিও ভালোবাসি। কিন্তু জান-প্রাণ-কলিজা দিয়ে কোনো দলকে সমর্থন করা, পকেটের টাকা খরচ করে পতাকা বানানোর মতো সমর্থক আমি নই। আমি খেলা দেখি আনন্দের জন্য। মজার জন্য।
যা হোক, যেটা বলছিলাম, বিশ্বকাপ ফুটবল নিঃসন্দেহে বিশ্বের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট। সবচেয়ে বেশি বাজেটের, সবচেয়ে বেশি দর্শকের দেখা খেলা। কিন্তু তাই বলে আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের কোনো দেশের, যারা এ পর্যন্ত কোনো বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি, তাদের জনগণের এত বেশি মাতামাতি একদম বিরক্তিকর।
আমার তো মনে হয়, এই যে বিশ্বকাপ উপলক্ষে এত এত পতাকা ওড়ানো, ব্যানার, জার্সি, তর্ক-বিতর্ক—বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করা দেশেও হয় না। আমাদের দেশের ফুটবল বা ক্রিকেট নিয়েও এত মাতামাতি হয় না, যত মাতামাতি চলছে বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে।
এমনকি পতাকা টাঙাতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু, বিদ্যুতের শক খেয়ে পঙ্গু হয়ে যাওয়া এবং কয়েক জায়গায় দুই দলের সমর্থকদের হাতাহাতি-মৃত্যুর ঘটনাও পত্রিকায় এসেছে। এসব কি বাড়াবাড়ি নয়?
বিশেষ করে শিক্ষিত তরুণদের এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে আমি প্রচুর বিরক্ত। আড্ডা, মাতামাতি করার অনেক বিষয় আছে। দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, বেকারত্ব বাড়ছে, মানুষের নিরাপত্তা নেই, প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরছে শত প্রাণ, গবেষণা-প্রযুক্তিতে বিশ্ব থেকে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি, বিশ্বের চাকরির বাজারে আমাদের অবস্থান নেই, এমনকি আমাদের দেশের বড় বড় পোস্টে বিদেশিদের ছাড়া চলে না। কেননা, আমাদের ভাষাগত, প্রযুক্তিগত দক্ষতা নেই। এসব নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই।
আমাদের খেলার মাঠ কমে যাচ্ছে, সত্যিকার খেলার পরিবর্তে আমরা মুঠোফোন-ইন্টারনেটে খেলতে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি। মুঠোফোন, জুয়া, মাদকে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে তরুণ প্রজন্ম, সে নিয়ে কারও ভ্রুক্ষেপ নেই। খাচ্ছিদাচ্ছি আজেবাজে বিষয় নিয়ে আড্ডা দিচ্ছি, ফেসবুক-ইউটিউব স্ক্রল করছি, আর দিন শেষে সরকার বা বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপিয়ে খালাস। তাহলে কীভাবে হবে? কীভাবে গড়ব সত্যিকার সোনার বাংলাদেশ?
*লেখক: মুহাম্মদ জোবায়ের ইসলাম, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়