শীত শীত সন্ধ্যায় হেমন্ত উৎসব

হলুদ শাড়িতে রাতের কুয়াশা ভিজিয়ে দিচ্ছে রমণীকে। কেশের শিউলি ফুল যেন তাজা হয়ে রাজত্ব করছে পুরো সময়কে। হলুদ, লাল আর কমলা রঙের শাড়িতে নিজেদের হেমন্তের সাজে সজ্জিত করেছে। হাতের মুঠোফোনে সেলফি আর ক্যাপশনের মধুরতার নৃত্যে মেতে উঠেছে ফেসবুক, টুইটার আর ইনস্টাগ্রাম।

বাঁশের পাটিকে হলুদ শাড়ি পরিয়ে কুচি এনেছে তালের সবুজ পাতায়। তার ওপর ককশিটের অংশগ্রহণে লেখা হয়েছে হেমন্ত উৎসব। হেমন্তকেও লাল শাড়ি পরিয়ে হলুদের সঙ্গে মিলন ঘটিয়েছে। নানান নকশায় কলস ঘরের নতুন বধূ সেজে পাশে বসে আছে। এই দৃশ্যে সুফিয়া কামালের ‘হেমন্ত’ কবিতা মনে পড়ছে, ‘সবুজ পাতার খামের ভেতর, হলুদ গাদা চিঠি লেখে। কোন পাথারের ওপার থেকে, আনল ডেকে হেমন্তকে।’

৬ ডিসেম্বরে গ্রামীণ খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার মাধ্যমে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ এ উৎসবের আয়োজন করেন। এ যেন কোনো এক প্রান্তিক গ্রামের দৃশ্য। এই হেমন্তের সাজে সজ্জিত হয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চ।

আয়োজনের সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আল নাঈম বলেন, ‘বাঙালির বারো পার্বণের তেরো উৎসব। সুপ্রাচীন কাল থেকেই এ অঞ্চলের মানুষ প্রকৃতি বন্দনা করেছে তার নিজস্ব ভঙ্গিতে। তবে কালের বিবর্তনে অনেক উৎসব হারিয়ে গেছে। বাঙালির বাঙালিয়ানা ফুটিয়ে তুলতেই আমাদের হেমন্ত উৎসবের আয়োজন। প্রতিবছর হেমন্তকে আমরা বরণ করে নিই পিঠাপুলি, দেশীয় খেলা আর নাচগানের মধ্য দিয়ে। হেমন্ত উৎসব ১৪২৯–এর সাংস্কৃতিক আয়োজনে উপস্থাপনা করাটা আমার জন্য বেশ আনন্দের। কারণ, এই দিনে আমাদের সবার মধ্যে যে সৌহার্দ্য, সম্প্রতির মেলবন্ধন তৈরি হয়, আগামী দিনগুলোয় তা আমাদের চলার শক্তি জোগায়। হেমন্ত উৎসবের মধ্য দিয়ে মানুষের মনে ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়ুক।’

পাশে ছাতিমগাছ। নতুন চালের পিঠা বানানো হচ্ছে। নতুন চাল আর কনকনে শীতে চাদর গায়ে শিক্ষার্থীরা পিঠা খাচ্ছে। গ্রামীণ গান, নৃত্য আর বাকের ভাইয়ের মতো জনপ্রিয় নাটকে মঞ্চের সামনের দর্শক আনন্দ উপভোগ করছে।

হেমন্তের আয়োজনে ব্যবস্থাপনা দায়িত্বে থাকা রুহুল আমিন বলেন, ‘কালের বিবর্তনে দেশ থেকে আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে। হেমন্ত উৎসব গ্রামে পালন করা হলেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এ বিষয়ে তেমন উৎসবের আয়োজন করা হয় না। সে ক্ষেত্রে আমরা সফলভাবে এমন একটা আয়োজন সবাইকে উপহার দিতে পেরে আনন্দিত। সব সময় যেন এই হেমন্তের গানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় মেতে ওঠে।’

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আশশিফা আক্তার হেমন্ত উৎসব সম্পর্কে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর এটা আমার প্রথম হেমন্ত উৎসব। এ উৎসব নিয়ে আমি খুবই আগ্রহী ছিলাম এবং বিভাগের সবাই মিলে খুব উপভোগ করেছি। বিশেষ করে গ্রামীণ খেলা আর পিঠা উৎসবটা বেশি মজার ছিল। আর সাংস্কৃতিক সন্ধ্যাটা তো ভীষণ আনন্দময় ছিল। সব মিলিয়ে এক কথায় অসাধারণ ছিল, মনে রাখার মতো একটা উৎসব।’

হেমন্তের মাধ্যমে হলুদকে বরণ করে নবান্নের উৎসবের পিঠাপুলি, গ্রামীণ খেলার এই সংস্কৃতি বয়ে আনুক প্রতিটা বাঙালির মন।

লেখক: নাজনীন আক্তার নৈশি, শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।