আমার ভালোবাসায় আমার মা

১২ মে মা দিবস হিসেবে পালিত হয়। পাঠকের লেখা থেকে বাছাই করা লেখা প্রকাশিত হচ্ছে নাগরিক সংবাদে।

‘মা’ শব্দটা যে কত ভারী আর কত বড় দায়িত্ব বহন করে, সেটা আগে বুঝতাম না। তবে সম্প্রতি কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের লেখা ‘কখনো আমার মাকে’ বইটি পড়ে আমি আমার মাকে নতুন করে চিনতে শুরু করেছি। তাঁকে নতুন করে ভালোবাসতে শিখেছি। একটা পরিবারে মায়ের ভূমিকা যে কতটুকু, সেটা হয়তো আমি এই বই না পড়লে বুঝতাম না। বইটি পড়ে আমি যেন বারবার ফিরে গিয়েছিলাম আমার স্মৃতিঘেরা শৈশবে। আমার মনে জন্ম নিল মায়ের প্রতি ভালোবাসা আর সম্মান।

আমার জীবনের স্মৃতির পাতার সবটা জুড়েই আছেন আমার মা। ছোটবেলা থেকে বাবাকে অসুস্থ অবস্থায়ই দেখেছি। তাই বাবার সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া বা মার্কেট থেকে বাবার কিনে আনা জামা কবে পড়েছি, আমার সঠিক মনে নেই। আমার স্কুলে ভর্তি, কোচিং-প্রাইভেট, ঘোরাঘুরি, শপিং করা—সবই হয়েছিল মায়ের হাত ধরেই। আমার বই, খাতা, জামা, জুতা সবই কিনতেন মা। আমার বাবাও মায়ের ওপর খুব আশ্বস্ত ছিলেন। আমাদের ভাইবোনের লেখাপড়ার পেছনে যে মায়ের ভূমিকাই বেশি, এটা বাবা সব সময় বলতেন। পাঁচ ভাইবোনের লেখাপড়া, তাদের চাহিদা পূরণ, বাবার খেদমত করা, বাবা অসুস্থ হলে তাঁকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া—এত কিছুর পরও মাকে কখনো ক্লান্ত হতে দেখিনি। তারপর হঠাৎ একদিন বাবা মারা যান। বাবা হারানোর কষ্টও মা আমাদের বুঝতে দেননি। বলেছিলেন, ‘আমিই তোদের মা, আমিই তোদের বাবা! আমার জীবনের আর কোনো স্বাদ-আহ্লাদ নেই। তোরাই আমার সম্পদ। তোরা মানুষ হ, এটাই আমি চাই।’ মায়ের সেই চাওয়াটাই আমাকে বারবার অনুপ্রেরণা দেয়। আমাকে বড় হওয়ার শক্তি দিতে থাকল ধীরে ধীরে।

আমার মনে আছে, যেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার খবর মাকে শুনিয়েছিলাম, মা তাঁর স্নেহমাখা হাত দিয়ে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। মায়ের সেই উষ্ণ স্নেহ আমি আজও ভুলতে পারি না। মায়ের এই সোহাগমাখা আলিঙ্গন পাওয়ার লোভ আমাকে বারবার উদ্যমী করে তোলে। জীবনে বড় হওয়ার জন্য আমার মা তাঁর সন্তানদের যে স্বপ্ন দেখাতেন, সেই স্বপ্নপূরণের জন্য আজ তাদের ছেড়ে আসতে হয়েছে বাড়ি, ছেড়ে আসতে হয়েছে মাতৃস্নেহ। হতে পারে আজ আমি মায়ের থেকে অনেক দূরে। কিন্তু এই দূরত্বই আমাকে মায়ের গুরুত্ব শেখাচ্ছে।

মা শুধু আমার অভিভাবক না, আমার বন্ধু, আমার পৃথিবী, আমার মহিরুহ বৃক্ষ। ‘তোমার কোমল মুখের সেই সুন্দর হাসিটা আমি বাঁচিয়ে রাখতে চাই।’

*লেখক: মাইফুল জামান ঝুমু, শিক্ষার্থী, ফ্রেঞ্চ ল্যাংগুয়েজ অ্যান্ড কালচার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

*নাগরিক সংবাদে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]