৪৩তম বিসিএস: ১৩০০ দিনের অপেক্ষার অবসান কবে?
২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর ৪৩তম বিসিএস থেকে ২ হাজার ৮০৫ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। সিদ্ধান্ত অনুসারে ২ হাজার ১৬৩ জনকে ক্যাডার পদে এবং ৬৪২ জনকে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। এ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিল ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বরে। সেই হিসাবে সাড়ে তিন বছর পার হয়ে গেলেও চূড়ান্ত নিয়োগ কার্যক্রম এখনো আটকে আছে।
৪৩তম বিসিএসে ২ হাজার ১৬৩ জন ক্যাডার পদের মধ্যে সর্বোচ্চ শিক্ষা ক্যাডারে ৮০৩ জন, প্রশাসন ক্যাডারে ৩০০, পররাষ্ট্র ক্যাডারে ২৫, পুলিশ ক্যাডারে ১০০, কর ক্যাডারে ১০১, তথ্য ক্যাডারে ৪৩, সমবায় ক্যাডারে ১৯ জন ও সহকারী ডেন্টাল সার্জনে ৭৫ জনকে সুপারিশ করা হয়েছে।
২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ২০২১ সালের ২৯ অক্টোবর দেশের সব বিভাগীয় শহরে একযোগে ৪৩তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি প্রিলিমিনারির ফল প্রকাশিত হয়, যাতে উত্তীর্ণ হন ১৫ হাজার ২২৯ প্রার্থী। ২০২২ সালের জুলাইয়ে পিএসসি লিখিত পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু করে এবং ২০২৩ সালের ২০ আগস্ট লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে। এতে উত্তীর্ণ হন ৯ হাজার ৮৪১ জন।
দীর্ঘসূত্রতার কারণে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ক্ষোভ ও হতাশা দিন দিন বাড়ছে। চাকরিতে যোগ দিতে না পারায় নিদারুণ কষ্টে দিন পার করছেন অনেকে। বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে চাকরিতে যোগদান করা নিয়ে নানা ব্যঙ্গাত্মক প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছেন তাঁরা। এমনকি ৪৩তম বিসিএস থেকে উত্তীর্ণ ক্যাডারদের যোগদানের আগেই নন–ক্যাডার (সাবরেজিস্ট্রার) যোগদান করে ফেলছেন; যা সুপারিশপ্রাপ্ত ক্যাডারদের সামাজিকভাবে আরও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলছে।
বিসিএসের গেজেট প্রকাশে দেরি হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও নানা কথাবার্তা হচ্ছে। অনেকে না জেনেই অনুমাননির্ভর তথ্য শেয়ার করছেন গেজেটের সম্ভাব্য সময় নিয়ে, যা উত্তীর্ণ প্রার্থীদের বিভ্রান্তিতে ফেলছে। অনেকে বর্তমান চাকরি থেকে ইস্তফা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অগ্রিম নোটিশ কবে দেবেন, সে বিষয়ে দ্বিধাবোধ করছেন। উল্লেখযোগ্য আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা থাকায় দ্বিধায় পড়েছেন। একদিকে ইস্তফার নোটিশ প্রদানের পরে বিসিএসে যোগদানের আগে আরও কালক্ষেপণ হলে আগের চাকরি ছাড়ার পর দীর্ঘদিন কর্মহীন থাকার শঙ্কা; অন্যদিকে আরও অপেক্ষা করে নোটিশ দেওয়ার ক্ষেত্রে ইস্তফার নোটিশ দেওয়ার পর পর্যাপ্ত সময় না থাকায় আগের কর্মস্থলে এককালীন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ প্রদানের বাধ্যবাধকতা, এমন উভয় সংকটের দোলাচলে রয়েছেন ৪৩তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত বহু প্রার্থী।
নিয়োগের অপেক্ষায় থাকা প্রায় সব প্রার্থীর মন্তব্য হচ্ছে, ‘আমাদের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের ছয় মাস হয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের গেজেট এখনো হচ্ছে না, কবে হবে, সেটাও আমরা জানি না। এ নিয়ে উদ্বিগ্নের মধ্যে আছি। কবে বিসিএস ক্যাডার হিসেবে চাকরিতে যোগ দিতে পারব, কেউ কিছুই বলছে না।’
গেজেট প্রকাশের আগে প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ সম্পন্ন হওয়ার পরও গেজেট প্রকাশের অনিশ্চয়তা প্রার্থীদের হতাশার অন্যতম কারণ। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হওয়ার পরও গেজেট প্রকাশ না হওয়ায় তাঁদের মানসিক চাপ আরও বেড়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও সরকারের সহানুভূতিশীল দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। নতুন প্রার্থীদের দ্রুত গেজেট প্রকাশ করে, তাঁদের নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করলে শুধু প্রার্থীদের হতাশা দূর হবে না, বরং প্রশাসনিক কার্যক্রমেও নতুন উদ্যম যোগ হবে।
লেখক: নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক