আসন্ন কাতার বিশ্বকাপকে সামনে রেখে নানা আয়োজনে, উচ্ছ্বাসে উজ্জীবিত পুরো বিশ্ব। স্বাভাবিকভাবেই ফুটবল বিশ্বকাপ খেলাধুলার অন্যান্য বড় আসরের চেয়েও বেশি জনপ্রিয় ও আবেগমিশ্রিত। ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়ায় বিশ্বকাপ ফুটবল এলেই সমর্থকদের বাঁধ ভাঙা উৎসব আমাদের চোখে পড়ে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় ফুটবলের প্রতি আগ্রহ, ভালোবাসা ইতিমধ্যে খেলোয়াড়দের নজরেও এসেছে। মেসি, নেইমারদের স্বজাতি ব্যতীত বাংলাদেশেই ভক্তের সংখ্যা সবার ওপরে। নেইমারের পাবলিসিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিও আমাদের বাংলাদেশি যুবক, যেটা আমাদের জন্য একটি অর্জনও বটে।
৪ বছর পরপর এত বড় একটি আয়োজনে সমর্থকদের উল্লাস থাকবে, এটা স্বাভাবিক। তবে দেশের নানা প্রান্তে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়। নানা ধরনের ব্যঙ্গ করা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক পোস্ট ও বার্তা প্রেরণ যোগ করেছে সংঘর্ষের নতুন মাত্রা। খেলাধুলা উপভোগের বিষয়। একটি পরিবারে একাধিক দলের সমর্থকও থাকে। সবাই মিলে খেলাধুলাকে উপভোগ করতে পারাটাই বিশ্বকাপের মূল আনন্দ। কিন্তু দলীয় তারকাকে নিয়ে ব্যঙ্গ, পতাকা অবমাননা করতেও অনেক সময় সমর্থকেরা দ্বিধা বোধ করেন না। খুনের মতো ঘটনাও ঘটে। কোনো একটি দল বা দলের তারকা খেলোয়াড় নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য আমাদের নিচু মানসিকতারই প্রতিচ্ছবি।
যেকোনো দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য সামান্য অপ্রীতিকর ঘটনাই যথেষ্ট। প্রতিটি সমর্থকের উচিত দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, সমাজে উত্তেজনাকর ও অপ্রীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি না হয়, এমনভাবে খেলাধুলাকে উপভোগ করা, প্রিয় দল ও খেলোয়াড় নিয়ে প্রচার, উল্লাস করা।
যেহেতু ফুটবল বিশ্বকাপে বাঁধ ভাঙা উল্লাস আমাদের দক্ষিণ এশীয়দের একটি অন্যান্য ধারা, কাজেই উল্লাসকে কেন্দ্র করে সব ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও সদা তৎপর থাকতে হবে। যেসব এলাকা স্বাভাবিকভাবেই সংঘর্ষে জর্জরিত, যেখানে ফুটবল খেলা, বিভিন্ন দলের সমর্থন হতে পারে সংঘর্ষের নতুন ইস্যু ও অজুহাত।
কাজেই সব ফুটবল ভক্ত ও সমর্থক গোষ্ঠীর কাছ থেকে একটাই প্রত্যাশা, একটি সুষ্ঠু সুন্দর পরিবেশ বজার রেখে, বিশ্বকাপ ফুটবল উপভোগ করা, ফুটবল বিশ্বকাপের সৌন্দর্য রক্ষা করা। যেহেতু আয়োজনটা সমগ্র বিশ্বের মানুষকে ঘিরে, কাজেই সবার পছন্দকেই আমাদের সম্মান করতে হবে। উৎসবের নামে আমরা যেন অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ ও অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি না করি।
ফুটবল বিশ্বকাপ সবার জন্য হয়ে উঠবে আনন্দঘন, কাতার বিশ্বকাপ প্রসঙ্গে এটাই মূলকথা।
*লেখক: সিফাত রাব্বানী, শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা