মাইক্রোবায়োলজিস্টদের আস্থা ‘বাংলাদেশ সোসাইটি অব মাইক্রোবায়োলজিস্ট’

মাইক্রোবায়োলজি বিষয়টি শুনলেই কেমন যেন বারবার কোভিড–১৯–এর কথা মনে পড়ে যায়। না, আজ লিখছি একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে, যেখানে ভাইরাসের ব্যাপ্তি, ক্ষমতা, বিস্তার, পরিসর আর ওনাদের দমিয়ে রাখার অনেক কিছুই করোনাভাইরাসের মহামারিতে শিখেছি এবং শিখিয়েছি। তখনই বুঝেছি, সামনের বিশ্ব দাপিয়ে বেড়াবে অণুজীবেরা। আজ ২০২৫–এর শেষে এসে ঠিক যেন তা–ই হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসজনিত রোগ সারা বিশ্বে মহা দাপটে এখনো বিদ্যমান এবং সেটা চলতেই থাকবে।

মাইক্রোবায়োলজিস্টের অবদান নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। অনেকবার লিখেছি এবং বারবারই দেখেছি, কোথাও না কোথাও একটা শূন্যতা রয়েছেই।

বাংলাদেশে ২০১০ সালের পর থেকেই বিসিএস ক্যাডার হওয়া যেন সোনার হরিণ। একবার ভাবুন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে অনার্স বা মাস্টার্স করার পর যদি দেখে বিসিএস পরীক্ষায় অন্য বিভাগের বন্ধুরা ‘প্রভাষক’ পদে সুযোগ পাচ্ছে, আর সে কিনা পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগই পাচ্ছে না, তাহলে বিষয়টা কেমন হয়! এমনিতেই কথিত আছে, ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ মাইক্রোবায়োলজিস্ট দেশে থাকেন না। ধরে নিলাম সেটাই সত্যি, তাহলে ১০ থেকে ২০ শতাংশ কোথায় যাবেন? বেসরকারি খাত কি সবাইকে সুযোগ দিতে পারবে? প্রতিবছর শত শত শিক্ষার্থী পাস করে বের হচ্ছেন, সবাই কি বিদেশে যাবেন? তাহলে কি আমরা দেশের মেধাবী সম্পদ শুধু বিদেশের জন্য তৈরি করছি! অনেকেই প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বিদেশে যেতে পারছেন না। পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিভিন্ন বেড়াজালে; তাঁদেরকে কে দেখবে!

বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইক্রোবায়োলজি একটি সম্মানজনক ও বিশেষায়িত বিভাগ হিসেবে স্বীকৃত হলেও কর্মক্ষেত্রে, বিশেষত সরকারি নিয়োগ কাঠামোয় এর পূর্ণাঙ্গ প্রয়োগ এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, বিএসটিআই, বিসিএসআইআর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ইত্যাদি সেক্টরে ব্যাপক আলোর মুখ দেখলেও অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে মাইক্রোবায়োলজিস্টদের নিয়োগ বেশ পিছিয়ে আছে।

বাংলাদেশে ২০১০ সালের পর থেকেই বিসিএস ক্যাডার হওয়া যেন সোনার হরিণ। একবার ভাবুন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে অনার্স বা মাস্টার্স করার পর যদি দেখে বিসিএস পরীক্ষায় অন্য বিভাগের বন্ধুরা ‘প্রভাষক’ পদে সুযোগ পাচ্ছে, আর সে কিনা পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগই পাচ্ছে না, তাহলে বিষয়টা কেমন হয়!

ব্যাকটেরিওলজিস্ট ও ভাইরোলজিস্ট নামে অনেক সার্কুলার চোখে পড়ে, আবার সেখানে নাকি নন–মাইক্রোবায়োলজিস্টরাও জব করেন, কিন্তু মাইক্রোবায়োলজিস্টরা পারেন না। অদ্ভুত কাণ্ড তো! ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া দেখেই যাঁদের চার থেকে পাঁচ বছর কেটে যায়, তাঁদের চিন্তা জব পান না।

সরকারি–বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে প্রতিবছর শত শত মাইক্রোবায়োলজিস্ট পাস করে বের হচ্ছেন। কেউবা সরকারি চাকরি, কেউবা বেসরকারি চাকরি আর বেশির ভাগ তো দেশের বাইরেই পা দিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে একজন মাইক্রোবায়োলজিস্ট সম্পূর্ণ অসহায় হয়ে যান, কী করবেন আর কী করা উচিত এই ভেবে ভেবে। কারণ, যা হয় সেটা শুধু সিনিয়র বড় ভাই–আপুদের ধরে কিংবা নিজের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়। কারণ, একজন মাইক্রোবায়োলজিস্ট যোগ্যতার পরীক্ষা দিয়েই এত দূর এসেছেন। সবাই যোগ্য, শুধু সঠিক গাইডলাইনের অভাবে পথ হারিয়ে ফেলছেন।

তাহলে আমাদের ক্যারিয়ার কোথায়! বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পার করে সবাই চান নিজেকে তাঁর মতো করে জীবন সাজাতে। কেউ পারেন, আবার কেউ পারেন না। বাংলাদেশের পটভূমিতে বেতন, নিরাপত্তা ও সুযোগ–সুবিধা অনেক সীমিত জেনেও আমরা হতাশায় ভুগে থাকি। চাকরির শুরুতেই যোগ্যতার পাশাপাশি রয়েছে পাবলিক–প্রাইভেট ও মামা–কাকার দৌরাত্ম্য। এই দৌড়ে আবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনেক পিছিয়ে রয়েছেন, এর কারণ অজানা। মানবসম্পদ বিভাগ অনেক যাচাই–বাছাই করে টপ ক্যান্ডিডেট চয়েস করে, কিছুদিন পরে অনেকেই আবার জব চেঞ্জ করে লাপাত্তা হয়ে যান। মেধার কিছু শূন্যস্থান পূরণ হয় আবার কিছু হয় না।

তাহলে উত্তরণের উপায় কী? বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই সঠিক কাউন্সেলিং ও ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যাপক মুক্ত আলোচনা ও বাংলাদেশের জব নিয়ে সম্যক ধারণা না দিলে আত্মতুষ্টিহীনতায় ভুগতেই থাকবেন সবাই। মেধা বিদেশ গেলে দেশের উন্নতি কে করবেন! এখনই ভাবা দরকার।

নাগরিক সংবাদে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই–মেইল: [email protected]

এর মধ্যেই আলোর বাতিঘর হয়ে বাংলাদেশ সোসাইটি অব মাইক্রোবায়োলজিস্ট (বিএসএম) সারা দেশের মাইক্রোবায়োলজিস্টদের জন্য অন্যতম অভিভাবকের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক অনেক সংগঠন রয়েছে, তবে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজিস্টদের জন্য কমন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে অনেক বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছে। কমিটিতে রয়েছেন সম্মানিত শিক্ষকেরা, অ্যালামনাইসহ শিক্ষার্থীরা। কাউন্সেলিং, চাকরিতে সহায়তা, গাইডলাইন, সামাজিক, মানবিকসহ যেকোনো কাজে সর্বদাই অগ্রগামী বাংলাদেশ সোসাইটি অব মাইক্রোবায়োলজিস্ট। ভবিষ্যতে মাইক্রোবায়োলজি কাউন্সিল গঠন, বিসিএস বা নন–ক্যাডার পরীক্ষায় মাইক্রোবায়োলজিস্টদের আরও পদ বাড়ানো, বেসরকারি খাতে মাইক্রোবায়োলজিস্টদের পদ সৃষ্টি করা, হাসপাতাল, ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেক্টরে পদ সৃষ্টি করাসহ বিভিন্ন গবেষণার খাত বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার ব্যাপারে আরও সোচ্চার হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছি।

*লেখক: মনোজিৎ কুমার রায়, গর্বিত সদস্য, বাংলাদেশ সোসাইটি অব মাইক্রোবায়োলজিস্ট

আরও পড়ুন