ফুটবল খেলার ইতিহাস

ফুটবল বা সকার খেলার একটি দীর্ঘ ইতিহাস আছে। ১৯ শতকের মাঝামাঝি ইংল্যান্ডে ফুটবল তার বর্তমান রূপে উদ্ভূত হয়। কিন্তু গেমটির বিকল্প সংস্করণ অনেক আগে থেকেই বিদ্যমান ছিল এবং তা ফুটবল ইতিহাসের একটি অংশ।

বল নিয়ে প্রথম পরিচিত দলগত খেলার প্রচলন তিন হাজার বছর আগের পুরোনো, যা মেসোআমেরিকান সংস্কৃতিতে ঘটেছিল। খেলাটি অ্যাজটেকদের দ্বারা প্রবর্তিত, যা Tchatali নামে পরিচিত ছিল, যদিও এ খেলার বিভিন্ন সংস্করণ সেই সময় বৃহৎ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। অ্যাজটেক জনগণ হলো মধ্য মেক্সিকোর বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী, বিশেষ করে সেসব গোষ্ঠী, যারা নাহুয়াটল ভাষায় কথা বলতেন। কিছু ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এ খেলার বলটি সূর্যের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হতো এবং হেরে যাওয়া দলের অধিনায়ককে দেবতাদের কাছে বলি দেওয়া হতো। রাবার দিয়ে তৈরি বাউন্সিং বল ছিল মেসোআমেরিকান বল গেম সংস্করণগুলোর একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য, যা অন্য কোনো প্রাথমিক সংস্কৃতিতে প্রচলিত ছিল না।

লাথি মারার সঙ্গে জড়িত প্রথম পরিচিত বল খেলা খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় এবং দ্বিতীয় শতাব্দীতে চীনে প্রচলিত ছিল, যা কুজু (cuju) নামে পরিচিত ছিল। কুজু খেলাটি একটি বর্গাকৃতি মাঠে গোলাকার একটি বল (সেলাই করা চামড়ার ভেতরে পশম বা পালক দিয়ে তৈরি) দিয়ে খেলা হতো। এই খেলার একটি পরিবর্তিত রূপ পরে জাপানে ছড়িয়ে পড়ে, যা কেমারি (kemari) নামে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুশীলন করা হতো।

সম্ভবত আরও পুরোনো কুজু খেলা, যা মার্ন গুক (Marn Gook) নামে পরিচিত। ১৮০০-এর দশকে শ্বেতাঙ্গ অভিবাসীদের মতে, অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসীদের দ্বারা এটি প্রাথমিকভাবে লাথি মারার সঙ্গে জড়িত একটি বলের খেলা ছিল। বলটি পাতা বা শিকড় দ্বারা তৈরি করা হতো। নিয়মগুলো বেশির ভাগই অজানা, তবে গেমের অন্যান্য প্রাথমিক সংস্করণগুলোর মতোই এ খেলায় বলটিকে শূন্যের ওপরে ধরে রাখাটাই ছিল সম্ভবত এর একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য।

প্রাচীন গ্রিস থেকে বল খেলার অন্যান্য বৈচিত্র্য জানা যায়। সেই সময় বলগুলো চুলে ভরা চামড়ার টুকরো দিয়ে তৈরি করা হতো। নথি অনুযায়ী, প্রথম বাতাসে ভরা বলের প্রচলন সপ্তম শতাব্দীর। বল গেমগুলো অবশ্য নিম্নস্তরের খেলা ছিল এবং প্যানহেলেনিক গেমসে অন্তর্ভুক্ত ছিল না। প্রাচীন রোমে, বল গেম বড় আখড়াগুলোতে (অ্যাম্ফিথিয়েটার) বিনোদনের অন্তর্ভুক্ত ছিল না, তবে হার্পাস্টাম নামে সামরিক অনুশীলনে এটি প্রচলিত ছিল। এটি ছিল রোমান সংস্কৃতি, যা ফুটবলকে ব্রিটিশ দ্বীপে নিয়ে আসে। তবে, ব্রিটিশ জনগণ কোন মাত্রায় এই বৈচিত্র্য দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল এবং কোন মাত্রায় তারা তাদের নিজস্ব রূপগুলো তৈরি করেছিল, তা অনিশ্চিত।

সর্বাধিক স্বীকৃত তথ্যানুযায়ী, গেমটি ১২ শতকে ইংল্যান্ডে বিকশিত হয়েছিল। এই শতাব্দীতে, ফুটবলসদৃশ খেলা ইংল্যান্ডের তৃণভূমি ও রাস্তাগুলোতে খেলা হতো। লাথি ছাড়াও খেলায় মুষ্টি দিয়ে বল ঘুষিও জড়িত ছিল। ফুটবলের এই প্রাথমিক রূপটি খেলার আধুনিক পদ্ধতির চেয়ে অনেক বেশি রুক্ষ এবং হিংসাত্মক ছিল।

ফুটবল খেলার অগ্রদূতদের মাঝে এ খেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ছিল, তা হলো—এ গেমগুলোতে প্রচুর লোক জড়িত থাকত এবং শহরের বিশাল এলাকাজুড়ে অনুষ্ঠিত হতো। একই ধরনের খেলা ১৬ শতক থেকে ফ্লোরেন্সেও অনুষ্ঠিত হতো, যেখানে এটিকে ক্যালসিও (Calcio) বলা হতো। এই গেমগুলোর তাণ্ডবে শহরের ক্ষতি এবং কখনো কখনো অংশগ্রহণকারীদের মৃত্যুর কারণও হতো। এ কারণে গেমটির বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় এবং তা কয়েক শতাব্দী ধরে নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু ফুটবলের মতো গেমগুলো ১৭ শতকে আবারও লন্ডনের রাস্তায় ফিরে আসে এবং পরবর্তী সময় ১৮৩৫ সালে এটি আবার নিষিদ্ধ করা হয়, কিন্তু এ পর্যায়ে খেলাটি পাবলিক স্কুলগুলোতে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

তবে, আজকের ফুটবলের বৈশিষ্ট্যগুলো খেলায় অনুশীলনে নেওয়ার জন্য দীর্ঘ সময় লেগেছিল। দীর্ঘদিন ধরে ফুটবল এবং রাগবির মধ্যে কোনো স্পষ্ট পার্থক্য ছিল না। বলের আকার, খেলোয়াড়ের সংখ্যা এবং ম্যাচের দৈর্ঘ্য নিয়েও অনেক বৈচিত্র্য ছিল।
খেলাটি প্রায়ই স্কুলে খেলা হতো এবং তা চর্চা করার জন্য দুটি প্রধান স্কুল ছিল রাগবি এবং ইটন। রাগবিতে যে নিয়মে খেলা হতো, তার মধ্যে হাত দিয়ে বল ধরা অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং খেলাটিকে আজকে আমরা রাগবি বলে জানি, যার উৎপত্তি এখান থেকেই হয়েছিল। অন্যদিকে ইটনে বলটি একচেটিয়াভাবে পায়ের দ্বারা খেলা হতো এবং খেলাটিকে আধুনিক ফুটবলের ঘনিষ্ঠ পূর্বসূরি হিসেবে দেখা হয়। রাগবিতে খেলাটিকে ‘দৌড়ের খেলা’, অপর দিকে ইটনের খেলাটিকে ‘ড্রিবলিং খেলা’ বলা হতো।

১৮৪৮ সালে কেমব্রিজে একটি সভায় গেমের জন্য সঠিক নিয়ম তৈরি করার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু সে সময়ে নিয়মের সব প্রশ্নের চূড়ান্ত সমাধান অর্জন করা সম্ভব হয় নাই। ফুটবলের ইতিহাসে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে ১৮৬৩ সালে লন্ডনে, যখন ইংল্যান্ডে প্রথম ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হয়। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে হাত দিয়ে বল বহন করা যাবে না। বৈঠকের ফলে বলের আকার এবং ওজনের একটি প্রমিতকরণও করা হয়। লন্ডন মিটিংয়ের ফলে খেলাটি দুটি কোডে বিভক্ত হয়: অ্যাসোসিয়েশন ফুটবল এবং রাগবি।

গেমটি অবশ্য দীর্ঘ সময়ের জন্য বিকাশ অব্যাহত থাকে এবং নিয়মগুলোর বিষয়ে অনেক নমনীয়তা প্রদর্শন করা হয়। পিচে খেলোয়াড়ের সংখ্যা পরিবর্তিত হতে পারত। দলগুলোর খেলোয়াড়দের চেহারা আলাদা করার জন্য কোনো ইউনিফর্মও ব্যবহার করা হতো না। খেলোয়াড়দের ক্যাপ পরা খুব সাধারণ নিয়ম ছিল।

এ পর্যায়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য ইংলিশ ও স্কটিশ দলের মধ্যে লক্ষ করা যায়। যেখানে ইংলিশ দলগুলো আরও রাগবি ফ্যাশনে বল নিয়ে এগিয়ে যেতে পছন্দ করত। অপর দিকে স্কটিশরা তাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে বল পাস করা বেছে নিয়েছিল। এই স্কটিশ পদ্ধতিটি শিগগিরই প্রধান হয়ে ওঠে।

খেলাটি প্রথমে ব্রিটিশ শ্রমিকশ্রেণির জন্য একটি বিনোদন ছিল। ১৯ শতকের শেষের দিকে অভূতপূর্ব পরিমাণে, প্রায় ৩০ হাজার পর্যন্ত দর্শক বড় ম্যাচগুলো দেখতে আসত। গেমটি শিগগিরই ব্রিটিশদের দ্বারা বিশ্বের অন্যান্য অংশে ভ্রমণের মাধ্যমে প্রসারিত হয়। বিশেষ করে দক্ষিণ আমেরিকা ও ভারতে ফুটবলের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়।

ফুটবল ক্লাবগুলো ১৫ শতক থেকে বিদ্যমান, কিন্তু তা ছিল অসংগঠিত এবং অফিশিয়াল মর্যাদা ছাড়াই। তাই প্রথম ফুটবল ক্লাব কোনটি, তা নির্ধারণ করা কঠিন। কিছু ইতিহাসবিদ মনে করেন যে ১৮২৪ সালে এডিনবার্গে একটি ফুটবল ক্লাব গঠিত হয়েছিল। প্রারম্ভিক ক্লাবগুলো প্রায়ই প্রাক্তন স্কুলছাত্রদের দ্বারা গঠিত হয়েছিল এবং এ ধরনের প্রথমটি ১৮৫৫ সালে শেফিল্ডে (একটি ফুটবল টুর্নামেন্টের নাম) গঠিত হয়েছিল। পেশাদার ফুটবল ক্লাবগুলোর মধ্যে প্রাচীনতম হলো ইংলিশ ক্লাব নটস কাউন্টি (Notts County), যা ১৮৬২ সালে গঠিত হয়েছিল এবং আজও বিদ্যমান।
দলগুলোর উত্থানের জন্য শিল্পায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যার ফলে কারখানা, পাব এবং গির্জার মতো জায়গায় বৃহৎ পরিসরে লোকদের মিলিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। ফুটবল দলগুলো বড় বড় শহরে প্রতিষ্ঠিত হতো এবং নতুন নির্মিত রেলপথগুলো তাদের অন্যান্য শহরে সহজে নিয়ে যেতে পারত।

শুরুতে ফুটবলে পাবলিক স্কুলের দলগুলোর আধিপত্য ছিল, কিন্তু পরে, কারখানার কর্মীদের দ্বারা গঠিত দলগুলো সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়। আরেকটি পরিবর্তন ধারাবাহিকভাবে ঘটেছিল, যখন কিছু ক্লাব তাদের দলে যোগ দেওয়ার জন্য সেরা খেলোয়াড়দের অর্থ প্রদান করতে ইচ্ছুক হয়। এটি একটি দীর্ঘ সময়ের পরিবর্তনের সূচনা করে, যেখানে গেমটি পেশাদার স্তরে বিকাশ লাভ করে।

খেলোয়াড়দের অর্থ প্রদানের পেছনে যে অনুপ্রেরণা, তা শুধু বেশি ম্যাচ জেতা ছিল না। ১৮৮০-এর দশকে খেলাটির প্রতি আগ্রহ এমন পর্যায়ে চলে যায় যে ম্যাচের টিকিট বিক্রি করা শুরু হয় এবং ১৮৮৫ সালে পেশাদার ফুটবল বৈধতা পায় এবং তিন বছর পর ফুটবল লিগ শুরু হয়। প্রথম মৌসুমে, ১২টি ক্লাব লিগে যোগ দিয়েছিল। পরে আরও ক্লাব আগ্রহী হয়ে ওঠে এবং এর ফলে প্রতিযোগিতা আরও বিভাগীয় পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে।

দীর্ঘ সময় ধরে, ব্রিটিশ দলগুলো ফুটবল খেলায় আধিপত্য বিস্তার করে। কয়েক দশক পরে, প্রাগ, বুদাপেস্ট এবং সিয়েনার ক্লাবগুলো প্রাথমিকভাবে ব্রিটিশ আধিপত্যের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে।

ইতিহাসের অনেক কিছুর মতোই, নারীরা দীর্ঘদিন ধরে গেমে অংশগ্রহণ থেকে বাদ পড়েছিল। ১৯ শতকের শেষের দিকে নারীরা ফুটবল খেলতে শুরু করেছিল। প্রথম অফিশিয়াল নারীদের খেলা ১৮৮৮ সালে ইনভারনেসে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
ফুটবলের অন্য মাইলফলকগুলোর মধ্যে ছিল ১৮৭১ সালে ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন চ্যালেঞ্জ কাপ (এফএ কাপ) প্রথম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতায় পরিণত হয়। পরের বছর দুটি জাতীয় দলের মধ্যে প্রথমবারের মতো একটি ম্যাচ খেলা হয়। ইংল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ডের মধ্যে খেলা ম্যাচটি ০-০ তে শেষ হয়েছিল এবং হ্যামিল্টন ক্রিসেন্টে চার হাজার দর্শক খেলাটি উপভোগ করেছিল। ১২ বছর পরে, ১৮৮৩ সালে, প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয় এবং চারটি জাতীয় দল অন্তর্ভুক্ত ছিল: ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও ওয়েলস।

ফুটবল দীর্ঘদিন ধরে একটি ব্রিটিশ খেলা ছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে এটি ইউরোপের অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ইউরোপের বাইরে অনুষ্ঠিত প্রথম খেলাটি ১৮৬৭ সালে আর্জেন্টিনায় হয়েছিল, তবে এতে বিদেশি ব্রিটিশকর্মীরা জড়িত ছিল, যারা আর্জেন্টিনার নাগরিক নয়।

ফেডারেশন ইন্টারন্যাশনাল ডি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (The Fedaration Inter-nationale de Football Association, FIFA) ১৯০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, সুইডেন ও সুইজারল্যান্ডের প্রতিনিধিরা একটি ফাউন্ডেশন অ্যাক্টে সই করেছিল। ইংল্যান্ড এবং অন্যান্য ব্রিটিশ দেশ শুরু থেকেই ফিফাতে যোগ দেয়নি, কারণ, তারা মনে করত, গেমটি উদ্ভাবন আমাদের হাতে, তাই কোনো সংস্থার অধীনস্থ হওয়ার কোনো অভিপ্রায় দেখায়নি। তবু পরের বছরে সেখানে যোগ দেয় দেশগুলো, কিন্তু ১৯৫০ সাল পর্যন্ত কোনো বিশ্বকাপে অংশ নেয়নি।

এর মাঝে অনেক দেশে ঘরোয়া লিগ অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমটি ছিল, যেমনটি ইতিমধ্যে উল্লিখিত হয়েছে, ১৮৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ইংলিশ ফুটবল লিগ। লিগগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও বিভাজন দ্বারা প্রসারিত হয়, যা দলের পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে ছিল।

১৯০৮ সালে ফুটবল প্রথমবারের মতো অলিম্পিক গেমসে অফিশিয়াল খেলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৩০ সালে প্রথম ফিফা বিশ্বকাপ খেলার আগপর্যন্ত, অলিম্পিক গেমস ফুটবল টুর্নামেন্ট একটি জাতীয় পর্যায়ে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ হিসেবে স্থান পায়। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এখানে নারীদের ফুটবল যোগ করা হয়নি।

ফুটবলে অন্যান্য অনেক খেলার মতোই সাদা পুরুষ খেলোয়াড়দের প্রাধান্য ছিল দীর্ঘদিন ধরে। তবে ফুটবলে কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড়েরা অন্যান্য খেলার চেয়ে, যেমন টেনিস, তুলনামূলকভাবে প্রথম দিক থেকেই উপস্থিত হতে শুরু করে এবং ফুটবল ঐতিহ্যগতভাবে কালো এবং সাদা খেলোয়াড়দের মিশ্রণের একটি খেলা হিসেবে পরিচিতি পায়।

ব্রিটেনে, অ্যান্ড্রু ওয়াটসন প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত, এবং তিনি ১৮৮০-এর দশকে স্কটিশ ক্লাব কুইন্স পার্কে খেলেছিলেন।

১৯ শতকের শেষের দিকে, ফুটবল খেলা আয়োজনের উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডে গুডিসন পার্ক তৈরি করা হয়। ১৮৯৪ সালে, নটস কাউন্টি এবং বোল্টন ওয়ান্ডারার্সের মধ্যে এফএ কাপের ফাইনালে ৩৭ হাজার দর্শক উপস্থিত ছিল। ফুটবল স্টেডিয়ামগুলোর উন্নয়নে একটি মাইলফলক হলো মারাকানা স্টেডিয়াম নির্মাণ। ১৯৫০ সালে রিও ডি জেনেরিওর আকর্ষণীয় স্টেডিয়ামটি প্রায় দুই লাখ লোকের জন্য প্রস্তুত ছিল। অন্য কোনো খেলা হোস্ট করার জন্য নির্মিত এই ক্ষমতার স্টেডিয়াম এর আগে কেউ কখনো দেখেনি। স্টেডিয়ামগুলোতে ভক্তকুলের দুটি ভিন্ন সংস্কৃতির ঐতিহ্য রয়েছে—ব্রিটিশ ও দক্ষিণ আমেরিকান। ব্রিটিশ অনুরাগীরা গান গাওয়ার ঐতিহ্য গ্রহণ করেছিল, যা তারা পাব এবং অন্যান্য এলাকার কাজ করাকালীন গান গাওয়া থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিল। অন্যদিকে দক্ষিণ আমেরিকানরা কার্নিভাল শৈলী গ্রহণ করে, যার মধ্যে আতশবাজি, পটকাবাজি উল্লেখযোগ্য। অন্যান্য দেশের ভক্তরা পরে এই দুই ঐতিহ্যের মিশ্রণ গ্রহণ করে।

গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমস ব্যতীত অন্য কোনো ক্রীড়া আসর আজও ফিফা বিশ্বকাপের সঙ্গে নিজেকে পরিমাপ করতে পারে না। ফিফা বিশ্বকাপ প্রথম শুরু ১৯৩০ সালে, উরুগুয়েতে। তার পর থেকে প্রতি চার বছর পর আয়োজন হয়ে আসছে (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে দুটি ব্যতিক্রম ছাড়া)। ১৯৯১ সালে নারীদের জন্য প্রথম বিশ্বকাপ চীনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং তার পর থেকে প্রতি চার বছর তা হচ্ছে।

বর্তমানে ক্লাবগুলোর জন্য সবচেয়ে বড় বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট হলো চ্যাম্পিয়নস লিগ, যা ১৯৯২ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এটি পূর্বে ইউরোপিয়ান কাপ নামে পরিচিত ছিল (১৯৫৫-১৯৯১)।

১৯ শতকের শেষ দিকে, মাত্র কয়েকটি জাতীয় ফুটবল দল ছিল; ইংল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ডের প্রথম সক্রিয় দল ছিল যারা, ১৮৭০–এর দশকে একে অপরের বিরুদ্ধে গেম খেলেছিল। বর্তমানে ২১১টি জাতীয় অ্যাসোসিয়েশন-ফুটবল খেলার বিশ্ব নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফেডারেশন ইন্টারন্যাশনাল ডি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (FIFA)-এর অন্তর্ভুক্ত। বিশ্বায়নের আরেকটি প্রমাণ দেখা যেতে পারে বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর বৃদ্ধির মধ্যে, যা ১৯৩৪ সালে ৩২টি থেকে ২০১৪ সালে ২০০টিরও বেশিতে উন্নীত হয়।

বিশ্বের অঞ্চলগুলোকে ছয়টি কনফেডারেশনে বিভক্ত
কনফেডারেশন আফ্রিকান ডি ফুটবল (সিএএফ), এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি), ইউনিয়ন ডেস অ্যাসোসিয়েশন ইউরোপিয়ানস ডি ফুটবল (উইএফএ), দ্য কনফেডারেশন অব নর্থ, সেন্ট্রাল আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফুটবল (কনকাকাফ), ওশেনিয়া ফুটবল কনফেডারেশন (OFC), এবং Confederación Sudamericana de Footbol (CONMEBOL)।

ফুটবল অবশ্যই একটি বৈশ্বিক খেলা এবং কোনো তুলনা ছাড়াই বিশ্বের সবচেয়ে বড় খেলা। ডেভিড গোল্ডব্ল্যাটের বই “দ্য বল ইজ রাউন্ড”থেকে একটি উদ্ধৃতি মাধ্যমে এই ‘কেন’ এর উত্তর দেওয়ার সম্ভব। এটি ট্র্যাজেডি এবং কমেডি, এপিক এবং প্যান্টোমাইম, অকৃত্রিম সংগীত-হল এবং দুর্গম পরীক্ষামূলক পারফরম্যান্স যেখানে মঞ্চস্থ হয়। এটি অপ্রতিরোধ্য বিজয়, ভাগ্যবান মুক্তি, অসম্ভব প্রত্যাবর্তন এবং একগুঁয়ে অচলাবস্থা ঘটায়। এটি অপ্রত্যাশিততার উজ্জ্বলতা, মানুষের হৃদয় এবং মানুষের দক্ষতার অনিশ্চয়তা, ইম্প্রোভাইজেশন এবং সুযোগকে ধরে রাখে।

বিশ্বের বেশির ভাগ অংশে ফুটবল হলো বিশ্বের বৃহত্তম খেলা ‘সবুজ পিচের দাবা’ নামে পরিচিত। তবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় ফুটবল ‘সকার’ নামে পরিচিত।
*লেখক: অধ্যাপক এম আবদুল জলিল, কোষাধ্যক্ষ, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউএফটি)
**সব তথ্য–উপাত্ত বিভিন্ন নিবন্ধ থেকে সংগৃহীত।

তথ্যপঞ্জি:
The National Encyclopedia
History of Football: The Beautiful Game (2002 Documentary Series)
The Ball is Round: A Global History of Football - David Goldblatt (2008)
http://www.fifa.com/about-fifa/who-we-are/the-game/
https://en.wikipedia.org/wiki/Oldest_football_clubs
http://www.fifa.com/about-fifa/who-we-are/history/
http://spartacus-educational.com/Fblack.htm
http://spartacus-educational.com/Fstadiums.htm
http://www.fifa.com/associations/