ব্রহ্মপুত্রের বুকে এক প্রশান্ত বিকেল

যেদিন বিকেলে একটু হাওয়া বয়, নৌকায় বেড়ানো যেন একটা স্বর্গীয় প্রশান্তি বয়ে আনেছবি: লেখকের পাঠানো

ব্রহ্মপুত্র নদটি ‘প্রকৃতি–কন্যা’ নামে খ্যাত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সীমানা ঘেঁষে বয়ে গেছে। দুপুরের গরম হাওয়া পেরিয়ে যখন বিকেলের শান্ত হাওয়া বইতে শুরু করে, তখন নদের পাড়ে বাড়তে থাকে মানুষের সমাগম। সারা দিনের ক্লাসের ব্যস্ততা, ক্লান্তি দূর করার জন্য শিক্ষার্থীরা একটু মনোরম হাওয়া খেতে চলে আসেন এই নদের পাড়ে। দুপুরের পর থেকেই বাড়তে থাকে ভিড়।

এ ছাড়া ছুটির দিনগুলোতে ময়মনসিংহের স্থানীয় লোকজন পরিবার নিয়ে চলে আসেন এখানে প্রকৃতির সঙ্গে একটু সময় কাটাবেন বলে। নদের পাড়ে গড়ে ওঠা ফুচকা, ঝালমুড়ির দোকানে দেখা যায় ভিড়। কেউ চড়ুইভাতি করেন, কেউ গিটারের সুরে গান তুলে পরিবেশ মুখর করেন, কেউবা বিকেলে নদের ধারে একটু হাঁটাহাঁটি করে উপভোগ করেন প্রকৃতির স্নিগ্ধতা।

ক্লাসের ব্যস্ততা, ক্লান্তি দূর করার জন্য শিক্ষার্থীরা একটু মনোরম হাওয়া খেতে চলে আসেন এই নদের পাড়ে
ছবি: লেখকের পাঠানো

বিকেল হলে দেখা যায় নদের বুকে নৌকার ছোটাছুটি। হরেক রঙের পালতোলা নৌকা যেন নদকে রঙিন করে তোলে। নানান রঙের পাল ও সূর্যাস্তের লাল আভা নদের বুকে মিশে এক অকৃত্রিম রূপ ধারণ করে। মাঝি আপন মনে গান গেয়ে পাল তুলে নৌকা চালান। দল বেঁধে ঘণ্টায় ১০০-১৫০ টাকায় নৌকা নিয়ে নদের বুকে ঘুরে বেড়ানোতে যেন অন্য রকম একটা আনন্দ মিশে থাকে। যেদিন বিকেলে একটু হাওয়া বয়, নৌকায় বেড়ানো যেন একটা স্বর্গীয় প্রশান্তি বয়ে আনে। দূর থেকে ভেসে আসা মাঝির কণ্ঠের সুর, নদের কলতান আর আকাশে সূর্যাস্তের রং ছড়ানো—সব মিলিয়ে এ যেন এক অপার্থিব দৃশ্য। শরতের সময় নদের অপারে চলে কাশফুলের রাজত্ব। আর মাঠজুড়ে সেই ঢেউখেলানো কাশফুল দেখতে চলে আসেন প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ। প্রকৃতির এই শুভ্রতায় উধাও হয়ে যায় রাজ্যের ক্লান্তি।

দূর থেকে ভেসে আসা মাঝির কণ্ঠের সুর, নদের কলতান আর আকাশে সূর্যাস্তের রং ছড়ানো—সব মিলিয়ে এ যেন এক অপার্থিব দৃশ্য
ছবি: লেখকের পাঠানো

বাকৃবি ক্যাম্পাসের এই নদের তীর যেন শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের জন্য এক অবসরের ঠিকানা। প্রকৃতির সান্নিধ্যে কিছুক্ষণের জন্য নিজেকে হারিয়ে ফেলা, বন্ধুদের সঙ্গে প্রাণখোলা আড্ডা দেওয়া কিংবা পরিবারের সঙ্গে আনন্দময় সময় কাটানো—সবকিছুতেই এই নদের পাড় হয়ে ওঠে অনন্য। এই ব্রহ্মপুত্রের তীর হয়ে উঠেছে প্রশান্তি আর সৌন্দর্যের এক অপরূপ মিলনক্ষেত্র। নদের পাড়ে ঘুরতে আসা এক পরিবারের সঙ্গে কথা বললে জানায়, শহরের যান্ত্রিক জীবন থেকে একদণ্ড মুক্তি পেতেই প্রকৃতির সান্নিধ্যে আসা। এখানকার নির্মল হাওয়া যেন তাদের পুরো সপ্তাহের ক্লান্তি দূর করতে সহায়তা করে, বিকেলটা হয়ে ওঠে স্মৃতিময়।

*লেখক: সাইয়্যেদা গালিবা রুহী, শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ