পথচারীদের জন্য নিশ্চিত করুন ফুটপাতের নিরাপত্তা
ব্যস্ত নগরী। হাটবাজার, রাস্তা–ঘাট, ফুটপাত—সবখানেই মানুষের পথচলা দিন এবং রাতের বড় একটা সময়। সবাই সবার প্রয়োজনে ছুটছেন। এই শহরে থেমে যাওয়ার সুযোগ নেই। নিজ প্রয়োজনের তাগিদেই ছুটতে হচ্ছে অবিরাম।
দুর্ঘটনা তো শহরের নিয়মিত ঘটনা। কিছু কিছু দুর্ঘটনা বছরের পর বছর ঘটছে শুধুই আমাদের দায়িত্বশীলদের অবহেলার কারণে। এগুলো যখন ঘটে, তখনই শুধু আলোচনা-সমালোচনা হয়। দুঃখজনকভাবে এগুলোর দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের জন্য কোনো কাজ কিংবা পরিকল্পনা করেন না, যাঁদের করার কথা।
সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানী ঢাকার মৌচাকে ভবন থেকে ইট পড়ে এক নারীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। যদিও তদন্ত চলছে, তবুও একথা অকপটেই বলা যায় যে ওই জায়গায় কোনো ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। কর্মচারীদের অসতর্কতা এবং ভবনমালিকের ভবন নির্মাণের সময় নিরাপত্তাহীনতার জন্যই ঘটে গেল এমন মর্মান্তিক ঘটনা।
প্রশ্ন হলো এমন ঘটনা কী এই প্রথম? গুগলে শুধু ‘ইট পড়ে মৃত্যু’ এতটুকু লিখলে চলে আসবে ভুরি ভুরি খবর। যেগুলো এক দিনের ঘটনা না। বছরের পর বছরের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর শিরোনামের একত্রীকরণ।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ (রাজউক) সংশ্লিষ্টদের যে দায়িত্ব, সেই দায়িত্ব পালনে তাদের অবহেলা তো নতুন নয়। দেখা যায় খোলামেলা পরিবেশে উঁচু ভবন তৈরি হচ্ছে। অথচ খুব বেশি নিরাপত্তাবেষ্টনী নেই। যার জন্য ঘটে যাচ্ছে একই ঘটনা প্রতিনিয়ত। রাজউকের নিয়ম অনুযায়ী রাস্তার পাশে কোনো প্রজেক্ট করতে হলে যেখানে মানুষের চলাচল সেখানে ৫০-৬০ শতাংশ জায়গা ছেড়ে দিয়ে করতে হবে। আবার ফুটপাতের ওপর ভবন বা ভবনের নিরাপত্তাসামগ্রীর কোনোকিছু চলে আসতেও পারবে না। কিন্তু এই খবর কি আদৌ রাখছে রাজউক কর্তৃপক্ষ?
প্রায়ই দেখা যায়, কোনো নিরাপত্তাবেষ্টনি ছাড়াই দিনে-দুপুরে নানা কিছু নির্মাণাধীন ভবনের ওপরে তোলা হয়। কাজ করা হয় সামান্য নিরাপত্তা নিয়েই। যেগুলো দেখার মনে হয়, কেউই নেই। এর ফলে সামান্য একটু অসতর্কতার জন্যই ঘটে যেতে পারে কত ভয়াবহ ঘটনা! ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর সাক্ষী হচ্ছি প্রতিনিয়ত আমরা। অথচ সবাই সবার দায়িত্বটুকু যথাযথভাবে পালন করলে এমন মৃত্যুর সংবাদ আমাদের প্রতিনিয়ত শুনতে হতো না নিশ্চয়ই।
শত শত উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় কি হবে যদি, নাগরিকদের ফুটপাতে হাঁটাচলায় ও নিরাপত্তা না থাকে! অনতিবিলম্ব এমন ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত হোক। এবং এর জন্য যেসব পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি, সেগুলো অতি দ্রুত কার্যকর করা হোক। রাজউকের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করুক কর্মকর্তারা। ভবন নির্মাণের সময় মালিক পক্ষকে যথাযথভাবে নিরাপত্তা দিয়ে ভবন নির্মাণের জন্য বাধ্য করুক। শহরটা সবার জন্য নিরাপদ হোক, এটাই একজন নগরবাসী হিসেবে প্রত্যাশা।
লেখক: মো. সায়েদ আফ্রিদী, প্রাক্তন শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ