একাত্তরে বাংলাদেশে গণহত্যার ন্যায়বিচার ও স্বীকৃতির জন্য বিশ্বের বিশিষ্টজনদের জোরালো আহ্বান
১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের সংঘটিত বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার ও স্বীকৃতির জন্য জোরালো আহ্বান জানালেন বিশ্বের বিশিষ্টজনেরা। গতকাল শনিবার বিকেল ৫টায় মুক্ত আসর ও বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াডের উদ্যোগে ‘জেনোসাইড ’৭১’–এর আয়োজনে ‘বাংলাদেশের গণহত্যার শিকার ন্যায়বিচার ও ৫৩ বছর এবং গণনা’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে বিশিষ্টজনেরা এ আহ্বান জানান।
লেখক ও গবেষক প্রিয়জিৎ দেব সরকারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। শুরুতে প্রিয়জিৎ দেব সরকার বলেন, ‘৫৩ বছর আগে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অপারেশন সার্চলাইটের নামে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্মম হত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণ করেন। বাংলাদেশে তৎকালীন সেরা বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক হত্যার শিকার হন। পাকিস্তানের দোসরদের সহযোগিতায় তারা এই গণহত্যা চালায়। এতে দুই–চার লাখ নারী ও শিশু শিকার হয়। জেনোসাইড ’৭১–এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশিষ্টজনদের মতামতসহ গণহত্যার বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরার আমরা চেষ্টা করছি।’
১৯৭১ সালের ২৫ ও ২৬ মার্চ ঢাকায় ছিলেন ব্রিটিশ বুদ্ধিজীবী ও মানবাধিকারকর্মী ইয়াং মার্টিন। তিনি সেই সময়ের স্মৃতি স্মরণ করে বলেন, ঢাকার গুলশান এলাকায় ছাদের ওপর দাঁড়িয়ে শুনতে পান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোলগুলির শব্দ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ইকবাল হলের কথা তিনি উল্লেখ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাবিদ রবার্ট বব ল্যান্সিয়া বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির ওপর জোরদার করার আহ্বান জানান।
ফ্রান্সের আইডিয়াল ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট স্টিফেন মিচট বলেন, ‘১৯৭১ সালের বাংলাদেশে যা ঘটেছিল তা আন্তর্জাতিক চেতনার একটি গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিল। ভয়াবহ গণহত্যার শিকার হয়েছে। আন্তর্জাতিক এই ওয়েবিনের মাধ্যমে সচেতনা সৃষ্টির অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের গণহত্যার বিভিন্ন বিষয় প্রচারিত হচ্ছে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এই আয়োজন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের জেনোসাইডের স্বীকৃতির জন্য প্রচারের কাজ করব।’
পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইনভেশন চিফ ও ডাইরেক্ট জেনারেল সৈয়দ মুনতাসির মামুন প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য এবং বাস্তব প্রমাণ সংরক্ষণের গুরুত্বের ওপর জোর দেন।
লেখক, গবেষক ও শিল্পী আইরিন খান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপেক্ষিত অভিজ্ঞতার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, তাদের অভিজ্ঞতাগুলো তুলে ধরেন।
মুক্ত আসরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ বলেন, ‘বাংলাদেশের গণহত্যা ছিল ভয়াবহ। খুব খারাপ লাগে, পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম গণহত্যাটির আজও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলেনি। এ নিয়ে অনেকেই কাজ করছেন, গবেষণা করেছেন; কিন্তু সেটা হয়তো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যাচ্ছে না। এই লক্ষ্যে আমরা ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর কাজ শুরু করি। ৬৪ জেলার গণহত্যা, গণকবর ও বধ্যভূমিগুলোকে মোটাদাগে বের করার চেষ্টা করি। সেগুলো নিয়ে ২০১৮ সালে একটি জার্নাল প্রকাশ করি। এরপর আমাদের মনে হয়েছে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতির জন্য আন্তর্জাতিক বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মতামত নেওয়া জরুরি। সেই লক্ষ্যে আমরা আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারগুলো আয়োজন করছি। আমরা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছি, genocide71.org নামে একটি ডিজিটাল আর্কাইভ রয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের গণহত্যার সব তথ্য বহু ভাষায় তুলে ধরা হবে।’ তিনি বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্য সবাই মিলে একত্রে কাজ করা আহ্বান জানান।
আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে সহযোগিতা ছিল স্বপ্ন ’৭১ প্রকাশন, বইবিষয়ক পত্রিকা বইচারিতা, বাংলাদেশ গবেণা সংসদ, উদার আকাশ ও এনএল২৪।