৪৭তম বিসিএস পরীক্ষা: পিএসসির অবস্থান নিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের হতাশা
২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মূলত ছিল শিক্ষিত তরুণদের চাকরিসংক্রান্ত অসন্তোষ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা একটি আন্দোলন। আন্দোলনটি ব্যাপক আকার ধারণ করলে তৎকালীন সরকারের পতন ঘটে এবং ছাত্র ও তরুণ সমাজের সমর্থনে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম দায়িত্ব হওয়া উচিত ছিল তরুণদের কর্মসংস্থান ও নিয়োগসংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করা, কিন্তু দুঃখজনকভাবে সরকার সে বিষয়ে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। বরং এই সময়ে গঠিত বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) নানা কর্মকাণ্ডও চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে গভীর হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রথম তারিখ নির্ধারিত ছিল ২৭ জুন ২০২৫, পরে তা পিছিয়ে ৮ আগস্ট করা হয় এবং সর্বশেষ তা আরও এক দফা পিছিয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয় ২৮ সেপ্টেম্বর, যেখানে ১০ হাজার ৬৪৪ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়। এরপর ২৬ অক্টোবর পিএসসি ঘোষণা করে যে ৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শুরু হবে ২৯ নভেম্বর ২০২৫ থেকে। এরই মধ্যে ৪৯তম বিশেষ বিসিএস অনুষ্ঠিত হয় ১০ অক্টোবর ২০২৫।
এমন বাস্তবতায় নতুন লিখিত পরীক্ষার্থীদের জন্য মাত্র ৪৫ থেকে ৪৬ দিনের মধ্যে বিসিএস লিখিত পরীক্ষার বিশাল সিলেবাস শেষ করে প্রস্তুতি নেওয়া প্রায় অসম্ভবের কাছাকাছি। আগের বিসিএসগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রার্থীরা সাধারণত ছয় থেকে সাত মাস সময় পেয়েছেন লিখিত প্রস্তুতির জন্য। তাই ৪৭তম বিসিএস প্রার্থীরা বারবার যৌক্তিকভাবে পরীক্ষা পেছানোর দাবি জানালেও পিএসসি সেই দাবিতে কর্ণপাত করছে না। বরং ৩ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষার্থীরা যখন পিএসসি কার্যালয়ে তাঁদের দাবির পক্ষে অবস্থান নেন, তখন পুলিশ তাঁদের ওপর লাঠিপেটা করে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অমানবিক।
পিএসসি একদিকে তারা বলছে বিসিএসের জট কমাতে হবে, অন্যদিকে মাত্র ৬৮৩টি পদের জন্য ৪৯তম বিশেষ বিসিএস আয়োজন করেছে, যা সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় ছিল। এই পদগুলো সহজেই ৪৪তম, ৪৫তম বা ৪৬তম বিসিএসের সঙ্গে সংযুক্ত করা যেত, যেমন আগে করা হতো।
পিএসসি বলছে, বিসিএস পরীক্ষার জট দ্রুত নিরসনের জন্য দ্রুত পরীক্ষা নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু ৪৯তম বিশেষ বিসিএস আয়োজনের মাধ্যমে তারা বরং কৃত্রিমভাবে নতুন জট তৈরি করেছে। এখন আবার এক বছরের মধ্যে বিসিএস সম্পন্ন করার লক্ষ্যে তাড়াহুড়া করে ৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ শুরু করেছে।
আমরা অবশ্যই চাই বছরে একটি বিসিএস সম্পন্ন হোক, কিন্তু তা হতে হবে পরিকল্পিত ও বাস্তবসম্মতভাবে। অযৌক্তিক তাড়াহুড়া না করে ৪৭তম বিসিএসের প্রার্থীদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতির সময় দেওয়া উচিত।
আমরা আশাবাদী, পিএসসি শুভবুদ্ধির পরিচয় দিয়ে পরীক্ষার্থীদের যৌক্তিক সময় প্রদান করবে এবং লিখিত পরীক্ষার তারিখ পেছানোর সিদ্ধান্ত নেবে।
লেখক: নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রার্থী, ৪৭তম লিখিত পরীক্ষার্থী
নাগরিক সংবাদে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]