আন্তর্জাতিক অণুজীব দিবস আজ: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

ছবি: প্রথম আলো

আজ ১৭ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অণুজীব দিবস।

‘জীবাণু’ শব্দটা খুব ছোট থেকেই শুনে আসছি। ছোটবেলায় জ্বর-ঠান্ডা কিংবা হলে যখন চিকিৎসকের কাছে যেতাম, তিনি বলতেন ভাইরাল ফিভার। এসব ওষুধ খেলে ঠিক হয়ে যাবে। প্রশ্ন করতাম, ভাইরাল বিষয়টি কী! ডাক্তারকাকু খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে দিতেন, ভাইরাস হচ্ছে ছোট্ট একটি জীবাণু, যা কিনা দেখা যায় না, বোঝা যায় না; কিন্তু আমাদের শরীরে জ্বর-ঠান্ডা হলে এদের উপস্থিতি বাড়ে। আবার এদের দ্বারাই রোগের টিকা তৈরি করা হয়। ভাইরাসের মতো আরও অনেক জীবাণু আছে, এদের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া অন্যতম।

মূলত জীবাণু শব্দটার সঙ্গে সেখান থেকেই হাতেখড়ি। জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করেনি, এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। কারণ, জীবাণুই সব রোগ তৈরি করে, আবার সেই জীবাণু দিয়েই তৈরি করা হয় প্রতিষেধক। ১০০ ভাগের মধ্য মাত্র ৫ ভাগ জীবাণু আমাদের দেহে রোগ সৃষ্টি করে। তার মানে, ভালো জীবাণুর সংখ্যাই বেশি। আর সেই সম্যক জীবাণু নিয়েই মাইক্রোবায়োলজি বিষয়টি পরিবেষ্টিত। জীবাণুর বেসিক বিষয় থেকে শুরু করে এর চালচলন, গতিপথ, পরিবর্তনের ধারা; রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর গতিপথ এবং এদের বিনাশকারী ক্ষমতার তথ্য-উপাত্ত এবং উপায় খুঁজে বের করা, রোগ সারানোর জন্য টিকা তৈরির পথ ইত্যাদি বহু জীবনভিত্তিক কাজ করে যাচ্ছেন অণুজীববিজ্ঞানীরা।

মনে পড়ে সেই দিনের কথা। ২০২০ সালের ৮ মার্চ। করোনা সংক্রমণের খবর শুনে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে পুরো জাতি। ধুলায় মাখা হ্যান্ড স্যানিটাইজারগুলো যেন কি এক জাদুতে সব চকচক হয়ে উঠল দোকানগুলোতে। দুই দিন যেতে না যেতেই সেগুলো আবার নাগালের বাইরেও যেতে শুরু করল। কি এক আজব কারবার! সারা বছর যেখানে বেশির ভাগ মানুষকে মাস্ক পরানো যায়নি, সেখানে এক নিমেষেই দ্বিগুণ-তিন গুণ দাম দিয়ে কিনেও পরতে শুরু করল। এরপরের দিনগুলোয় যা হলো, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

করোনাভাইরাস আমাদের কী শিক্ষা দিয়ে গেল। এবার সে বিষয়ে একটু স্মৃতির রোমন্থন করা যাক।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে আমাদের বাইরে চলাফেরা নিয়ন্ত্রিত হয়ে গেল। ‘বিধিনিষেধ’ নামে শব্দটা আমাদের জীবনের অভিধানে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিল। বন্দী পাখির মতো জীবনের চলাচল শুরু হলো। সেটাও কি সবাই আমরা মেনেছি? চোর-পুলিশ খেলা তো আর কম খেলিনি। একবারও ভাবিনি, বিধিনিষেধ মেনে চললে লাভ কার আর ক্ষতিই–বা কার? এ খেলা আমাদের জীবনের সঙ্গেই খেলেছি। বিধিনিষেধে লাভ-ক্ষতির হিসাব যা–ই হোক না কেন, ঘরমুখী করাতে আমাদের ঘরের মানুষদের সারা দিনের অক্লান্ত শ্রমের কিছুটা অংশীদারত্ব অনেকেই হতে পেরেছি। আবার এর বিপরীতও অনেকের জীবনে ঘটেছে। সংসারে অশান্তিও অনেক নাকি বেড়ে গিয়েছিল। সে যা–ই হোক, পিপিই পরে রাস্তায় বের হওয়া মানুষদের সেই সব ছবি হয়তো স্মৃতির পাতায় লেখা রবে সারাজীবন। এমন সময় আর না–আসুক, তবে মাস্ক পরা বা বারবার হাত ধোয়ার ফলে রোগজীবাণুর আক্রমণ অনেকটাই যে কমে গিয়েছিল, সেটা কিন্তু মানতেই হবে।

লেখক

করোনাভাইরাসের কারণে সামাজিক অবক্ষয় যে চরম হয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কোভিডে আক্রান্ত মা–বাবাকে ছুড়ে ফেলে দেওয়ার ঘটনাও কিন্তু কম ঘটেনি। কোনো মা–বাবা তাঁর সন্তানকে এমনভাবে দূরে ঠেলে দিতে পারতেন কি না, তা নিতান্তই খুঁজে পাওয়ার বিষয়। দুঃখের বিষয় যে এই সামাজিক অবক্ষয়গুলো কিন্তু শিক্ষিত মানুষের মধ্যেই বেশি ঘটেছে। আবার অনেক সন্তানই ভয়কে দূরে ঠেলে করোনায় আক্রান্ত বাবা-মায়ের পাশে থেকেছে।

জাতির সব ক্রান্তিকালে জরুরি সেবা দিয়ে যাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মী, প্রশাসন, ব্যাংকার, সাংবাদিক, ওষুধ-খাদ্যসহ বিভিন্ন শিল্পের সঙ্গে জড়িত উৎপাদন ও বিপণন কর্মকর্তারা। দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন ফার্মাসিস্ট, মাইক্রোবায়োলজিস্ট, কেমিস্টসহ অনেক নিবেদিতপ্রাণ। ওষুধশিল্পসহ ফুড-বেভারেজ প্রতিষ্ঠানে ফার্মাসিস্ট, কেমিস্টদের সঙ্গে মাইক্রোবায়োলজিস্টরাও গুণগত মান নির্ণয় এবং নিশ্চিতকরণে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া অন্যান্য গবেষণাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।

দেশের এই ক্রান্তিকালে মাইক্রোবায়োলজিস্টদের ভূমিকা অপরিসীম। কোভিড মহামারি সময়ে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে জীবন বাজি রেখে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন শত শত অনুজীববিজ্ঞানী। তারা দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণে পিসিআর মেশিন চালনাসহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে মাইক্রোবায়োলজিস্টদের ভূমিকা অপরিসীম। তাঁরা কাজ করে যাচ্ছেন মাইক্রোবায়োলজি ল্যাব, প্রোডাকশন, কিউএ, কিউসিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে।

কী কাজ করেন মাইক্রোবায়োলজিস্টরা

ওষুধ তৈরির মূল উপাদান হলো পানি। সেই পানি আসলেই ওষুধ তৈরিতে উপযুক্ত কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা হয় নিয়মিত। কতগুলো ব্যাকটেরিয়া আছে, কোনো প্যাথজেনিক জীবাণু আছে কি না, সেটাও খুব ভালোভাবে দেখা হয়।

বড়ি, ক্যাপসুল, সিরাপে কতগুলো ব্যাকটেরিয়া-ছত্রাক আছে, সেটা বাজারজাতকরণের আগে প্রতিটি ব্যাচ পরীক্ষা করে দেখা হয়। ইনজেকশন, চোখের ড্রপ, মলমে জীবাণু আছে কি না, এন্ডোটক্সিন লিমিটের মধ্য আছে কি না, সেটাও প্রতিটি ব্যাচ পরীক্ষা করে দেখা হয়। এ ছাড়া ওষুধ বানানোর এরিয়াতে ধুলাকণার লিমিট, অপারেটরদের স্বাস্থ্যবিধি, প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকেন।

এমন কোনো শিক্ষার্থী গ্রুপ পাওয়া খুব দায়, যাঁরা কি না সরকারি চাকরি পেতে চান না। সবাই চান একটি স্থায়ী চাকরির সুবাদে জনগণের সেবা করতে। সেটা খুব স্বাভাবিক ও এটাই হয়তো হওয়া উচিত। কিন্তু সরকারি চাকরির সংখ্যা তুলনায় কম হওয়ায় সবার চাকরি পাওয়া প্রায় অসম্ভব। তাই হয়তো সরকারি চাকরিকে সোনার হরিণ বলা হয়ে থাকে। সে যা–ই হোক, তাহলে অন্যরা কোথায় যাবেন? বিশেষ করে যাঁরা বিজ্ঞানভিত্তিক কিছু বিষয়ে (যেমন ফার্মাসিস্ট, মাইক্রোবায়োলজিস্ট, বায়োকেমিস্ট, কেমিস্ট ইত্যাদি) অনেক অনেক পরিশ্রম করে তাঁর অনার্স বা মাস্টার্স শেষ করছেন! তাহলে তাঁদের সেকেন্ড চয়েস কি ফার্মাসিউটিক্যালস?

যেখানে ৯৮ শতাংশ ওষুধ দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে, সেখানে কেন সেকেন্ড চয়েস, সেটা না হয় গবেষণা নাই করলাম। তবে এখন পর্যন্ত যাঁরা ফার্মা লিডার, তাঁদের অনেকেরই কিন্তু ফার্স্ট চয়েস ছিল ফার্মাসিউটিক্যালস, না হলে কীভাবে রপ্তানির সিংহভাগ ওষুধ আর কেনই–বা ৯৮ শতাংশ চাহিদা মেটাবে বাংলাদেশের অগণিত ফার্মাসিস্ট, মাইক্রোবায়োলজিস্ট, বায়োকেমিস্ট, কেমিস্ট ইত্যাদি।

নাগরিক সংবাদে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

সম্ভাবনার অসীম দুয়ার বাংলাদেশের ওষুধশিল্প। এই অবস্থায় লিডার তৈরি করা একদম বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছে। মনের জোরে হয়তো কোনোমতে চাকরি করা যায়, কিন্তু মনোনিবেশ না থাকলে একজন আরঅ্যান্ডডি (R&D) ফার্মাসিস্ট ঠিকঠাক নতুন প্রোডাক্টের ফর্মুলেশন করবেন, কীভাবে আরঅ্যান্ডডি কেমিস্ট সঠিকভাবে সেই ফর্মুলেশনের গুণাগুণ নির্ণয় করবেন, কীভাবে একজন প্রোডাকশন ফার্মাসিস্ট ভালো প্রোডাক্ট বানাবেন, কীভাবে একজন কিউএ ফার্মাসিস্ট ওষুধের মান যাচাই করবেন, আর কীভাবেই–বা কিউসি ফার্মাসিস্ট বা কেমিস্ট অথবা একজন মাইক্রোবায়োলজিস্ট ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ করবেন।

টিকা বা করোনা দেখে ভয় পাওয়া বা না–পাওয়ায় কিছু আসে–যায় না, আগের মতোই মাইক্রোবায়োলজিস্টদের এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা আর কাজের সুযোগ দিতে হবে। আমার যতটুকু জানা, সরকারি-বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অ্যালামনাইসহ বিভিন্ন চাকরি রিলেটেড ফোরাম রয়েছে। বাংলাদেশ সোসাইটি অব মাইক্রোবায়োলজিস্ট (বিএসএম), আইএসবিএম, ডিইউএমএএ, ডিইউএমডিএএ, জিএমএস ইত্যাদি সংগঠন দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশে কাজ করে যাচ্ছে, যেমন ছাত্রবৃত্তি, ইন্টারেস্ট ফ্রি লোন, স্পনসরশিপ, ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং আর চাকরির সুযোগ দানে। সবার একটাই উদ্দেশ্য, শিক্ষার্থী আর অ্যালামনাইদের মেলবন্ধন তৈরি করা, পাশে দাঁড়ানো আর একটি গাইড হিসেবে কাজ করা। খুব সাবলীলভাবেই সব বিশ্ববিদ্যালয় আর সংগঠনগুলো নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে।

ফার্মেসি কাউন্সিল অভূতপূর্ব কাজ করে যাচ্ছে। নিবন্ধনসহ একটি সম্পূরক গাইডলাইন হিসেবে কাজ করছে সব স্তরের ফার্মাসিস্টদের জন্য। মাথার ওপর একটি ছাতা হিসেবে সব সময়েই কাজ করে যাচ্ছে। সময়ের দাবি যেমন হসপিটাল ফার্মাসিস্ট, মডেল ফার্মাসিতে বাধ্যতামূলক ফার্মাসিস্ট নিয়োগ ইত্যাদি দেশের জন্য অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে এবং তা সবই ধীরে ধীরে শুরু হচ্ছে, এটি খুবই আশাবাঞ্জক। সম্প্রতি স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবে এসব বিষয় খুবই সুন্দরভাবে আসছে। মাইক্রোবায়োলজিস্টদের ভূমিকা নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে, তা ছাড়া কীভাবে তাঁদের গুরুত্ব প্রকাশ পাবে। একমাত্র ডিইউএমএম নামে একটি মাইক্রোবায়োলজি সংগঠনের নাম দেখা গেছে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের লিস্টে। হয়তো অন্যান্য সংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয় কাজ করে যাচ্ছে। সবকিছু যে প্রকাশিত হতেই হবে, তেমন কোনো কথা নয়। ধীরে ধীরেই অগ্রগামী হবে।

পরিশেষে, সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে প্রতিবছর শত শত মাইক্রোবায়োলজিস্ট পাস করে বের হচ্ছেন। কেউবা সরকারি চাকরি, কেউবা বেসরকারি চাকরি করছেন আর বেশির ভাগ তো দেশের বাইরেই পা রাখছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে একজন মাইক্রোবায়োলজিস্ট সম্পূর্ণ অসহায় হয়ে যান কী করবেন আর কী করা উচিত, এই ভেবে। কারণ, বাংলাদেশের চাকরি–সম্পর্কিত কোনো কাউন্সেলিং বডি বা সংগঠন এখন পর্যন্ত তেমনভাবে আলোর মুখ মাইক্রোবায়োলজিস্টদের দেখাতে পারেননি। যা হয় সেটা শুধুই সিনিয়র বড় ভাই বা আপুদের ধরে কিংবা নিজের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়। কারণ, একজন মাইক্রোবায়োলজিস্ট যোগ্যতার পরীক্ষা দিয়েই এত দূর এসেছেন। সবাই যোগ্য। শুধু যোগ্য গাইডলাইনের অভাবে পথ হারিয়ে ফেলছেন। সরকারি-বেসরকারিভাবে কিছু একটা না থাকলে প্রতিনিয়ত হোঁচট খেতেই হবে। তাই মাইক্রোবায়োলজি কাউন্সিল দরকার আছে কি না, সেটা নিয়ে ভাবার সময় চলে যাচ্ছে কিন্তু। আজ ভাবলে, শুরু হবে আরও ১০ বছর পরে, কাল ভাবলে সঙ্গে আরও কয়েক বছর! এভাবেই কি চলবে!

একটু সুনজর, একটু আলোচনা আর একটু উদ্যোগেই মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা হয়ে উঠবে মানুষ তথা দেশের সেবা করার একজন দক্ষ কারিগর। আমাদের এই বৈষম্যহীন বাংলাদেশে নতুন ভর্তি হওয়া মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের কোনো শিক্ষার্থী তাঁর শিক্ষক বা সিনিয়র অ্যালামনাইদের এবং এই বৈষম্য নিয়ে কথা বলার সুযোগ পাবেন না। সরকারি-বেসরকারিভাবে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে ফার্মা সেক্টরে অণুজীববিজ্ঞানীদের ভূমিকা আরও বাড়াতে হবে। এ জন্য দরকার অনুপ্রেরণা, উৎসাহ আর মনোবল।

*লেখক: মনোজিৎ কুমার রায়, মাইক্রোবায়োলজিস্ট