বৎস, ফল নিয়ে হতাশ, শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় দেরিতেই আসে
চলতি বছরের (২০২৩) এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে গতকাল রোববার। প্রতিবছর পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর দেখা যায় হাজারো শিক্ষার্থী জিপিএ–৫ পেয়েছেন। এ আনন্দ তাঁরা নেচেগেয়ে উদ্যাপন করেন। আবার অনেকে কাঙ্ক্ষিত ফল না পেয়ে মন খারাপ করেন।
পরীক্ষায় বন্ধুদের মতো চমৎকার ফলাফল করতে অনেকেই পারোনি। তাই মনটা আজ মেঘলা আকাশের মতো অন্ধকার হয়ে গেছে, তাই না? চারদিকে পরিচিত মানুষের সামনে যেতেও দ্বিধা হচ্ছে। দরজা বন্ধ করে একাকী হতাশার সাগরে হারিয়ে যাচ্ছো। আমি জানি এই মুহূর্তে পুরো পৃথিবীটা তোমার বিরুদ্ধে মনে হচ্ছে এবং নিজেকে ব্যর্থ ভাবছো। চলো, তোমাকে একটি বাস্তব গল্প শোনাই।
আমার কলেজের বড় ভাই নাবিল হাসান। কলেজে খুবই ভালো শিক্ষার্থী ছিলেন এবং পরীক্ষাও ভালোই দিয়েছিলেন। কিন্তু যেদিন ফল প্রকাশ হয়েছিল, সেদিন আকাশটা ওনার মাথার ওপর ভেঙে পড়েছিল। এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত! ওনার অন্য বন্ধুরা জিপিএ–৫ পেলেও উনি ‘এ’ গ্রেড পান। অনেকে ওনাকে নিয়ে তখন সমালোচনা করতে এক চুলও ছাড় দেননি। অনেকে তো ধরেই নিয়েছিলেন নাবিল ‘এ প্লাস’ পায়নি মানে ভবিষ্যৎ অমাবস্যা রাতের মতো অন্ধকার। তবে এর পরের গল্পটা অন্যদিকে মোড় নেয়। ওনার ভেতরটা ছিল আগ্নেয়গিরির মতো উত্তপ্ত, যা যেকোনো ব্যর্থতাকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে সফলতার বিনির্মাণ শুরু করার জন্য যথেষ্ট। সবাই যখন ‘এ প্লাস’ পাওয়ার বাঁধভাঙা আনন্দে মেতে ওঠেন, তখন নাবিল ভাই অঝোরে কান্না করে হতাশাকে চোখের জলের সঙ্গে ভাসিয়ে দেন। নিজের সঙ্গে নিজের চ্যালেঞ্জ নিয়ে রাত–দিন এক করে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার জন্য পড়াশোনা করেন। জেদ করে মারাত্মকভাবে ২০ গুণ বেশি পড়ে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব বলে পাগলামি শুরু করেন। ফলে ভর্তি পরীক্ষায় দেশের লাখো শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের জায়গা করে নেন এ জেদি ছেলেটা। এবার বলো, তিন মাস আগে যে ছেলেটা এ প্লাস না পাওয়ায় সবাই তাঁকে ব্যর্থ ভেবেছিলেন, তিনি কি আসলেই ব্যর্থ? নিশ্চয়ই তিনি এখন সফলতার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
মনে রেখো, দুর্বল ঘূর্ণিঝড় সহজেই উপকূলে আছড়ে পড়ে। কিন্তু শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় প্রথমে উৎপত্তিস্থলে দীর্ঘ সময় নিয়ে প্রচুর শক্তি সঞ্চয় করে। তারপর কয়েকটি দেশের উপকূল কাঁপিয়ে সর্বোচ্চ গতিবেগে হাজার মাইল অতিক্রম করে। তাই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের মতো সময় নিয়ে নিজেকে তৈরি করো। তারপর দুর্দান্ত সাফল্যে চারপাশে কাঁপুনি সৃষ্টি করো।
চলো এবার এক পণ্ডিতের গল্প শোনাই। স্কুলজীবনে একজন পণ্ডিত ক্লাসে কখনোই পড়া পারতেন না।
একদিন তাঁর শিক্ষক তাঁকে চরম অপমান করে ক্লাস থেকে বের করে দেন। তারপর তিনি নদীর পাড় দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি ফিরছিলেন। স্কুল থেকে বাড়ি বেশ দূরে ছিল, তাই ক্লান্ত হয়ে পাথরের একটি ঘাটে খানিকটা বসে বিশ্রাম নেন। হঠাৎ তিনি দেখতে পেলেন গ্রামের নারীরা মাটির কলস দিয়ে পানি নেওয়ার সময় যেখানে কলস রাখেন, সে স্থানটি ক্ষয় হয়ে গর্তে রূপ ধারণ করেছে, যা তাঁকে ভীষণ ভাবায়। তখন তিনি ভাবতে লাগলেন মাটির কলসের ঘষায় যদি পাথর ক্ষয় হতে পারে, তাহলে আমি চেষ্টা করলে আমার মেধা কেন ধারালো হবে না? তারপর তিনি নিরলস পরিশ্রম করে মাসখানেক পর ক্লাসে যান, তখনই ঘটে ম্যাজিক! তাঁর সেই শিক্ষক তাঁকে পড়া জিজ্ঞাসা করে অবাক হলেন। তাঁকে বইয়ের যেখান থেকেই প্রশ্ন করা হয়, তিনি সেখানে থেকেই নির্বিঘ্নে জবাব দিতে থাকেন। তারপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি হয়ে ওঠেন সে সময়ের প্রথিতযশা একজন।
তোমাদের অনেকে আজ হয়তো ফলাফল কাঙ্ক্ষিত না হওয়ায় মন খারাপ করছো কিংবা কান্না করছো।
আমি তোমাকে বলছি, চোখের পানি মুছো আর নিজের সঙ্গে প্রতিশ্রুতি দাও যে আগামী তিন মাসে নিজেকে বদলে দেবে। তাই এখন থেকেই এমন কিছু করো, আজ যাঁরা ভাবছেন তুমি জীবনে কিছুই করতে পারবে না, তাঁদের ধারণা যেন ধূলিসাৎ হয়ে যায়। আজ যাঁরা কাঙ্ক্ষিত ফল করোনি, তাঁদের মেডিকেল বা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কারণ, জীবনে ভালো কিছু করতে জেদ দরকার, যা তোমাদের মধ্যে তৈরি হয়ে গেছে। প্রতিবছর হাজারো জিপিএ–৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী সুযোগ পান না। আবার তুলনামূলক কম জিপিএ–প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা মেধাতালিকায় ওপরের দিকে থাকেন। তাই আর দেরি কেন পাঞ্জেরি, মাথায় ঢোকাও, তিন ডিজিটের জিপিএ কখনোই তোমার সমুদ্রের মতো অপার সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের গতিপথ নির্ধারণ করতে পারবে না। চ্যালেঞ্জ নাও, আত্মবিশ্বাস রাখো এবং পরিশ্রম করো। মনে রেখো দিন শেষে সাফল্য আসবেই।
লেখক: মুহম্মদ সজীব প্রধান, শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ।