কালো বিড়াল
আজ রুমির মন খারাপ। অবশ্য তার মন ভালো থাকে কখন, সেটাই বুঝে ওঠা মুশকিল। বিচিত্র কারণে তার মন খারাপ থাকে। যেমন এখন তার মন খারাপ কিছুক্ষণ আগে সে বাসা থেকে বের হতে যাবে, তখনই তার সামনে একটি কালো বিড়াল পড়েছিল। মাত্র একটা ইন্টারভিউ দিতে যাবে এখন কালো বিড়াল তার সামনে কেন আসতে হবে? সাধারণত বিড়াল সে পছন্দ করে না। কিন্তু বিড়ালটিকে দেখে তার মায়া লাগল। দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে অনেক দিন কোনো খাওয়াদাওয়া করেনি।
রুমি ঘড়ি দেখল, সকাল ১০টা। সে হিসাব করল তার ইন্টারভিউ বেলা ১১টায়। আর তার বাসা থেকে অফিসে যেতে ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট লাগবে। ভাবল বিড়ালটিকে কিছু খাবার দিয়ে গেলে কেমন হয়? রুমির মনে হলো ফ্ল্যাটে সে একাই থাকে। তার ফ্রিজেও দীর্ঘদিন খাবার রাখা হয় না। চাকরির খোঁজে ভবঘুরে জীবন যাচ্ছে গত কয়েক মাস। বাইরে থেকেই খেয়ে আসে। প্রায় সময় শুধু চা-নাশতা করে রাত কাটিয়ে দেয়। আগের চাকরিটা চলে যাওয়ার পর রাত্রি তার বাবার বাসায় চলে গেছে। যাহোক, রাত্রির কথা মনে পড়াতে মন আরও খারাপ হয়ে গেল। সে বিড়ালটিকে বসে থাকার ইঙ্গিত করে বাসার নিচে নামল কিছু খাবার কেনার জন্য।
রুমি এক প্যাকেট কুকিজ আর দুধ কিনে নিল। ওপরে উঠে দেখল বিড়ালটি ঠিক আগের জায়গায়ই বসে আছে। বিড়ালটি সঙ্গে সঙ্গেই সব খেয়ে ফেলল। তার খুব খারাপ লাগল এই ভেবে যে সবাই কালো বিড়ালকে অশুভ ভেবে তাড়িয়ে দেওয়ার কারণেই এরা খুব কষ্টে থাকতে হয়। সে ভাবল কালো শুধু একটা রং–মাত্র, এতে শুভ–অশুভর কী থাকতে পারে? তার নিজেরই এখন নিজের ওপর মেজাজ খারাপ হতে লাগল। সে নিজেও ওই রকমই বিশ্বাস করত। এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ তার ইন্টারভিউয়ের কথা মনে হলো!
রুমি যখন অফিসে পৌঁছাল, তখন বেলা সাড়ে ১১টা। সে ওয়েটিং রুমে ঢোকার একটু পরেই ডাক পড়ল। অনেক ভালো ইন্টারভিউ দিল রুমি। তারা সঙ্গে সঙ্গেই তাকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার দিয়ে দিল। রুমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না যে তার চাকরিটা হয়ে গেছে। সে অফিস থেকে বের হয়ে রাত্রির জন্য অর্কিড কিনল। নীল অর্কিড রাত্রির খুব প্রিয়। অর্কিড হাতে রিকশায় চেপে রাত্রিদের বাসায় যাচ্ছে রুমি। আর মনে মনে ভাবছে, কালো বিড়াল কী তাহলে শুভ?