পুরান ঢাকার গলি-ঘুপচি

ইতিহাস ও ঐতিহ্যমণ্ডিত পুরান ঢাকাছবি: প্রথম আলো

‘অ্যাইশ সব্বনাশ! ইতা কিতা ক?’ হরমুজ ভাইয়ের মতো বুদ্ধিমান মানুষ আঁতকে ওঠেন। বিড়বিড় করে ‘হায় রসুলুল্লাহ! হায় আল্লাহ’ বলে বুকে থুতু দিচ্ছেন। উনার পাশে আমরা দুই ভাই বসে বাদাম খাচ্ছিলাম। উনার চমকে ওঠা ভয়ার্ত মুখ দেখে আমরা আনন্দে আটখানা। লালবাগ কেল্লার হাম্মামখানার পূর্বদিকের খোলা জায়গায় বসে পুরান ঢাকার এক ঐতিহাসিকের তথ্য-ভান্ডারে হরমুজ ভাই হাবুডুবু খাচ্ছেন।

হাম্মামখানার পূর্ব দিকেই মোঘল আমলের একটি বিশাল পুকুর। হরমুজ ভাইয়ের পিলে চমকে দিয়েছেন আমাদের পাশে বসে চা পানরত এক ঢাকাইয়া মুরব্বি। হরমুজ ভাই এই বিশাল পুকুরের পানি দেখে খুব খুশি। আমাদের প্রস্তাব দিয়েছেন আগামীকাল বেলা ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে এসে এখানে সাঁতার কাটবেন। এটা শুনে পার্শ্ববর্তী মুরব্বি এই পুকুর সম্বন্ধে যত রকম ভয়ঙ্কর ‘ঐতিহাসিক তথ্য’ হরমুজ ভাইকে দেওয়া যায়, উগড়ে দিলেন। ‘য়ুঁহ! সাহস কত্ত? ডেগে আর শিকলে যক্খন টাইনা লইয়া যাইব, তখখন কেঠায় বাচাইবো আপনেরে?’

এই পুকুরটি সম্বন্ধে আমরা ছোটবেলা থেকেই নানা রকম গল্প শুনে আসছি। কেউ কেউ বলে এখানে বিশাল আকারের শিকল আছে! গোসল করতে নামলে টান দিয়ে নিচে কোথাও নিয়ে যাবে, লাশ আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। রাতের বেলায় নাকি বড় বড় পিতলের ডেগ (পাতিল) ভেসে ওঠে! কি ভয়ংকর তথ্য! এর পিছনে অনেক মিথ জড়িয়ে আছে। আমরা আজিমপুর কলোনিতে থাকতাম। স্কুল কলেজের পড়াশোনা সেখানকার আশেপাশের প্রতিষ্ঠানেই। প্রায় প্রতিবছরই এই বিশাল পুকুরকে ঘিরে একটার পর একটা দুর্ঘটনা ও মৃত্যু একে দর্শনার্থীদের কাছে ভয়ঙ্কর এক দুঃস্বপ্ন হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।

ফাইল ছবি

হরমুজ ভাইকে আমাদের দাদি মাঝেমধ্যে আম-কাঁঠাল, চাল-শর্ষের তেল দিয়ে গ্রাম থেকে ঢাকায় পাঠান। সঙ্গে বোনাস হিসেবে থাকে দাদির হাতের ঝাল ঝাল তৈলাক্ত সুস্বাদু লাল হাঁসের মাংস বা মুরগির মাংসের তরকারি। প্রতিবারই অনেক কসরত করে দাদি তাঁকে ঢাকায় পাঠান। হরমুজ ভাই এর শর্ত একটাই, ‘বুবাই ডাহা যাওয়ার টাইম নাই, ধান রুয়াইতে হইব, দুই দিন পর জানামু। মামুরে কইবেন রেজ্জাক-শাবানার বই যেন দেহায়।’ আমার পরহেজগার দাদি বিরক্ত হলেও বাধ্য হয়ে একসময় আব্বার কাছে চিঠি দিয়ে হরমুজ ভাইয়ের শর্ত তুলে ধরেন।

এভাবেই মাঝেমাঝে একহারা গড়নের হরমুজ ভাইয়ের আগমন ঘটে আমাদের আজিমপুর কলোনির বাসায়। সন্ধ্যায় বিল্ডিংয়ের নিচ থেকে হরমুজ ভাইয়ের হাঁক-চিৎকার শুনলেই আমরা আনন্দে লাফিয়ে বলতাম, ‘হরমুজ ভাই, তরমুজ চাই।’ ফ্রেশ হওয়ার পর দাদির চিঠি আব্বার হাতে দিয়ে উনার আগমনের শর্তটি আব্বার কাছে পেশ করেন। আব্বা তথ্য মন্ত্রণালয়ে চাকরি করতেন। মাঝেমধ্যে বলাকা হলে সিনেমা দেখার পাস পেতেন। গত সেশনে হরমুজ ভাই ‘রাজ্জাক -শাবানা’র সিনেমার পরিবর্তে ‘ফারুক-ববিতা’র সিনেমা দেখে খুব একটা প্লিজড ছিলেন না। আমরা আলাদাভাবে হরমুজ ভাইকে ‘ওয়াসিম-জসীম’–এর সিনেমা দেখার জন্য প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করি। আমার মেজো খালার বাসা আজিমপুর কলোনির হোম ইকোনমিকস কলেজের উল্টা দিকের ভবনের চার তলায়। বারান্দা থেকে বলাকা হলের বিলবোর্ড দেখা যায়। গতকাল খালার বাসা থেকে দেখা বিলবোর্ডে ওয়াসিমের সাদা এবং জসীমের কালো ড্রেসের তলোয়ার ফাইটের বিজ্ঞাপনটি অনেক রসালোভাবে হরমুজ ভাইয়ের কাছে পেশ করি।

সিনেমা ছাড়াও হরমুজ ভাই চিড়িয়াখানা, জাদুঘর, লালবাগের কেল্লা এবং ঢাকার বিভিন্ন নামকরা স্থাপনায় যেতে চান। এর ধারাবাহিকতায় আজকে আমরা দুই ভাই ওনাকে লালবাগ কেল্লায় গাইড হিসেবে নিয়ে আসি। লালবাগ কেল্লা মসজিদ, পরিবিবির মাজার, হাম্মামখানা, তোরন, বুরুজ, হাতিশালা পরিদর্শন শেষে অনেক ঐতিহাসিক তথ্য হজম করে শেষ পর্যন্ত পুকুরপাড়ে বসেছেন। ইতিমধ্যে বুরুজের ভিতরে সুড়ঙ্গ, বিরাটকায় তলোয়ার, বিশাল পালঙ্ক ও হাম্মামখানার চাকচিক্য দেখে হরমুজ ভাই বিমোহিত। মুঘল আমলের মুদ্রা, শায়েস্তা খাঁর আমলের টাকায় আট মণ চাল প্রাপ্যতা দেখে এবং শুনে উনি খুব এক্সাইটেড। সুড়ঙ্গের সামনেও আরেকজন ঐতিহাসিক ‘অধ্যাপক ডক্টর দানি’ বিভিন্ন তথ্য পেশ করেন। এটা দিয়ে সোনারগাঁও, তুরাগ, এমনকি দিল্লির দরবারেও যাওয়া যায় শুনে হরমুজ ভাই আমাদের কানে কানে বললেন, ‘এডাইতো ভালা, পাসপুট-ভিসা ছাড়াই ইন্ডিয়া-পাকিস্তান যাওয়া যা।’

এরমধ্যেই উনি আদম ব্যাপারির চক্করে পড়ে ‘পাসপুট-ভিসা’র মাজেজা বুঝে গেছেন। শেষে এই সুড়ঙ্গে ঢুকলে কেউ ফেরত আসে না শুনে উনি দিল্লি যাওয়ার চিন্তা বাদ দেন।

উত্তর দিকের লালবাগ রোড, দক্ষিণ দিকের কাজী রিয়াজ উদ্দিন রোড, পুবদিকের শায়েস্তা খাঁ রোড আর পশ্চিম দিকের পুষ্পরাজ সাহা লেনের মাঝখানে এই ঐতিহাসিক কেল্লা। আশেপাশের পুরান ঢাকার প্রায় সব মানুষই এক-একজন ঐতিহাসিক ‘প্রফেসর ডক্টর দানি’। যে যার জীবনে শোনা এবং পড়া যতো রাজা-বাদশা, সম্রাট-জমিদার, নবাব আছে, তাদের কোনো না কোনোভাবে লালবাগ কেল্লায় টেনে নিয়ে আসেন। এতে করে দিনে দিনে একে ঘিরে অনেক নতুন নতুন তথ্য ও অপতথ্য জমে উঠেছে। আব্বা মাঝেমমধ্যে বলতেন, আমরা তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে সঠিক ইতিহাস বিভিন্ন চার্ট, বোর্ড এবং লিফলেটের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে জানানোর জন্য সুপারিশ করেছি।

বাসায় কোনো দুষ্কর্ম করে পালিয়ে থাকার একটা স্থান ছিল এই কেল্লা। কিন্তু পরপর বেশ কবার আম্মার পাঠানো কলোনির ‘বড় ভাই বাহিনী’র হাতে এই কেল্লা থেকে ধরা খাওয়ায় এখানে পালিয়ে থাকাটা সুবিধাজনক মনে হচ্ছিল না। তাই কেল্লার কাছে এসে কখনো কখনো আতসখানা লেন হয়ে জগন্নাথ সাহা রোড, রাজ নারায়ন ধর রোড হয়ে পুরান ঢাকার বিভিন্ন গলির মধ্যে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে আবিষ্কারের একটা নেশা তৈরি হয়। এ ভাবে শহিদনগর, পোস্তা এমনকি রহমতগঞ্জ পর্যন্ত পৌঁছে গেছি। কখনো কখনো পরিব্রাজক ইবনে বতুতার মতো কেল্লার পশ্চিম দিকে অভিযানে বেড়োতাম। মূলকথা মোল্লার দৌড় যেমন মসজিদ পর্যন্ত তেমনি আমাদের দৌড় ছিল লালবাগ কেল্লা পর্যন্ত। এটাই ছিল আমাদের জন্য ল্যান্ডমার্ক।

কখনো কখনো লালবাগ রোড ধরে পশ্চিমে মদিনা হোটেল, রহমতউল্লাহ হাই স্কুল হয়ে ১৮ শতকের খান মোহাম্মদ মসজিদ পর্যন্ত পৌঁছে গেছি। যতই গলিতে ঢুকতাম, ততই নেশার মতো আরও একটা গলিতে ঢুকে যেতাম। বেশ কিছুদিন এই গলি অভিযানের পর একটা জিনিস আবিষ্কার করলাম, পুরান ঢাকার গলির পর গলি পার হলে কোনো না কোনো বড় রাস্তা বা স্থাপনার কাছাকাছি পৌঁছানো সম্ভব। এক্ষেত্রে মনে সাহস ও ধৈর্য থাকতে হবে।

পুরান ঢাকার গলিগুলোর নাম যা–ই হোক, সব চেহারা-ছবি মোটামুটি একই রকম। যদি বেশ সকালে কোনো একটি গলিতে যাওয়া যায়, তবে দেখা যাবে ছোট ছোট চা-ডালপুরির দোকানের সামনে কোনো কিশোর বা প্রৌঢ় মানুষ হাতে মগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন বা ধোঁয়া ওঠা মগের গরম চা যেন ঠান্ডা না হয় পত্রিকার টুকরা কাগজ দিয়ে ঢেকে রাখতে রাখতে বাসায় যাচ্ছেন। অনেক বাসাতেই সকালে চা নাশতা এই দোকানগুলোর ডালপুরি-চায়ে হয়ে যায়। সেসময় পরোটা-ভাজির দোকান সাধারণত বড় রাস্তার মোড়ে দেখতে পাওয়া যেত। রাস্তাগুলো সরু। দুই দিকে সরু ড্রেনের পাশে পরিচ্ছন্নকর্মীরা ময়লা উঠিয়ে রেখে গেছে বা উঠাচ্ছে। রাস্তার মাঝ বরাবর সারমেয়র পুরিষ আর ড্রেনের পাশে ছোট শিশুরা প্রাতঃকৃত্য করছে । দুটি রিকশা খুব সাবধানে পাশাপাশি যেতে পারত। কোনো কোনো স্থানে ড্রেনের উপর কংক্রিটের স্লাব দেওয়া। চিৎকার-চেঁচামেচি নেই, ভিড় নেই, হট্টগোল নেই। মাঝেমধ্যে দুই একটি রিকশা পিছন থেকে টুংটাং শব্দ করে চলে যাচ্ছে। হঠাৎ হঠাৎ লোহার চিকন ঠেলাগাড়িচালক মাল নিয়ে এগিয়ে যাবার সময় ‘এই সইরা, সইরা’ বলে পথচারীদের সতর্ক করছে। আবার এই গলি দিয়ে বিকাল বা সন্ধ্যায় গেলে আশেপাশের বাড়ি থেকে টেপ রেকর্ডারের উচ্চশব্দের গান শোনা যেত। মিঠুন চক্রবর্তী বা মাইকেল জ্যাকসন স্টাইলের পায়ের টাখনু ঢাকা সাদা বা কালো হিল জুতা আর চোঙ্গাপ্যান্ট পরা তরুণ-যুবকরা স্ফূর্তিতে এগিয়ে যায়, মাঝেমধ্যে তরুণী কণ্ঠের হাসি আর চুড়ির রিনঝিন শব্দের সঙ্গে সঙ্গে তাদের অতিরিক্ত রংচঙে সেলোয়ার কামিজ আর চোখের উপর উৎকট লাল মাশকারা ও চকচকে জরি মাখানো আনন্দিত মুখগুলো দেখা যেত। তবে যানবাহনের সংখ্যা অতিরিক্ত ছিল না।

কেল্লার পশ্চিম দিকের অভিযানে একের পর এক লেন, রোড, স্ট্রিট জয় করতে লাগলাম। রাজা শ্রীনাথ স্ট্রিট, জগন্নাথ সাহা রোড, আমলিগোলা, সুবল দাস রোড, চৌধুরী বাজার, নবাবগঞ্জ বাজার, ডুরি আঙ্গুল রোড, নীলাম্বর সাহা রোড তখন আমার হাতের তালুতে। এ রকম ঘুরতে ঘুরতে একদিন এক আলো ঝলমলে মন্দিরের দেখা পেয়ে খুব অবাক হয়েছিলাম। এটা ছিল ঐতিহাসিক খান মোহাম্মদ মসজিদের একটু দক্ষিণ-পশ্চিমের শ্রী শ্রী রাধা মাধব ও শ্রী শ্রী দূর্গা মন্দির। আমি ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছিলাম ঢাকা হচ্ছে মসজিদের শহর।

কেল্লার দক্ষিণ, পশ্চিম ও উত্তর দিকের রসুলবাগ, বড় ভাট জামে মসজিদ, ছোট ভাট জামে মসজিদ, ইরাকি গোরস্থান, নিউ পল্টন লাইন, শেখ সাহেব বাজার, আব্দুল আজিজ লেন, নবাবগঞ্জ রোড, নীলাম্বর সাহা রোড জয়ের পরে কনফিডেন্স একেবারে আকাশচুম্বী হয়ে গেল। একসময় মনে হলো এবার কেল্লার পূর্ব দিকে অভিযান চালাতে হবে। এই অভিযানগুলো প্রথম দিকে ছিল বাসা থেকে পালিয়ে সময় কাটানোর অবলম্বন। পরে এটা হয়ে ওঠে আবিষ্কারের নেশা এবং বন্ধুদের কাছে নিজের বাহাদুরির একটা প্রকাশ। কিন্তু সব কিছুর যেমন শেষ আছে, সম্রাট আলেকজান্ডারের জয়রথও যখন ভারতে এসে থেমে গেছে তেমনি আমার এই পরিব্রাজক হবার নেশা ছুটে যায় কেল্লার পূর্ব দিকের অভিযানে নেমে।

কোন একদিন আব্বার সঙ্গে গাড়িতে লালবাগ চৌরাস্তা হয়ে চকবাজার পর্যন্ত গিয়েছিলাম। মনে এত বেশি সাহস হয় যে ঢাকেশ্বরী রোড, আলিয়া মাদ্রাসা, আনন্দ বেকারি এগুলো তো মামুলি ব্যাপার, সামনে আরও যত বড় লেন-স্ট্রিটই পড়ুক না কেন, নো চিন্তা। একদিন ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে অভিযান শুরু করে কেল্লার পুব বরাবর একটার পর একটা গলি পার হচ্ছিলাম। দুর্ভাগ্যবশত ঐদিন আম্মা টাইম লিমিট বেঁধে দিয়েছিলেন দুপুর ১২টার মধ্যে বাসায় আসতে হবে, দাওয়াত আছে। আর পকেটে ছিল মাত্র বার আনা। অন্যদিন অভিযানে নেমে মাঝেমধ্যে মদিনা হোটেল থেকে ডালপুরি কিংবা চিনাবাদাম কিনে খেতে খেতে বাসায় আসতাম। কিন্তু, সেদিন পকেটে পয়সা না থাকায় এবং কেল্লা ও চকবাজারের পূর্বদিকের এলাকাগুলো খুবই ব্যবসাপ্রবণ এলাকা এবং ঘন জনবসতি সম্পন্ন এবং রিকশা ও ঠেলাগাড়ি এবং ছোট ছোট ট্রাকের হর্নে আমি দিশাহারা হয়ে যাই। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মনের সাহস হঠাৎ করে কমে যায়। দুপুর সাড়ে ১২টা বাজে। হতভম্ব হয়ে যাই, পা থরথর করে কাঁপতে থাকে। এই বুঝি ছেলেধরা ধরল। একটা পর্যায়ে মৌলভীবাজারের পাশে এক গলির মাথায় এসে সারেন্ডার করি। হাঁপাতে হাঁপাতে শরণাপন্ন হই এক মুরব্বির। তাঁর কাছে আমি পথ হারিয়ে ফেলেছি বলে সাহায্য চাই। তিনি আমাকে প্রথমে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমার নিশানা কি? কৈ যাইবা?’ এলাকার স্থাপনাগুলো সম্বন্ধে ধারণা না থাকায় আমি বলি, আমি পথ হারিয়ে ফেলেছি। উনি বললেন, ‘বুঝলাম, তয় তুমার বাসা কই?’ আজিমপুর কলোনি বলাতে উনি সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, ‘ওই ম্মিঁয়া, এত্তদূর আইছো কেমতে? তুমারে পাগলে কামড়াইছে নিহি?’ আমি ওনার ঝাড়ি খেয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকি। উনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘জ্যাবে মালপাত্তি কত্ত আছে?’ বারো আনা শুনে উনি হতাশভাবে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘এই ট্যাকায় তুমি আজিমপুর ক্যালা, কিল্লায়ও যাইবার পারবা না। চক চিন?’ মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বলায়, উনি রাস্তার ঐপাড়ে দাঁড়ানো এক টিঙটিঙে রিকশাওয়ালাকে চিৎকার করে ডাকেন, ‘ঐ হাসমইত্যা, অবসর আছোস নি? এই পোলারে চকে নামায় দিয়া আয়।’ কৃতজ্ঞচিত্তে ওনাকে সালাম জানিয়ে রিকশায় উঠি।

এই অভিযানে বুঝতে পেরেছিলাম, অভিযানে বের হতে হলে সাহসের সঙ্গে সঙ্গে পকেটে মালপানিরও দরকার আছে। পরে ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময় একে একে মাজেদ সরদার রোড, কায়েৎটুলী লেন, আগাসাদেক রোড, বেগম বাজার, সোয়ারিঘাট, চম্পাতলী, আবুল খয়রাত রোডসহ লালবাগ কেল্লা ও চকবাজারের পূর্ব দিকের অনেক রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়েছি।

*লেখক: আসফাক বীন রহমান, সহযোগী অধ্যাপক, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ, গাজীপুর।