অগল্প

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

‘এই যে এত আদর করছি বাবা, বড় হলে মনে থাকবে? থাকবে মনে? তাড়াতাড়ি বলো।’

ঝিমু বাবার দিকে তাকাল। তাকিয়েই থাকল। বাংলাভাষী কারও সামনে মান্দারিন ভাষায় কবিতা পাঠ করলে যেমনটা হয়, ঝিমুও তেমন করল। যেন সে কিছুই বোঝেনি।

বাবা আবারও বললেন, ‘বড় হয়ে ভালো হবে নাকি তোমার মায়ের মতো ঝগড়াটে হবে?’

এ কথা বলার সাথে সাথে মা ঝিমুকে বলতে গেলে ছোঁ মেরে নিয়ে গেলেন।

যাওয়ার আগে বললেন, ‘আমি ঝগড়াটে হলে তুমি কী? তোমার কাছে থাকলে আমার মেয়েটার মাথা নষ্ট করবে তুমি। কম কম নেবে কোলে ওকে।’

মা মেয়ে চলে গেল চোখের আড়ালে। বাবা ঘরে একা বসে রইলেন। মেয়ে আর মেয়ের মাকে খেপাতে তাঁর সব সময়ই ভালো লাগে।

নাগরিক সংবাদে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

চা–পরোটা চলে এল। সকালের নাশতা। ঝিমু এ সময় বাবার পাশেই থাকে। বাবা নিজে খান, মেয়েকে অল্প খাইয়ে দেন। ঝিমু খাওয়ার চেয়ে জ্বালাতন করে বেশি। দেখলে মনে হবে, শুধু মুখ নয়, তার নাক–গালও নাশতা করেছে! মেয়ে যা–ই করে, বাবা মুগ্ধ হয়ে দেখেন। তার কচি হাত, নিষ্পাপ চাহনি, কুসুমের মতো কোমল চুল কেবলই মায়া ছড়ায়। অফিসে যাওয়ার আগে বাবা ঝিমুকে আদর করে দেন। কিন্তু ঝিমুর কেবল আদরে হয় না! সে বাবার সাথে বের হওয়ার জন্য প্রায়ই জিদ করে। বাবার প্রতি এ টান বড্ড প্রভাব ফেলে বাবার হৃদয়ে। এতই প্রভাব যে অফিস থেকে আসার সময় সব ভুল হলেও মেয়ের জন্য কিছু না কিছু আনতে ভুল হয় না। মা এতে এত রাগ দেখান, মনে হবে—তিনি খুব বিরক্ত এতে। আসলে কি তা–ই? বাবা–মেয়ের স্নেহের জোছনায় তিনি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে থাকেন। বুঝতে দেন না কিছুই। সব বুঝতে দিলে মলিন হয়ে যায় জীবন।

*লেখক: সঞ্জয় দেবনাথ, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম