বিরাট কোহলি: ক্রীড়াজগতে ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক মুখপাত্র

বিরাট কোহলি
ফাইল ছবি

বিরাট কোহলি শুধু একজন ক্রিকেটার নয়, ক্রীড়াজগতের আন্তর্জাতিক মুখপাত্র। তাঁর ফর্ম বিশ্ব ক্রিকেটের প্রসার, প্রচার, অর্থযোগ ও জনপ্রিয়তার জন্য খুব দরকার। তিনি এমন একজন খেলোয়াড়, যাঁকে দেখে সারা বিশ্বে লাখো তরুণ ক্রিকেটে আসেন। সেই অর্থে ক্রিকেট-ফুটবল-টেনিসের মতো গ্লোবাল গেম বা আন্তর্জাতিক খেলা নয়। এখনো ক্রিকেট অলিম্পিকে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। হয়েও সময়ের কারণে বাদ পড়েছে। যদিও ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ টি-টোয়েন্টির কারণে ইউরোপ-আমেরিকাসহ অনেক দেশ ক্রিকেটের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। অন্যদিকে বিরাট কোহলি এমন একজন খেলোয়াড়, যাঁর নাম মেসি-নেইমার-রোনালদো বা ফেদেরার-নাদালের সঙ্গে উচ্চারিত হয়। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটারসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশ্বখ্যাত খেলোয়াড়দের মতো ফ্যান ফলোয়ার তাঁর, যা ক্রিকেটের জন্য বিশাল এক পাওয়া, বিরাট এক বিজ্ঞাপন। এ দৃষ্টিতে বিরাট কোহলি ক্রিকেটের একমাত্র আন্তর্জাতিক পোস্টার বয়।

প্রসঙ্গক্রমে, বাবর আজমের কথা বলা যায়। বাবর আজম ক্লাস, টেকনিক তথা কপিবুক ক্রিকেটে বিরাটের সমতুল্য। এমনকি বিরাটের চেয়েও তিনি যদি এগিয়ে যান, তবে তাঁকে দিয়ে যা হবে, তার চেয়ে অনেক বেশি ক্রিকেটীয় অর্জন হবে বিরাটকে দিয়ে।

যার কয়েকটি কারণ ভারতের মিডিয়া ব্রিটিশ মিডিয়ার মতো অনেক শক্তিশালী। ব্রিটিশ মিডিয়া ফুটবলে বেকহাম, ওয়েন রুনি, মাইকেল ওয়েনকে বিশ্বসেরা বানিয়েছিল, কিন্তু তাঁদের তেমন কোনো আন্তর্জাতিক অর্জন নেই। দল হিসেবে ইংল্যান্ড ১৯৬৫ সালের বিশ্বকাপ জয়ের পর আর সেমিফাইনালের গণ্ডি পেরোতে পারেনি। ভারতের শক্তিশালী মিডিয়া ছাড়াও ক্রিকেট-পাগল অগণিত জনগণ আছেন। ভারতের ক্রিকেট থেকে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা আয় হয়। এ আয়ের ধারেকাছেও নেই অন্য কোনো ক্রিকেট বোর্ড।

বিরাট কোহলি টি-টোয়েন্টিতে অসাধারণ একটা সেঞ্চুরি দিয়ে ফর্মে ফিরেছেন, এটা যেমন তাঁর ক্যারিয়ারের জন্য সুখকর, তেমনি ক্রিকেটের জন্য আশীর্বাদতুল্য। কারণ, তিনি লাখো তরুণের আদর্শ। বিরাটের দলকে অপছন্দ করলেও তাঁর খেলা অপছন্দ করেন, এমন ক্রিকেটপ্রেমী নেই বললেই চলে। ক্রিকেটপ্রেমীরা প্রত্যাশা করেন, ক্রিকেটের স্বার্থেই তিনি ভালো খেলুন। তাঁদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের ক্রিকেটাররাও দারুণভাবে তাঁর সংকটে পাশে ছিলেন এবং এখনো আছেন। অবশ্য বিরাট কোহলির গত দুই বছর ফর্মহীনতায় অনেকে তাঁর শেষ দেখে ফেলেছিলেন। কিন্তু মহাতারকারা ফিনিক্স পাখির মতো ধ্বংস থেকে নতুন করে সৃষ্টি হয়ে ঘুরে দাঁড়ান। সবাইকে অবাক করে দিয়ে নক্ষত্রের স্বমহিমায় নিজ কক্ষপথে রাজকীয়ভাবে ফিরে এসে প্রদক্ষিণ করতে শুরু করেন। কোহলির ক্ষেত্রেও সেই রাজকীয় প্রত্যাবর্তন হয়েছে। অনেকে চান বিরাট কোহলি সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরি করুন। তিনি নতুন নতুন মাইলফলক স্পর্শ করুন।

তিনি ক্রিকেটে দ্যুতি ছড়িয়ে অনেক দূর এগিয়ে যান, বিশ্বমঞ্চে ক্রিকেটকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যান। শুভকামনা, ক্রিকেটের একমাত্র গ্লোবাল পোস্টার বয় কোহলিকে।
লেখক: খালিদ ফেরদৌস, প্রভাষক, গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ