বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। নদীবিধৌত পলিতে গঠিত এই উর্বর বদ্বীপের প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এদিকে কৃষি সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে মৃত্তিকা বা মাটির স্বাস্থ্যের ওপর। মাটির স্বাস্থ্য ঠিক থাকলে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত হয়, পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় থাকে এবং সর্বোপরি সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, শিল্পায়ন, কৃষিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিকের ব্যবহার, নিবিড় চাষাবাদ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের মৃত্তিকা সম্পদ আজ এক গভীর সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। মনে রাখতে হবে, মাটি এমন এক সম্পদ, যা আমরা চাইলেও সৃষ্টি করতে পারব না। নদীবিধৌত পলিতে গঠিত এই উর্বর বদ্বীপটি বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল। যদি এই সম্পদের টেকসই ও বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা না যায়, তবে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা, পরিবেশগত ভারসাম্য ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।
বাংলাদেশের মৃত্তিকা প্রধানত তিন প্রকার ভৌগোলিক অঞ্চলে বিভক্ত। প্রতিটিরই আলাদা বৈশিষ্ট্য। সেই সঙ্গে প্রতিটি আলাদা চ্যালেঞ্জ বহন করে।
১. প্লাবনভূমি অঞ্চলের মৃত্তিকা
বাংলাদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকাজুড়ে নদী প্রবাহিত পলিমাটি দ্বারা এই মাটি গঠিত। এই মাটি অত্যন্ত উর্বর। সব ফসল উৎপাদনের জন্য আদর্শ এই অঞ্চলের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো নদীভাঙন ও বন্যা। অতিরিক্ত চাষাবাদের কারণে মাটিতে পুষ্টি উপাদানের, বিশেষ করে গৌণ পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি এখানে রয়েছে।
২. পাহাড়ি অঞ্চলের মৃত্তিকা
দেশের উওর–পূর্বাঞ্চল (মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট, সুনামগঞ্জ) ও দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলে (চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার) এই মাটি দেখা যায়। এই মৃত্তিকা সাধারণত বেলে–দোঁআশ প্রকৃতির এবং অত্যন্ত অম্লীয়। ভূমিক্ষয় এই অঞ্চলের প্রধান সমস্যা।
৩. সোপান অঞ্চলের মৃত্তিকা
এ অঞ্চলকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়: বরেন্দ্র অঞ্চল, ভাওয়াল–মধুপুর অঞ্চল ও লালমাই পাহাড়। এই মাটি তুলনামূলকভাবে কম উর্বর শুষ্ক, লাল ও কঙ্করময়। এই অঞ্চলের প্রধান সমস্যা হলো মাটির দৃঢ়তা ও খরা প্রবণতা।
বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতিতে মাটির ভূমিকা অপরিসীম, যা কর্মসংস্থান সৃষ্টি, খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও শিল্প খাতে কাঁচামাল সরবরাহ করে। এটি কেবল ফসল উৎপাদনের মাধ্যম নয়; বরং পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মাটির উর্বরতা সরাসরি কৃষকের আয় ও দেশের জিডিপিতে প্রভাব ফেলে।
মৃত্তিকা সম্পদের ওপর বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ কী কী
জৈব পদার্থ মাটির প্রাণ। একটি স্বাস্থ্যকর মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ ৩ থেকে ৫ শতাংশ থাকা দরকার। বাংলাদেশের অধিকাংশ আবাদি জমিতে এর পরিমাণ ১ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। অতিরিক্ত ও অপরিকল্পিতভাবে রাসায়নিক সারের ব্যবহার, জৈব সার ব্যবহারের প্রতি কৃষকের উদাসীনতা, একই জমিতে বারবার একই ফসলের আবাদ, নিবিড় চাষাবাদ ইত্যাদি কারণে রোগবালাই যেমন বাড়ছে, তেমনি মাটির জৈব পদার্থের পরিমাণ দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। এর ফলে মাটির পানি ধারণক্ষমতা কমে যাচ্ছে, রাসায়নিক সার তার কার্যকারিতা হারাচ্ছে, মাটিতে অণুজীবের কার্যক্রম কমে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সমুদ্র উপকূলবর্তী দেশগুলোর একটি। লবণাক্ততা উপকূলীয় এলাকার মাটি ও পানিকে প্রভাবিত করে। উপকূলীয় ১৯টি জেলা, যা বাংলাদেশের প্রায় ৩২ শতাংশ জায়গাজুড়ে আছে। এ জেলাগুলোয় ধীরে ধীরে লবণাক্ত পানি অনুপ্রবেশের কারণে ফসল উৎপাদন ব্যবস্থা, উপকূলীয় জীববৈচিত্র্য ও মানবস্বাস্থ্যের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নগরায়ণ ও শিল্পায়নের কারণে প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কৃষিজমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের (এসআরডিআই) এক গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৬৮ হাজার ৭৬০ হেক্টর কৃষিজমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে, যার প্রধাণ কারণ অপরিকল্পিত নগরায়ণ, আবাসন, শিল্পকারখানা ও রাস্তাঘাট নির্মাণ। প্রতিবছর প্রায় ১ শতাংশ হারে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। শিল্পকারখানার বিস্তৃতির কারণে অপরিশোধিত শিল্পবর্জ্য মাটিতে মিশছে। এতে মাটিতে ভারী ধাতুর উপস্থিতি বেড়ে যাচ্ছে, যা পরবর্তী সময় সবজি ফসলের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।
টেকসই মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনার কৌশল
মৃত্তিকা সম্পদের সুরক্ষা ও উৎপাদনশীলতা বজায় রাখার জন্য একটি সমন্বিত ও বহুমুখী টেকসই কৌশল অবলম্বন করা জরুরি।
১. সমন্বিত পুষ্টি ব্যবস্থাপনা
সমন্বিত পুষ্টি ব্যবস্থাপনা বলতে ফসলের পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি, যেমন রাসায়নিক সার, জৈব সার (কম্পোস্ট, কুইক কম্পোস্ট, ভার্মিকম্পোস্ট, ট্রাইকোকম্পোস্ট), সবুজ সার ও অন্যান্য জৈব উপাদানের (যেমন: ফসলের অবশিষ্টাংশ) সঠিক সমন্বয়কে বোঝায়। এর মূল লক্ষ্য হলো টেকসই ও পরিবেশবান্ধব উপায়ে ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, মাটির উর্বরতা রক্ষা করা এবং রাসায়নিকের অতি ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশের ওপর রাসায়নিকের নেতিবাচক প্রভাব কমানো। এর পাশাপাশি নিয়মিত মাটি পরীক্ষা করে ফসলের প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক মাত্রায় সঠিক সময়ে সার প্রয়োগ নিশ্চিত করা সমন্বিত পুষ্টি ব্যবস্থাপনার অন্যতম আরেকটি দিক।
২. মাটি সংরক্ষণের পদ্ধতি
বাংলাদেশের পটভূমিতে মাটি সংরক্ষণের সাধারণ কয়েকটি পদ্ধতি হলো:
ফসল আবর্তন: এ পদ্ধতিতে একই জমিতে বারবার একই ফসল চাষ না করে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ধরনের ফসলের আবাদ করা, যা মাটির নির্দিষ্ট পুষ্টি ঘাটতি কমিয়ে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করবে এবং সেই সঙ্গে ভূমিক্ষয় রোধ করবে।
মালচিং: মাটির ওপরের অংশ ঢেকে দেওয়ার একটি পদ্ধতি হলো মালচিং। এ পদ্ধতিতে গাছের গোড়ায় বা সবজিখেতে খড়, ঘাস, পাতা অথবা প্লাস্টিক শিটের মতো বিভিন্ন উপাদান দিয়ে মাটির ওপরের অংশ ঢেকে দেওয়া হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের কৃষকদের মধ্যে মালচিংপদ্ধতি অনুসরণ করে সবজি আবাদ ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। পচনশীল মালচিং পেপারের মতো পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি এ ক্ষেত্রে সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলে দিচ্ছে। এ পদ্ধতিতে একদিকে যেমন মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখা যায়, সেই সঙ্গে ভূমিক্ষয় রোধ করা সম্ভব হয়।
সংরক্ষণশীল কৃষি: কৃষি সম্পদ সাশ্রয়ী ফসল উৎপাদন ব্যবস্থাপনা, যেখানে জমিতে যথাসম্ভব কম চাষ দেওয়া হয় এবং মাটির রস ধরে রাখতে পূর্ববর্তী ফসলের কিছু খড় বা ফসলের অবশিষ্টাংশ রেখে দেওয়া হয়। এতে মাটির ক্ষয় রোধ হয় এবং আর্দ্রতা বজায় থাকে। এ ছাড়া আচ্ছাদন ফসল, ধাপ চাষ, সমন্বিত রেখা বরাবর চাষ, বায়ু অবরোধ নির্মাণ, গাছ লাগানো ও বনভূমি রক্ষার মাধ্যমে মাটি সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
৩. লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণ ও অভিযোজন
বাংলাদেশের ১৯টি উপকূলীয় জেলায় মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনা টেকসই করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যেমন
লবণ সহনশীল ফসল আবাদ: রবি মৌসুমে যেহেতু লবণাক্ততার সমস্যা বেশি পরিলক্ষিত হয়, সে ক্ষেত্রে লবণ সহনশীল বিভিন্ন রবি ফসল (যেমন: ডালজাতীয় ফসল: মুখ, ফেলন ইত্যাদি, সয়াবিন, সূর্যমুখী, তরমুজ, গম) আবাদে কৃষকদের উৎসাহ দিতে হবে। প্রয়োজনে এসব ফসল আবাদে স্বল্প সুদে ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি লবণ সহনশীল বোরো ধানের জাত (যেমন: ব্রি ধান ৪৭, ব্রি ধান ৬৭, ব্রি ধান ৮৯, ব্রি ধান ১১৭, বিনা ধান–১০ ইত্যাদি) কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয় করতে হবে।
নিষ্কাশন ও পানি ব্যবস্থাপনা: জমিতে অতিরিক্ত লবণাক্ত পানি দূর করার জন্য কার্যকর নিষ্কাশনব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এর পাশাপাশি জমিতে পুকুর খনন করে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করা যায়। এ পানি রবি মৌসুমে ফসল আবাদে ব্যবহার করা যাবে।
৪. পরিকল্পিত ভূমি ব্যবহার
যেকোনো কাজ করতে ভূমির প্রয়োজন। কৃষি কিংবা বনায়ন—এগুলো করতে যেমন ভূমির প্রয়োজন, তেমনি নগরায়ণ ও শিল্প করতে হলে ভূমির দরকার। সে ক্ষেত্রে যা কিছু করা হোক না কেন, কঠোর পরিকল্পনার মাধ্যমে ভূমিকে ব্যবহার করতে হবে। কৃষিজমি যাতে অকৃষি খাতে ব্যবহার করা না হয়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং কৃষিজমি সুরক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, সমন্বয় সাধন ও নীতিমালার প্রয়োগ
ফসল উৎপাদনের মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো মাটি। এ জন্য মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনা টেকসই করতে শক্তিশালী ও কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রয়োজন। শুধু কাঠামো হলেই হবে না, এদের মধ্যে আন্তসমন্বয় থাকাও জরুরি।
১. গবেষণা ও সম্প্রসারণের সমন্বয়
বিভিন্ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান (যেমন: ব্রি, বারি, বিনা, এসআরডিআই, বিএসআরআই ইত্যাদি) কৃষিসংক্রান্ত বিভিন্ন প্রযুক্তি ও ফসলের উন্নত জাত উদ্ভাবন ও চাষাবাদের উন্নত কলাকৌশল নিয়ে গবেষণা করে থাকে। মাঠপর্যায়ে কৃষকের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের। সে ক্ষেত্রে কৃষকের চাহিদাভিত্তিক গবেষণা আমাদের কৃষি ব্যবস্থাকে আরও এগিয়ে নেবে। গবেষণা ও সম্প্রসারণের মধ্যে যদি সমন্বয় না থাকে, তাহলে কোনো কিছুই কৃষকের কাজে আসবে না। সে ক্ষেত্রে এসআরডিআই কর্তৃক উদ্ভাবিত টেকসই ভূমি ও মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনা–সম্পর্কিত প্রযুক্তিগুলো কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে কার্যকরভাবে পৌঁছে দিতে হবে। বর্তমানে উত্তম কৃষিচর্চার যে কার্যক্রম মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নের কাজ চলছে, তার অন্যতম একটি দিক হচ্ছে ফসলের মাঠের মাটির নমুনা পরীক্ষা করা। এ ক্ষেত্রে মাটির নমুনা পরীক্ষার কার্যক্রমটি কীভাবে কৃষকের কাছে সহজে পৌঁছানো যায় এবং মাটির নমুনা সংগ্রহের পদ্ধতিকে কীভাবে আরও সহজীকরণ করা যায়, তা নিয়ে এসআরডিআইকে গবেষণা করতে হবে।
২. নীতিমালার কঠোর প্রয়োগ
কৃষিজমি ব্যবহার, মাটির টেকসই ব্যবস্থাপনা, ভূমি ব্যবহার, রাসায়নিক ও জৈব সার ব্যবহার—এ–সংক্রান্ত বিষয়ে বিদ্যমান আইনগুলোর কঠোর বাস্তবায়ন মাঠপর্যায়ে থাকতে হবে। কৃষিজমি সুরক্ষায় আইনের কঠোর প্রয়োগ ও জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে জৈব সারের ব্যবহার বাড়াতে হবে। কৃষক পর্যায়ে জৈব সার উৎপাদনের ক্ষেত্রে লাইসেন্সিংয়ের প্রক্রিয়া সহজীকরণ করতে হবে।
৩. ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা
ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসার: বাংলাদেশের কৃষিব্যবস্থা এখনো আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফসল উৎপাদন ভালো হয়। প্রতিকূলে থাকলে উৎপাদন ব্যবস্থা ব্যাহত হয়। সে ক্ষেত্রে আবহাওয়ার পূর্বাভাস কৃষকের কাছে সময়মতো পৌঁছানোর জন্য কৃষকের বোধগম্য উপযোগী ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সহযোগিতা নিতে হবে। মোবাইল অ্যাপসভিত্তিক কার্যক্রমে কৃষককে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষা, সার সুপারিশ, প্রতিকূলতার মাত্রা নির্ণয়, এলাকার উপযোগিতাভিত্তিক চাষ ইত্যাদি কার্যক্রমে ভৌগোলিক তথ্যব্যবস্থা ও রিমোট সেন্সিং প্রযুক্তির দিকে গবেষণা কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে হবে।
কৃষক প্রশিক্ষণ ও সক্রিয় অংশগ্রহণ
মাটি ব্যবহারের সঙ্গে সার, পানি ও বালাইনাশক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ ক্ষেত্রে মাটির টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য সার, পানি, বালাইনাশক ইত্যাদি ব্যবহারের কৌশলগুলো মাঠপর্যায়ে কৃষকের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। কৃষক মাঠ স্কুল, কৃষক প্রশিক্ষণ, কৃষক মাঠ দিবস, উদ্বুদ্ধকরণ ভ্রমণ—এসবের মাধ্যমে কৃষকের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। কৃষকের অভিজ্ঞতা ও গবেষণালব্ধ ফলাফলের সমন্বয় ঘটাতে হবে। পাশাপাশি স্থানীয় জ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বিত রূপকে কৃষকের মধ্যে তুলে ধরতে হবে।
মৃত্তিকা একটি সম্পদ। বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের জীবনের অংশ হলো মাটি। ফসল উৎপাদন ব্যবস্থা শুধু নয়, বাংলাদেশের টিকে থাকা ও অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল রাখতে মৃত্তিকা সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। জীবন ব্যবস্থার অংশ এই মাটিকে আগামী প্রজন্মের জন্য উর্বর, উৎপাদনশীল ও সুরক্ষিত রাখতে হলে প্রয়োজন একটি সমন্বিত, বিজ্ঞানভিত্তিক ও কৃষকমুখী টেকসই মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনা মডেল। এর মাধ্যমেই খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ ব্যবস্থা নিরাপদ থাকবে। সরকার, গবেষক, সম্প্রসারণ কর্মী ও কৃষকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই বাংলাদেশের মাটিকে নিরাপদ রাখবে—এটাই প্রত্যাশা।
*লেখক: হাসান ইমাম, কৃষিবিদ, সরকারি চাকরিজীবী
নাগরিক সংবাদে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই–মেইল: [email protected]