সন্দ্বীপের নৌকা নির্মাণের কারিগরেরা কেমন আছেন
বিভিন্ন ঋতুতে নানা রূপে সাজে প্রকৃতি। প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভ্রমণের মৌসুম শীতকালে সাগরপাড়ে ঘোরাঘুরির ব্যাপারটা অন্য রকম। কেউ প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছেন, কেউ ছবি তুলছেন, কেউ খেলছেন। হঠাৎ নদীর ধারে কাঠের ঠুকঠুক আওয়াজ। কাছে যেতেই দেখতে পেলাম, নৌকা তৈরির কাজ চলছে। প্রতিবছর ইলিশের মৌসুমের আগে নৌকা তৈরি ও মেরামতের হিড়িক পড়ে উপকূলীয় এলাকায়।
বলছিলাম চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার সারিকাইত ইউনিয়নের গাছতলীহাট এলাকার কথা। বেড়িবাঁধের বাইরে দুটি নৌকা তৈরির কাজ করছেন কারিগরেরা। পাশে চলছে আরও চারটি নৌকা তৈরির প্রস্তুতি। জড়ো করে রাখা হয়েছে নৌকা তৈরিতে ব্যবহৃত কাঠসহ বিভিন্ন উপকরণ। কাঠমিস্ত্রির পাশাপাশি নৌকা তৈরির উপকরণ সংগ্রহে ব্যস্ত নৌকার মালিকেরা।
নির্মাণাধীন একটি নৌকার মালিক আলাউদ্দীন সেরাংয়ের ভাষ্যমতে, নদীতীরবর্তী মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে নৌকা অনেকাংশে জড়িত। ৪৭ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৩ ফুট প্রস্থের একটি নৌকা তৈরিতে খরচ হয় কয়েক লাখ টাকা। নির্মাণাধীন আরেকটি নৌকার মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দুই বছর আগে একটি ছোট নৌকা বানিয়েছিলাম। নদীতে চর জেগে ওঠায় ছোট নৌকায় ইলিশ ধরা পড়ে না, ছোট নৌকা গভীর সাগরেও যেতে পারে না। এ জন্য বড় নৌকা তৈরির কাজে হাত দিয়েছি।’
ইলিশের মৌসুম সামনে রেখে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলায় নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগরেরা। ইতিমধ্যে ছোট-বড় ১০টির বেশি নৌকা তৈরি করেছেন তাঁরা। প্রতিদিনই চলছে নতুন নতুন নৌকা তৈরির কাজ। নৌকা তৈরিতে ব্যবহার করা হয় কড়ই, ইউক্যালিপটাস ও মেহগনিগাছ।
নৌকা তৈরির কারিগর আনোয়ার মিস্ত্রির (৫০) সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৪৭ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৩ ফুট প্রস্থের নৌকা তৈরি করতে এক থেকে দেড় মাস সময় লাগবে। এটি তৈরি করতে কাজ করছেন ১৩ জন শ্রমিক। নৌকাটি তৈরি করতে সাড়ে তিন লাখ টাকা মজুরি নির্ধারিত হয়েছে।
নৌকা তৈরিতে নিয়োজিত শ্রমিক মোহাম্মদ ইকবাল ও হাসান আলী বলেন, নৌকা তৈরির মৌসুম শুরু হলেই তাঁদের ডাক পড়ে। দৈনিক পারিশ্রমিক ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। নৌকা মেরামতের পাশাপাশি বছরের অন্য সময়ে অন্য কাজও করেন তাঁরা।
বঙ্গোপসাগরের কূলে মেঘনার মোহনায় অবস্থিত প্রাচীন একটি দ্বীপ সন্দ্বীপ। একসময় সমুদ্রগামী জাহাজের নাবিক মানেই ছিল সন্দ্বীপি। সম্ভবত এই নাবিকেরাই বাংলাদেশিদের মধ্যে প্রথম বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী। ভারতবর্ষের মধ্যে সন্দ্বীপ ছিল একটি সমৃদ্ধিশালী বন্দর। যেখান থেকে ইউরোপের বিভিন্ন এলাকায় জাহাজ রপ্তানি করা হতো। বর্তমানে ব্যবসায়ীরা নিজেদের প্রয়োজনে বছরে ছোট-বড় ২০ থেকে ২৫টি নৌকা তৈরি করলেও কোনো এক সময়ে পৃথিবীখ্যাত সন্দ্বীপের জাহাজ নির্মাণশিল্পের বিলুপ্তি ঘটে জানা–অজানা অনেক কারণে।
*লেখক: নজরুল নাঈম, সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম ও সমন্বয়ক, বইচিন্তা (বইবিষয়ক সংগঠন)