সেয়ানা মফিজ

ইলিশ মাছফাইল ছবি

মফিজ যাবে যাত্রাবাড়ীতে ইলিশ কিনতে। এর আগের বছরগুলোতে বেশি দামে মহল্লায় ইলিশ কিনে কিনে সে বিরক্ত হয়ে গেছে। এখন প্রমাণ করে ছাড়বে ইলিশ কম দামেও মেলে! যে কথা সেই কাজ। একদিন কাকডাকা ভোরে ছুটল যাত্রাবাড়ী। সে আগে কখনো যাত্রাবাড়ী মাছের আড়তে মাছ কিনতে যায়নি। তবে অভিজ্ঞতা কম হলেও মফিজের সাহসের কমতি নেই।

যাত্রাবাড়ী মাছের আড়তে ঢুকতেই সে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। এত বড় মাছের আড়ত! কোনদিকে, কী মাছ বিক্রি করে, বোঝাই দায়। যাই হোক, অনেক সময় ঘুরে ঘুরে সে ইলিশ মাছ দেখতে পেল। অবশ্য এই সময়ে অনেকেই বুঝতে পেরেছে মফিজ একটা নতুন মুরগি!

মফিজ এ বছর ইলিশ তেমন কেনেনি, দামও খুব একটা জানে না। নতুন জায়গা কত যে দাম বলবে! ওর ধারণা ছিল, এখানে বড় আড়ত একদামেই বেচা-বিক্রি হয়। সে যাই হোক না কেন, মফিজ হাল ছাড়েনি। এমন সময়ে তার মতো একজন সাধারণ ক্রেতা জিজ্ঞেস করল, ভাই ইলিশ কিনবেন?

: হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল।

: এখানে নয়। পাশের গলিতে চলেন দাম কম হবেনি।

মফিজ চলল।

: বড় ইলিশের যে দাম আমার মতো মানুষের হাত দেওয়াই যায় না। মনে হয় ছোট ইলিশ কেনা বেটার। কী বলেন ভাই?

আরে, মফিজ তো এটাই ভাবছিল এতক্ষণ।

: ভাই, আমার তো এক হালি কেনা সম্ভব নয়। আসেন শেয়ারে কিনি। এক হালি কিনলে কম দেবেনি। ২টা করে ভাগ করে নেবনে।

মফিজ খুশিতে আত্মহারা! সে মনে মনে ভেবেই নেচে উঠল! তার বিল্ডিংয়ের অন্য বাসিন্দাদের ফাঁকি দিয়ে এসেছে ইলিশ কিনতে। আজ কম টাকায় ইলিশ কিনে হিরো হয়েই বাসায় ফিরবে। সবাই তার কাছে ইলিশ কেনার ফর্মুলা শিখবে। হে হে হা হা; আজ সে একাই ভোগ করবে! অন্য কেউ নয়!

তা ছাড়া, মফিজ ছাড়া পাইকারি বাজারে আসার সাহস কার আছে? মফিজকে যে চেনে না, সে এখনো বোকার স্বর্গে!

: ভাই, ভালো ইলিশ কম দামে দিচ্ছে। বলেই দুই হালি কিনে ফেলল। সে ২টা নিল আর মফিজকে দিল ছয়টি।

: আসলেই ভাই, আপনি না থাকলে এত কম দামে, এত ভালো ইলিশ কেনাই যেত না। আমি বুঝেই উঠতে পারছিলাম না। ধন্যবাদ ভাই, বলেই মফিজ চা অফার করে বসল। চা-বিস্কিট খাবার পর লোকটা চোখের পলকেই হাওয়া।

নাগরিক সংবাদে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

ইলিশ নিয়ে মফিজ মাছের আড়তের ভেতর দিয়ে বের হবার পথ খুঁজছে। চারপাশ দেখছে আরও ভালো মাছ কম দামে মিলবে কি না। মফিজকে অন্যান্য ইলিশ বিক্রেতা আরও কম দামের অফার করে বসে। মফিজ ভাবতে থাকে, যেহেতু দাম কম, সেহেতু মাছের কোয়ালিটি ভালো না–ও হতে পারে। কিন্তু কয়েকজন বিক্রেতা যখন তাকে অফার করেছে! তখন মফিজ বুঝতে পারল। সে ঘোরের মধ্যে ছিল। মফিজ যে দামে ইলিশ কিনেছে, সেটা আসল দাম নয়! আসলে মফিজ ঠকে গিয়েছে! তাহলে লোকটাও ঠকেছে? আহা! বেচারা। সেও মনে হয় মফিজের মতোই সরলপ্রাণ।

মফিজ তখন রাগে কাঁপছে, যখন বুঝতে পারল সে ঠকেছে! কেন সে ঠকে গেল? কেন সে অন্য ফ্ল্যাটের বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে ইলিশ কিনতে এল না? যাই হোক, মফিজ মাছ ফেরত দেবে। যাত্রাবাড়ীতে আড়তে মাছ কিনে তা ফেরত দেওয়া এত সহজ?

সেই ইলিশের দোকানে গিয়ে মফিজ তো থ! মফিজের সঙ্গে শেয়ারে ইলিশ কেনা ব্যক্তি ইলিশ দোকানিকে মাছ ফেরত দিয়ে টাকা নিচ্ছে! মানে সে আসল ক্রেতা নয়! আজ মফিজ পুরো সিন্ডিকেটে পড়ে গিয়েছে। হঠাৎ মফিজ তার হাত চেপে ধরে সিনক্রিয়েট করে ফেলল! অনেক মানুষের হট্টগোল শুরু হলো। মাছ ব্যবসায়ী, আড়তের কর্তারা চলে আসতে বাধ্য হলো।

মফিজ অল্প প্রহার হতে কোনো মতে বাঁচল। মাথা গরম করে সে ভুল করেছে। সে যাত্রায় যাত্রাবাড়ী থেকে মফিজকে কিছু দয়ালু মানুষ রক্ষা করেছিলেন। বিল্ডিংয়ে ফিরে এসে মফিজ ইলিশ কেনার অভিজ্ঞতা সবাইকে বলে দিল। অনেকেই মন্তব্য করলেন, ‘মফিজ আসলে বেশি চালাকি করতে গিয়া ধরা খাইছে!’ ধরা খাইছে রে, মফিজ ধরা খাইছে! সেয়ানা মফিজ ধরা খাইছে!

*মোহাম্মদপুর, ঢাকা।