মা দিবস, নাকি দিবসের জন্য মা

১১ মে ২০২৫, মা দিবস। প্রতিবছর মা দিবস আসে। এই দিনে সবাই চেষ্টা করে মায়ের সঙ্গে ছবি তুলে, সেলফি তুলে, কেক কাটে, গিফট দেয় আরও অনেক কিছু। খুব স্বাভাবিক, একটা দিবসকে কেন্দ্র করে মাকে নিয়ে একটু উৎসব করবে, এতে কারও কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়। অনেকেই হয়তো বলবেন, মায়ের আবার দিবস হয় নাকি, সব ন্যাকামো। আসলেই তো মায়ের কোনো দিন আছে নাকি। মা দিবস হোক প্রতিদিনের জন্য।

এবার বিষয়টা নিয়ে একটু গভীরে যাই। প্রতিটি সন্তানের জন্য তার মা হচ্ছে অমূল্য সম্পদ। মায়ের অবদান বর্ণনা করার কিছু নাই। আজ পৃথিবীতে আমরা যা–ই হয়েছি, তার পুরো অবদান আমাদের মায়েদের। দুঃসময়ে সবাই ছেড়ে গেলেও একমাত্র জননী কখনোই ছেড়ে যাবে না। তবে মজার বিষয় হলো, মা দিবসের তাৎপর্য কেমন, শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায় সীমাবদ্ধ। বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে কখনো কি কোনো সন্তান মা–ছেলে সেলফি তুলে! নাকি মা দিবস সেখানে নিষিদ্ধ!

‘নাগরিক সংবাদ’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

গত বছর মা দিবসে কেক কিনতে গিয়ে চরম বিড়ম্বনার শিকার হই। কেকের দোকানদার কেকে ‘শুভ মা দিবস’ লিখতে গিয়ে বারবার হোঁচট খায়। আমাকে বলে, মা দিবসে কী হয় স্যার। রিকশাওলা মা দিবসে যাচ্ছি দেখে বলে, স্যার আজ মা দিবসে কি মায়েরা তাঁদের ছেলের বউয়ের গালিগালাজ কম দিব। রেস্টুরেন্টে মাকে নিয়ে গিয়েছি, ওয়েটার বলে, স্যার আজ মা দিবস, আজ অনেক কাস্টমার এসেছে। কাউকে বইলেন না, আজ বেশির ভাগ তাদের মাকে প্রথম নিয়ে আসছে, অথচ আগে তাদের বউ-সন্তান ছাড়া আর কাউকে দেখিনি। এসব কোনো কোথায় মা দিবস থেমে থাকবে না, থাকা উচিতও নয়।

বৃদ্ধাশ্রম বন্ধ হোক। মা দিবস হোক অনেক আড়ম্বরভাবে। যার যতটুকু সামর্থ্য আছে, সেটা নিয়েই দিনটা উদ্‌যাপিত হোক। মা কখনোই কিছু চাইবে না, তবু এই দিনে হোক না মাকে গিয়ে একটু শুভেচ্ছা জানানো, ছবি তোলা, স্মৃতিচারণা করা ইত্যাদি। আর কিছু না হলেও মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা একটুও কমবে না। তবে যা–ই হোক, সেটা যেন লোক দেখানো না হয়। শ্রদ্ধা-ভালোবাসা যেন একদিনের জন্য না হয়, তাহলে প্রকৃতি কখনোই আমাদের ক্ষমা করবে না। আমি আপনি যা করব, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তা–ই করবে।

তাই, মা দিবসে সব ‘মা’কে জানাই গভীর শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর ধন্যবাদ। তাঁরা আছেন বলেই আমি-আপনি আজও বর্তমান।