আবর্জনা

বাবার সঙ্গে আজ তাদের গ্রামের বাড়িতে যাবে জায়ান। কয়েক দিন ধরে গ্রামের বাড়িতে যাবে বলে বাবার কাছে বায়না ধরে আছে সে। বাবা অনেকটা বাধ্য হয়ে বললেন, ঠিক আছে।

কয়েক দিন ধরে জায়ানের বাবার অফিস বন্ধ। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন জায়ানকে নিয়ে তার দাদাবাড়িতে যাবেন। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরেই সুখবর জানিয়ে দিলেন জায়ানকে। এ খবর শুনে তো জায়ান মহাখুশি। সে গিয়ে তার ব্যাগ গোছাতে শুরু করল। জায়ানের মা–ও ব্যাগ গোছাতে শুরু করলেন।

মাকে সাহায্য করল জায়ানের বড় আপু মাদিহা। ভাত খেয়ে জায়ানের মা তাদের তাগদা দিলেন, তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ার জন্য। জায়ানের চোখে তো ঘুম নেই। অনেক চেষ্টা করে সে ঘুমাল। মধ্যরাতে তার ঘুম ছেড়ে দিল। সে ভাবল, সকাল হয়ে গেছে। বিছানার পাশে রাখা টেবিলে সময় দেখতেই সে হতাশ হয়ে গেল। জায়ান কিন্তু আগে ঘড়ির কাটার সময় চিনত না। তার আপু মাদিহা তাকে সময় শিখিয়ে দিয়েছে। এখন সে সময় চিনতে পারে।

তারপর জায়ান আবারও ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম ভাঙে তার মায়ের ডাকে, জায়ান! আব্বু ওঠো, দাদুবাড়িতে যাবে না? এ কথা শুনেই জায়ান উঠে পড়ল।

সে দাঁত ব্রাশ করে গোসল করে রেডি হয়ে গেল। আজ তার মনে অনেক আনন্দ! গাড়িতে করে রেলস্টেশনের দিকে রওনা হলো তারা। রেলস্টেশনে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনধারণের দৃশ্য দেখে মন খারাপ হলো জায়ানের। নয়টায় তাদের ট্রেন ছাড়ল। জায়ান জানালার পাশে বসল। অনেক উচ্ছ্বসিত সে।

জায়ানের পাশে বসে আছে তার আপু। সে ক্লাস এইটে পড়ে। জায়ান ট্রেন থেকে বাইরের সৌন্দর্য দেখতে লাগল। কী সুন্দর দৃশ্য সব! সবুজ মাঠ, ফসল, কোথাও জেলেরা মাছ ধরছেন—এসব দেখ জায়ান মুগ্ধ হয়। ঝকঝক করে চলা ট্রেনের শব্দও তার ভালো লাগে। তারপর জায়ানের বাবা তাকে আর তার আপুকে জুস খেতে দিলেন। জুস খেয়ে জায়ান বোতলটি বাইরে ফেলে দিল।

জায়ানের বাবা তাকে কাছে নিলেন। সে বাবার কোলে বসল। তার বাবা মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললেন, জায়ান, যদি তোমার পরিষ্কার জামায় কাদা লাগে, সেটা কেমন দেখাবে আব্বু?

জায়ান সঙ্গে সঙ্গে বলল, খুব বাজে। এটা শুনে তার বাবা বললেন, এই যে তুমি রাস্তার পাশে বোতল ফেললে, এটা কি ঠিক? জায়ান বলল না। তারপর বাবা বললেন, এ রকম আর কখনো করবে না আব্বু। এটা আমাদের জন্মভূমি। একে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখা আমাদের দায়িত্ব। ময়লার কারণে অনেকের ক্ষতি হতে পারে।

জায়ানের মাথায় কথাগুলো ঘুরপাক খেতে লাগল। একটু পর ঘুমিয়ে পড়ল জায়ান। স্বপ্ন দেখল, সে একটি ময়লার স্তূপে বসে আছে। চারপাশে শুধুই ময়লা। দুর্গন্ধে তার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। তবুও সে বেরুতে পারছে না। তাকে বলা হলো, এসব ময়লা তুমি যেখানে–সেখানে ফেলেছ। তুমি যথাস্থানে ময়লা ফেলোনি। জায়ান পালিয়ে যেতে চেষ্ঠা করে, কিন্তু পালিয়ে যেতে পারে না। সে তার মাকে খুঁজতে থাকে, কিন্তু কোথাও তার মা নেই। যত দূর জায়ানের চোখ যায়, সে শুধু ময়লার স্তূপ দেখতে পায় সে। সে ভীষণ অনুতপ্ত হয়। জায়ান তার বাবা ও আপুকেও খুঁজে পায় না। হুট করেই ঘুম থেকে কেঁদে ওঠে জায়ান। ভীষণ ঘেমে গেছে সে। তার মাকে জড়িয়ে ধরে জায়ান। সে তার ভুল বুঝতে পারে এবং প্রতিজ্ঞা করে, আর কখনো যেখানে–সেখানে ময়লা ফেলবে না। মায়ের কোলে বসেই জায়ান পাড়ি দেয়, বাকি পথটুকু!

*লেখক: মো. আবীর আল-নাহিয়ান, আটগ্রাম, জকিগঞ্জ, সিলেট