৯০ বছরের দ্বারপ্রান্তে ঢাকা মোহামেডান

মোহামেডান ফুটবল দল, ১৯৫৬ছবি: সংগৃহীত

প্রায় ২৩ বছর পর আমার প্রাণের দল ঢাকা মোহামেডান ২০২৪-২৫ মৌসুমে দেশের প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের শিরোপা জিতেছে। পেশাদার লিগ চালুর পর এবারই প্রথম কোনো শিরোপা পেল ঢাকা মোহামেডান। ২০০১ সালে বিদায়ের পর থেকে বলা যায়, খেলাধুলার অঙ্গন থেকেই স্বেচ্ছায় নির্বাসনে যাই। শৈশব, কৈশোর বা তারুণ্যের ভালোবাসাকে তো আর ভুলে থাকা যায় না। গত ২৪ থেকে ২৫ বছরে মোহামেডান এবং দেশের ফুটবল ক্রমাগত পিছু হটায় সব সময়ই ব্যথিত ছিলাম।

ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৩৬ সালে ঢাকার হাজারীবাগে। তখনকার ঢাকার মুসলিম সমাজে ক্রীড়া জাগরণ সৃষ্টি করে এই ক্লাব। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর ঢাকার ক্রীড়াঙ্গনে এক শূন্যতার সৃষ্টি হয়। তখন কলকাতা মোহামেডানের বিখ্যাত ফুটবলার মোহাম্মদ শাহজাহান ঢাকায় এসে ঢাকা মোহামেডানের দায়িত্ব নেন। তিনি ঢাকা মোহামেডানকে সুসংগঠিত ও পুনর্গঠিত করেন। ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত ঢাকার ফুটবলে একক প্রাধান্য ছিল ঢাকা ওয়ান্ডার্সের। ১৯৫৬ সালের পর ঢাকা মোহামেডান ধীরে ধীরে ঢাকার ফুটবলে প্রাধান্য বিস্তার করতে থাকে। ১৯৫৬ সালে প্রথমবারের মতো ঢাকা লিগের ফাইনাল খেলে ও রানার্সআপ হয়। ১৯৫৭ সালে প্রথমবারের মতো মোহামেডান ঢাকা লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়।

আমার কাছে মনে হয় সামগ্রিকভাবে দেশের ফুটবল ও ক্লাবের অবস্থা খুব একটা স্থিতিশীল নয়। বর্তমান বাস্তবতা হলো দেশে ফুটবলের প্রতি তেমন একটা আগ্রহ না থাকা আর ক্লাবসংস্কৃতির অনুপস্থিতির কারণে মোহামেডান-আবাহনীর প্রতি মানুষের যে উন্মাদনা ছিল, সেটার তেমন কিছুই এখন আর অবশিষ্ট নেই। বরং বসুন্ধরা কিংসের মতো ক্লাব মোহামেডান-আবাহনীর চেয়ে নতুন প্রজন্মকে বেশি আকৃষ্ট করতে পারছে। আমার কাছে মনে হয় আর কয়েক বছরের মধ্যে যদি নতুনভাবে চেষ্টা করা যায়, তবে মোহামেডান তার আগের অবস্থানে যেতে না পারলেও কিছুটা হলেও পুরোনো ঐতিহ্য ফিরে পেতে পারে।

‘নাগরিক সংবাদ’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

মোহামেডানের বর্তমান লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে যে অবস্থান, সেটা থেকে বেরিয়ে এসে বা কিছুটা পরিবর্তন করে পুনরায় গণমানুষের ক্লাব হিসেবে এর অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে ক্লাবের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে এর বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। ফুটবলের উন্নয়নের জন্য একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করে অনতিবিলম্বে কাজে নেমে যেতে হবে। সাভারে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত মোহামেডানের নিজস্ব জমিতে স্থায়ী মাঠসহ ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণ এবং সেখানে ফুটবল, ক্রিকেট ও হকির একাডেমি প্রতিষ্ঠার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।

ক্লাবের সমর্থকদের ও নিজেদের মধ্যে দলাদলি পরিহার করে একজোট হয়ে খেলার মাঠে উপস্থিতি বাড়ানোসহ অন্যান্য বিষয়ে আরও ভালোভাবে অবদান রাখতে হবে। বর্তমানে মোহামেডান সমর্থকদের যে বিভিন্ন গ্রুপ রয়েছে, যেমন সমর্থক দল, মোহাপাগল, আমাদের মোহামেডান, ফ্যানক্লাব কিংবা আল্ট্রাস, ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট ওয়ারিয়ার্স—যার যার নিজস্ব অবস্থানে থেকে মোহামেডান সাপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন কিংবা এ জাতীয় কোনো একক প্ল্যাটফর্মের অধীন ঐক্যবদ্ধ হয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করলে তা আরও অনেক বেশি কার্যকর হবে। ক্লাব কর্তৃপক্ষেরও উচিত হবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন কার্যক্রমে সমর্থকদের আরও বেশি করে সম্পৃক্ত করা।

২০২৬ সালে ঢাকা মোহামেডানের ৯০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপিত হবে। সেই উৎসবকে সামনে রেখে কাজ করতে হবে। খেলোয়াড়দের বকেয়া পাওনা পরিশোধ, এএফসির লাইসেন্স প্রাপ্তি ও আগামী মৌসুমের জন্য ভালোমানের ফুটবল, ক্রিকেট ও হকি দল গঠনের জন্য এখন থেকেই জোর তৎপরতা শুরু করতে হবে।

  • লেখক: ইফতেখারুল ইসলাম টিটন, সাবেক নির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ও ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব