জিপিএ–৫ ছাড়াও স্বপ্ন ছোঁয়া যাবে

চট্টগ্রামে হাজী মোহাম্মদ মহসিন কলেজে শিক্ষার্থীদের উল্লাসছবি: সৌরভ দাশ

প্রতিবছর পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর দেখা যায় হাজারো শিক্ষার্থী জিপিএ–৫ পেয়েছেন। এ আনন্দ তাঁরা নেচে গেয়ে উদ্‌যাপন করেন। দীর্ঘদিনের কঠোর পরিশ্রম আর প্রস্তুতির পর এমন সাফল্য তাঁদের অভিভাবকদের মুখে হাসি ফুটায়। মিষ্টি বিতরণ হয় বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের বাসায়। গলায় তৃপ্তির ঢেকুর ওঠে আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের। মুদ্রার ওপিঠে যাঁরা কঠোর পরিশ্রম ও প্রাণপণ চেষ্টা করেও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল জিপিএ–৫ অর্জন করতে পারেননি। ভাগ্য যাঁদের সহায় হয়নি হতাশা, অনুশোচনা ও গ্লানি তাঁদের আঁকড়ে ধরে। ফলে অনেকেই নিজের অজান্তে নীরবে কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন।  

শিক্ষার্থীরা মনে করেন জিপিএ–৫ না পাওয়া মানেই জীবন ব্যর্থ। যাঁরা ভালো ফল করেছেন, তাঁদের সঙ্গে তাঁদের তুলনা করা এই শিক্ষার্থীদের হীনম্মন্যতা আরও তীব্র করেন। তাঁদের বোঝানো হয় যাঁরা জিপিএ–৫ পেয়েছেন তাঁরা সফল। তুমি সফল হতে পারোনি। অর্থাৎ ব্যর্থ হয়েছো। অভিভাবক থেকে শুরু করে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন সবাই তাঁদের নিয়ে কটূক্তি করেন। অথচ জিপিএ–৫ জীবনে সফলতার একমাত্র মানদণ্ড নয়। অভিভাবকদের উচিত ছেলেমেয়েকে অন্যের সঙ্গে তুলনা না করে উৎসাহ প্রদান করা। তাঁদের মনোবল শক্ত করার পরামর্শ প্রদান করা। হতাশাগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের প্রতি বিরূপ আচরণ এবং উদাসীনতা তাঁদের আত্মহননের পথে প্ররোচিত করে।

গত বছর জিপিএ-৫ প্রাপ্ত প্রায় এক লাখ শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলে আসন পাননি। কারণ, দেশের শীর্ষস্থানীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ মিলিয়ে আসন রয়েছে ৮০ হাজারের মতো যা জিপিএ–৫প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের তুলনায় অনেক কম। জিপিএ–৫ না পেয়েও হাজার হাজার শিক্ষার্থী শীর্ষস্থানীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয় তাঁদের পরিশ্রম, মেধা ও যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদে অনেক শিক্ষার্থী রয়েছেন, যাঁদের এসএসসি বা এইচএসসি অথবা কোনো পরীক্ষায়ই জিপিএ–৫ ছিল না। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজেও এমন উদাহরণ পাওয়া যাবে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক, বিসিএস ক্যাডার, আমলা ও সফল ব্যবসায়ী রয়েছেন, যাঁরা সব পরীক্ষায় জিপিএ–৫ পায়নি।

তোমরা হয়ত অবগত আছো যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য জিপিএ–৫ পাওয়া বাধ্যতামূলক নয়। ন্যূনতম জিপিএ হলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন ফর্ম পূরণ করা যায়। গত বছরের তথ্যানুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার জন্য এসএসসি ও এইচএসসি দুই পরীক্ষা মিলে কলা অনুষদের (মানবিক বিভাগ) জন্য ৭.০০, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের জন্য ৭.৫০, বিজ্ঞান অনুষদের জন্য ৮.০০ এবং চারুকলা অনুষদের জন্য ৬.৫০ জিপিএ প্রয়োজন হয়। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য জিপিএ ৯.০০  এবং এককভাবে কোনো পরীক্ষায় জিপিএ ৩.৫০ বা এর বেশি প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ও অনুষদ ভেদে ৬.৫০ থেকে তদূর্ধ্ব জিপিএ হলেই আবেদন করা যায়।

সামনে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা রয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না পেলেও জীবনে সফল হওয়া যাবে। জীবনের সফলতাই প্রকৃত সফলতা। এ জন্য চাই কঠোর ও পরিকল্পনা মাফিক পরিশ্রম ও একাগ্রতা। স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দের আসন নিশ্চিত করতে পারলে এইচএসসি পরীক্ষার ব্যর্থতা অনেকটাই লাগব হয়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য নিয়মিত পড়াশোনা, পরীক্ষা দেওয়া, ঘাটতিগুলো খোঁজে বের করা এবং সেখানে গুরুত্ব দেওয়া সেই স্বপ্নের সিড়িতে পা রাখতে সহায়তা করবে। সর্বোপরি দৃঢ় মনোবল নিয়ে পরিশ্রম করতে থাকলে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হবেই।

লেখক: সাবেক শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।