পোপ ফ্রান্সিস: এক করুণাধারার অনিঃশেষ যাত্রা!
ভ্যাটিকানের অলিন্দে নীরবতা নেমে এসেছে। সেখানকার বাতাসে আজ বিষাদের প্রার্থনা। সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার উঁচু ব্যালকনিতে আর কোনো হাত ওঠে না শুভেচ্ছায়, আর কোনো কণ্ঠ বলে না—‘প্রিয় ভাই ও বোনেরা, শুভ ইস্টার।’ সময় যেন থমকে গেছে এক শুভাশিসপূর্ণ কণ্ঠের শেষ প্রতিধ্বনিতে।
পোপ ফ্রান্সিস, নাগরিক নাম হোর্হে মারিও বেরগোলিও—মানবতার এক আলোকবর্তিকা, চলে গেলেন জীবনের শেষ পরিক্রমা শেষে। ৮৮ বছর বয়সে থেমে গেল তাঁর হৃদয়ের করুণাধারা, যার উষ্ণতায় সিক্ত হতো তৃতীয় বিশ্বের প্রান্তিক মানুষেরাও।
পোপ হয়েও তিনি ছিলেন বিনয়ের ব্যঞ্জনায় মোড়ানো এক সাধারণ পথচারী। রুপালি লিমুজিন নয়, পছন্দ করতেন সাধারণ বাসযাত্রা। রাজকীয় পোশাক নয়, তাঁর অন্তরজ্জ্বল ব্যক্তিত্বই ছিল প্রধান অলঙ্কার। যিনি বিশ্বাস করতেন—ধর্ম মানে দেয়াল নয়, সেতু; বেদি নয়, আলিঙ্গন।
তাঁর চোখে ঈশ্বর ছিলেন সবার এবং প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই তিনি খুঁজে নিতেন ঈশ্বরের উপস্থিতি। একদিন ছিলেন নাইট ক্লাবের বাউন্সার, হয়তো সেখানেই তিনি শিখেছিলেন—মানুষের মুখোশের অন্তরালের মুখ চিনে নিতে।
আর্জেন্টিনার রক্তে রাঙা দক্ষিণ আমেরিকার মাটি থেকে উঠে এসে তিনি হলেন প্রথম লাতিন পোপ, ভ্যাটিকানের ইতিহাসে এক মহাসংলগ্ন বিরল সংযোজন। তাঁর চোখে ছিল আকাশের প্রশান্তি, কথায় ছিল সমুদ্রের গভীরতা। তিনি ভালোবাসতেন টোঙ্গো নাচ, সমর্থন করতেন সান লরেঞ্জো ক্লাব, আর সেই ভালোবাসাগুলোকেই তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন ধর্মের প্রাচীরের বাইরেও—মানুষের হৃদয়ের ভেতরে।
যিনি ছুঁয়ে যেতে চেয়েছিলেন হৃদয়, বদলে দিতে চেয়েছিলেন ভাবনার দিগন্ত—তাঁর প্রস্থান আমাদের জন্য শুধু এক মৃত্যুসংবাদ নয়, এক যুগের অন্তিম অধ্যায়।
আজ, পিটার্স স্কয়ারের আকাশ যেন একটু বেশি মেঘাচ্ছন্ন, যেন বাতাসও থমকে কাঁদে।
বিদায়, পোপ ফ্রান্সিস।
আপনি ছিলেন ঈশ্বরের একজন প্রকৃত দূত—জাঁকজমকের রাজপথ ছেড়ে যে এসেছিলেন মাটির গলি ধরে মানুষের ঘরে ঘরে। আপনার বিনয়, আপনার মমতা, আপনার সাহস আর স্পর্শ মানুষের অন্তরে রয়ে যাবে দীর্ঘকাল। শান্তিতে ঘুমান, মানবতার এই শ্রেষ্ঠ যাজক।
Requiescat in pace.
শান্তিতে বিশ্রাম নিন।
লেখক: সাংবাদিক
‘নাগরিক সংবাদ’–এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই–মেইল: [email protected]