একঝাঁক উলুধ্বনি চাঁদহাট গ্রামের গঙ্গাখোলাকে প্রাণ দেয়। চারদিক ঘেরা গাছগাছালিতে। ওরা নেচে ওঠে। পাখিরা একদিক থেকে অন্যদিকে উড়ে যায়। এরই মধ্যে সুমন তার ভাড়া করা গাড়ি থেকে নেমে পড়ে।
বাড়ি থেকে জানানো হয়েছে, এবারের গঙ্গাপূজা উপলক্ষে বাড়তি যোগ কৃষ্ণযাত্রা। তোমরা এখন প্রবাসে। তোমাদের ছাড়া এই আনন্দ যে অসম্পূর্ণ! কথাগুলো ওর মাথায় ঘোরে। সুমন ঘুমাতে যায়।
ও সবাইকে ডাক দেয় গ্রুপ চ্যাটে। সামাজিক মাধ্যমে কারও আসতে দেরি হয় না। সৌদি আরব থেকে শামিল হয় প্রদীপ, দীপ্ত, সতেজ, বসু, রাজীব, শেখর। মালয়েশিয়া থেকে যুক্ত হয় অনিক, দীপ, মিন্টু। সাইপ্রাস থেকে অমিত।
সুমন সিঙ্গাপুর প্রান্তে। বলে, ঠিকই তো। আমাদের পূজা আর আমরা নেই। এটা বাড়ির কষ্ট, ব্যথা আমাদেরও। প্রবাসে থাকলে...
সুমনের কথা শেষ হতে না হতে প্রদীপ বলে, এই এক সমস্যা। বাড়ির জন্য মন আমাদের উতলা। অমিত বরাবরের মতো একটু জোর দিয়েই বলে, বাড়িও আমাদের জন্য কাঁদে।
এতগুলো সন্তান যে বাড়ির, তার মর্যাদা ধরে রাখার দায়িত্ব সবার। বাড়িতে থাকার প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। দীপ্ত দীপ্তি নিয়ে বলে যায়। বলে, আমরা একটা চিঠি লিখতে পারি। মিন্টু, সতেজ, শেখর—ওরা কিছু বলতে যাচ্ছিল।
কিন্তু যোগাযোগটা একটু দুর্বল হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর অনিক, রাজীব দৃশ্যপটে আসে।
সুমন এবার বলে, হ্যাঁ, লিখে জানাই। মনবাড়ি! তোমার মন খারাপ? না, তুমি তো আমাদের মনের মধ্যেই আছ।
বিমানবন্দর পার হয়ে সুমন বাড়ির দিকে ছোটে। কীভাবে যেন প্রবাসের অন্যরাও মিলে যায় তার সঙ্গে। ঢাকা মাওয়া সড়ক।...বনবীথির মধ্য দিয়ে সে হু হু করে এগোয়।
উলুধ্বনির রেশ কাটেনি। এরই মধ্যে ‘রাজা হরিশ্চন্দ্র’ যাত্রা। সুমন শ্রোতা–দর্শকের সামনের দিকে বসে। দেখে, সহযাত্রীরাও একই সারিতে অন্যদিকে বসা। তারা গভীর মনোযোগী তখন। ভাগ্যের ফেরে রাজা তাঁর রাজ্য হারান। স্ত্রী–সন্তান বিক্রি করতে বাধ্য হন। তিনি ছিলেন সচ্চরিত্রের অধিকারী। এ জন্য গৌতম মুনি তাঁকে পথ দেখালেন। রাজা তাঁর সব ফিরে পেলেন।
কি রে, ছুটির দিন, তাই বলে কতক্ষণ ঘুমোবি আর! সঙ্গী ডাক দেয়। সুমন তাড়াতাড়ি উঠে পড়ে। তখনো মনবাড়ি গান হয়ে বাজে।
*লেখক: নিমাই সরকার, কথাসাহিত্যিক, প্রকৌশলী।