কেমন ছিল ইন্টারনেট ছাড়া পাঁচ দিন

ফাইল ছবি

বর্তমান যুগটা তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। প্রযুক্তিনির্ভর এই যুগের অন্যতম উপাদান হলো ইন্টারনেট। বর্তমানে পুরো পৃথিবী হয়ে উঠেছে ইন্টারনেটনির্ভর। ইন্টারনেট পুরো পৃথিবীর মানুষকে একটা বন্ধনের মাধ্যমে যুক্ত করে দিয়েছে। এর মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের খবর আমাদের কাছে আসছে সহজেই। ইন্টারনেটের মাধ্যমে পুরো পৃথিবী এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। ইন্টারনেট মানুষের জীবনকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। ইন্টারনেট ছাড়া বলতে গেলে এখন জীবন প্রায় অচল।

পৃথিবীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও এখন প্রায় ইন্টারনেটনির্ভর একটা দেশ। ব্যাংকের ডিজিটাল লেনদেন থেকে শুরু করে, মোবাইল ব্যাংকিং, ট্রেনের টিকিট, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বিল প্রদান, পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ ইত্যাদি এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে হয়ে থাকে।

দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে হঠাৎ করে দেশের ইন্টারনেটের সব ধরনের সেবা বন্ধ রাখা হয়। যা স্থায়ী হয় প্রায় পাঁচ দিন পর্যন্ত। গত বুধবার (১৭ জুলাই) মধ্যরাত থেকে মোবাইলে নেটওয়ার্কের দ্রুতগতির ফোর–জি সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ কারণে বুধবার থেকে মোবাইলে নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে কেউ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছিল না। পরবর্তী সময়ে গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সন্ধ্যায় সারা দেশের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। গত মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) রাতে পরীক্ষামূলক দেশের কিছু জায়গায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সচল করা হয়েছে। যদিও এখনো চলছে না ফেসবুক বা কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। বিশেষ কিছু ওয়েবসাইটের জন্য আপাতত সচল করা হয়েছে।

দীর্ঘ পাঁচ দিন সারা দেশের সব মানুষ ইন্টারনেট পরিষেবার বাইরে ছিল। এর আগে বাংলাদেশে কখনো এত দীর্ঘ সময়ের জন্য সব ধরনের ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা হয়নি। দীর্ঘদিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।

দেশের সব মানুষ যখন রুদ্ধশ্বাসে ফেসবুকে স্ক্রল করে চলেছে চলমান পরিস্থিতির আপডেট জানার জন্য, ঠিক সেই সময় দেশের সব ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হওয়ার পর দেশের চলমান পরিস্থিতির সব ধরনের আপডেট পাওয়া একপ্রকার বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে সর্বস্তরের মানুষ উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগের মধ্যে সময় কাটাতে থাকে।

কেননা বর্তমান সময়ে দেশের সব খবরের প্রধান উৎস ছিল ফেসবুক, অনলাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম। ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ার কারণে সারা দেশের যোগাযোগ একপ্রকার বন্ধ হয়ে যায়। আন্দোলনের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্ক জানার কোনো রকম উপায় ছিল না।

এ ছাড়া ইন্টারনেট দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে নানা রকম ভোগান্তির শিকার হয় সাধারণ জনগণ। বৈদ্যুতিক মিটার রিচার্জ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। ইন্টারনেট না থাকার কারণে মিটার রিচার্জ করা কষ্টকর হয়ে পড়ে, যার ফলে বিদ্যুৎ অফিসে দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। ইন্টারনেটের অভাবে মোবাইল ব্যাংকিং একপ্রকার বন্ধ হয়ে যায়।

ইন্টারনেট না থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের খবর সংগ্রহ করা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। যার ফলে সংবাদপত্র এবং টিভি চ্যানেলগুলোর দেশের বিভিন্ন প্রান্তের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। অধিকাংশ প্রবাসীর সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যমে ইন্টারনেট। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় প্রবাসে থাকা স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তাঁদের কোনো রকম খোঁজখবর নেওয়ার উপায় না থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়েন প্রবাসী ও তাঁদের স্বজনেরা।

দেশের একটা বড় অংশ বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করে থাকেন। ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে তাঁরা বিরাট ক্ষতির মুখে পড়েন। তাঁদের কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। অনেকেই তাঁদের অসম্পূর্ণ প্রজেক্ট নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েন। এ ছাড়া অনলাইন পেমেন্ট, ক্লাইন্টের সঙ্গে যোগাযোগ—সবই বন্ধ হয়ে যায়। এ জন্য ফ্রিল্যান্সারদের অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। তা ছাড়া বর্তমান সময়ে অনলাইনভিত্তিক অনেক ব্যবসা গড়ে উঠছে। যেগুলোর একমাত্র মাধ্যম ইন্টারনেট। ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের।

বর্তমানে পড়াশোনার অন্যতম সহায়ক হচ্ছে ইন্টারনেট। গুগল, চ্যাটজিপিটি ইত্যাদি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় সহায়তা করে। এ ছাড়া ইউটিউবসহ অন্য অনলাইন প্লাটফর্ম পড়াশোনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইন্টারনেট না থাকার কারণে সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায়ও ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।

প্রযুক্তিনির্ভর এই যুগে একটা সময় ইন্টারনেট ছাড়া এক ঘণ্টাও আমরা কল্পনা করতে পারতাম না, সেখানে দীর্ঘ পাঁচ দিন গোটা দেশ ইন্টারনেটবিহীন। দেশের মানুষের জন্য এ এক নতুন অভিজ্ঞতা। ইন্টারনেটবিহীন থাকার পরই মানুষ নতুন করে উপলব্ধি করতে শিখেছে যে আমরা কতটা ইন্টারনেট–নির্ভরশীল। দৈনন্দিন কাজে আমাদের কোনো না কোনোভাবে ইন্টারনেটের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সারা দেশের ইন্টারনেট সেবা সম্পূর্ণরূপে স্বাভাবিক হওয়ার ব্যাপারে এখনো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো কিছু নিশ্চিত করে জানায়নি। তবে তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক হোক দেশের ইন্টারনেট সেবা—এটাই চাওয়া সাধারণ জনগণের।

*লেখক: শাওন মিরাজ, শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ