ব্যর্থতাই শক্তির উৎপত্তিস্থল

দশম বিবাহবার্ষিকী অনুষ্ঠানে হাস্যোজ্জ্বল জাকারবার্গ ও প্রিসিলা চ্যানছবি; ফেসবুক

চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। এ যেন ব্যর্থতা ও সফলতার চূড়ান্ত ধাপ। কেউ সফল হয়ে সদা হাস্যোজ্জ্বল, কেউ ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে হয়তো চরম হতাশাগ্রস্ত। ব্যর্থতা ও সফলতার গল্প শুধু ভর্তিযুদ্ধেই সীমাবদ্ধ নয়; স্নাতক, স্নাতকোত্তরের অসংখ্য শিক্ষার্থীর সফলতা ও ব্যর্থতার গল্প রয়েছে। গল্প রয়েছে স্বপ্ন দেখা হাজারো মানুষেরও। কেউ ব্যবসায় সফল হতে গিয়ে ব্যর্থ, কেউ প্রেমে ব্যর্থ, কেউবা আবার নিজের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ। ব্যর্থতা থেকে শক্তি সঞ্চয় করে কীভাবে সফল হওয়া যায়? জেনে আসা যাক কিছু সমীকরণ।

শতকরা কতভাগ মানুষ ব্যর্থ হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে, তা নিয়ে একটি পরিসংখ্যান করা হয়। এ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রজেক্টের ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ, প্রথম ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশ এবং নতুন প্রোডাক্ট লঞ্চিংয়ের ক্ষেত্রে ৯৫ শতাংশ মানুষ তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে ব্যর্থ হয়। এ ব্যর্থতার পেছনে কিছু কারণ উল্লেখ করা হয়েছে—লক্ষ্য ঠিক না করা, যথেষ্ট যোগাযোগের অভাব, সঠিক পরিকল্পনার অভাব, ব্যর্থতাকে ভয় পাওয়া, দেরিতে শুরু করা, পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে চলতে না পারা। এসব কারণ ঠিকঠাক মানিয়ে চলতে পারলে ব্যর্থতাকে কাটিয়ে উঠে সফল হওয়া সম্ভব। যাঁরা সফল, তাঁরা এভাবেই হয়েছেন।

চলুন জেনে আসা যাক ব্যর্থ হয়েও সফল হয়েছেন যাঁরা, তাঁদের নিয়ে কিছু কথা—

রবার্ট ব্রুস

স্কটিস স্বাধীনতাযুদ্ধের বীর রবার্ট ব্রুস একবার যুদ্ধে ব্যর্থ হয়ে তিনি উত্তর আয়ারল্যান্ডের একটি দ্বীপে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তখন তিনি একটি মাকড়সাকে বারবার চেষ্টা করতে দেখেন এক গুহার ছাদের এক পাশ থেকে আরেক পাশে জাল বুনে যাওয়ার। ব্যর্থতার একপর্যায়ে মাকড়সাটি সফল হয়। এরপরই উৎসাহিত ও উজ্জীবিত হয়ে রবার্ট আরও গেরিলা আক্রমণ করতে থাকেন এবং একসময় সফল হন।

লিঙ্কন মেমোরিয়ালে আব্রাহাম লিঙ্কনের ভাস্কর্য
ছবি: সংগৃহীত

আব্রাহাম লিঙ্কন

২৩ বছর বয়সে আব্রাহাম লিঙ্কনের চাকরি চলে যায়। ছয় থেকে আটবার নির্বাচনে পরাজিত হন। এত ব্যর্থতার পরও তিনি রাজনীতি না ছেড়ে চেষ্টা করে যান। অবশেষে ১৮৬১ সালে, ৫২ বছর বয়সে তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগের প্রায় পুরোটাই ছিল তাঁর ব্যর্থতার গল্প।

আলবার্ট আইনস্টাইন

১৮৭৯ সালে জন্ম নেওয়া এই জার্মান জিনিয়াসকে একটা সময় পর্যন্ত বোকা মনে করা হতো। কথা বলা শিখতেই তাঁর চার বছর লেগেছিল। পড়াশোনায় ছিলেন একদম কাঁচা। ১৬ বছর বয়সে স্কুলে ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করেন। তিনি একাধিকবার পড়াশোনা বাদ দেওয়ার চিন্তা করেছিলেন। তাঁর বাবার মারা যাওয়ার আগে একমাত্র দুঃখ ছিল যে তাঁর বোকা ছেলে হয়তো জীবনে কিছু করতে পারবে না।

কিন্তু একটা সময়ে এই মানুষই পৃথিবীর চেহারা পাল্টে দিয়েছেন, বিজ্ঞানে অবদানের জন্য জিতেছেন নোবেল পুরস্কারও। ‘ডাল ব্রেন’ নিয়ে তিনি পদার্থবিজ্ঞানের বেশ কয়েকটি মূল সূত্র সৃষ্টি করে গেছেন। প্রমাণ করেছেন যে চেষ্টা করলে সবাইকে দিয়েই সবকিছু সম্ভব।

বিল গেটস
রয়টার্সের ফাইল ছবি

বিল গেটস

প্রথম প্রজেক্ট অপমানজনকভাবে ব্যর্থ হয়েছিল। পরে মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠা করে সফল হন।

ই-কমার্স জায়ান্ট আলিবাবার সহপ্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা
ছবি: রয়টার্স

জ্যাক মা

কলেজে ভর্তি হওয়ার সময় তিনবার ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করে চতুর্থবার সুযোগ পান। এরপর চাকরি করতে গিয়ে বহুবার ব্যর্থ হন! পুলিশে ১০ জন পরীক্ষা দিয়ে ৯ জন চাকরি পেলেন, বাদ পড়েছিলেন জ্যাক। কেএফসিতে ২৪ জনের মধ্যে ২৩ জনের চাকরি হলেও বাদ পড়েছিলেন জ্যাক। বহুবার ব্যর্থ হয়ে আলিবাবা প্রতিষ্ঠা করে তিনি সফল হন।

টমাস আলভা এডিসন

স্কারলেট ফিভার নামে একটি জটিল অসুখ হয়, এ কারণে তিনি কানে খুব একটা ভালো শুনতেন না। পড়াশোনায় ভালো ছিলেন না। পরে তিনি বৈদ্যুতিক বাতি আবিষ্কারের সময়ে অনেকবার এ প্রকল্প ব্যর্থ হয়েছিল। তবু তিনি চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন, অবশেষে সফল হয়েছিলেন। এ ছাড়া তিনি চলচ্চিত্র, অডিও রেকর্ডিং, এনক্রিপ্টেড টেলিগ্রাফ সিস্টেম, আধুনিক ব্যাটারি—এ ধরনের হাজারের ওপর আবিষ্কার করে পৃথিবীকে ঋণী করে গেছেন।

মার্ক জাকারবার্গ
ছবি: রয়টার্স

মার্ক জাকারবার্গ

বর্তমানে বহু জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক হয়ে উঠেছে অধিকাংশ মানুষের কাছে অক্সিজেনের মতো। ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই—এ রকম মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর! ছোট বাচ্চা বা হিতাহিত জ্ঞানহীন মানুষ ছাড়া প্রায় সবার রয়েছে ফেসবুকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা। অথচ এ ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গেরও রয়েছে ব্যর্থতার গল্প। তবু তিনি বিশ্বের সফল ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম।

ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হচ্ছেন না, চাকরির পরীক্ষায় টিকছেন না, ব্যবসায় সফল হচ্ছেন না বলে চরম হতাশায় ভোগার কিছুই নেই। ব্যর্থতা হতে পারে আপনার চালিকা শক্তি। চরম উদ্দীপনা থাকলে ব্যর্থতাই হতে পারে আপনার শক্তির উৎপত্তিস্থল। মনীষীরা দেখিয়ে দিয়েছেন ব্যর্থতা থেকে কীভাবে সফল হতে হয়। আপনিও পারবেন, যদি আপনার দৃঢ় প্রত্যয় থাকে, উদ্দীপনা থাকে, আগ্রহ থাকে।

সফল আর জ্ঞানী হিসেবে পরিচিত বিশ্বের কয়েকজন বিখ্যাত নারী বলেছেন, জীবনে কয়েকটি মূলমন্ত্র অনুসরণ করতে পারলে তা যে কাউকে সফল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে সাহায্য করবে।

সবার আগে নিজেকে গুরুত্ব দিন, সামনে এগিয়ে যাওয়া থামাবেন না, অন্যরা আপনাকে নিয়ে কী ভাবছে তা ভাবার দরকার নেই, দৃষ্টিভঙ্গি বদলান, ইতিবাচক মানুষের চারপাশে থাকুন, মাথা খাটান, নিজেকে মাঝেমধ্যে ছুটি দিন। ব্যর্থতাই জীবনের শেষ কথা নয়।

*লেখক: মো. নিয়ামতুল্লাহ, শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া