শহর বধূর কলা

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

প্রতি রাতের মতো সুধা বেরিয়ে পড়ল। এই রাস্তা–সেই রাস্তা ঘুরে সে আগের জায়গায় এসে দাঁড়াল। রাত তখন সাড়ে ১০টা। সুধার একজন পরিচিত মানুষ, সে সময় চাইলো রাত একটায়। দাম–দর মিটে গেল! মাঝে আরেকটি কাজের কথা হতে হতে তা ফসকে গেল। গত রাতে সুধা একটা কমদামি কাস্টমার পেয়েছিল। তার আগের রাত গড়ের মাঠ। সুধার দেওয়া ঠিকানায় কাস্টমার আসবে। কাস্টমার পুরোনো জায়গা চেনে। সুধা গরিব মানুষ, তার গ্রাহকেরাও নিম্নশ্রেণির। গ্রাহকদের হোটেলে নিয়ে গেলে হোটেলের ভাড়া আর দালালি দিতে হয়। তাই সে রাস্তার নাইটগার্ড কাম কেয়ারটেকারকে ম্যানেজ করেছে। নামমাত্র সেলামি আর ওটা দিলেই খুশি!

আজ সুধার শরীর তেমন ভালো নেই। আবার বাড়ির হাঁড়িতেও কিছু নেই। সুধা তার কাজের জায়গায় গেল। আজ চুক্তি একটা, কিন্তু গ্রাহক একাধিক; তাই টাকাও একটু বেশিই। শরীর খারাপ হলেও আজ কাজ করতে পারলে কাল সে হয়তো আসবে না। আর এখন এমনি এমনি মানুষ বের হতে চায় না। অনেকেই দ্বিধায় থাকে; থাকে ভয়ে। তবে সুধাময়ীর গ্রাহকেরা ভালো ভয় পায় না!

সুধা নাইটগার্ডের সঙ্গে গল্প করছিল। নাইটগার্ড আজ বেশি আবেগপ্রবণ ও আবেদনময়ী। সে গত মাসে বাড়ি যায়নি। বউয়ের সঙ্গ পায়নি। কয়েক দিন ধরে নাইটগার্ড খুব ব্যস্ত ছিল। সে সুধার সঙ্গে ঠিকমতো কথা বলতে পারেনি। শুধু বলত, তোর সঙ্গে কথা আছে। আজ নাইটগার্ডের চোখেমুখে অন্য ভাষা। শুধু সুধার প্রশংসা করেই যাচ্ছে। এই ভাষা বুঝতে সুধার দেরি হলো না। সুধার যে শরীর ভালো নেই। আজ সে অপারগ। সুধা কখনো না করেছে কি? জীবন-জীবিকা, ব্যবসার প্রয়োজনে মানুষ কত কী–না করছে। আর সুধার শুধু বেঁচে থাকার তাগিদ। এ সময়ে কাস্টমার পাওয়া কঠিন, হারালে চলবে? ভালোবাসা পরেও করা যাবে।

সুধা মহাচিন্তায় পড়ে গেল। সামনে দেখতে পেল তার কাস্টমার আসছে। এদিকে নাইটগার্ডের লোভী চাহনি। তখন একটা বুদ্ধি মাথায় এল।

: কি রে কথা কস না কেন? আইজ আমার ঘরে চল তুর লাইগ্যা খাওন রাখছি; খাইবি চল।

: তুমার ঘরে যামু রাস্তা পাহারা দিব কেডায়?

: আখুন দিনেই লুক নাই; আবার রেত্রে। আরে বেশি সময় নিমু না! তোর তো অহন কাস্টমার দেহি না। চল; সুধার হাত ধরেছে নাইটগার্ড।

: আমার হাত ধইর না।

: হাত ছেড়ে দিল নাইটগার্ড। তুই ঘর থেইক্কা বাইর হইলি ক্যান?

: ক্যান তুমি কি ঘরে খাওন দিয়া আইবা নাকি? রসের নাগর আমার! আমার খিদা নাই? ঘরে বুড়া মা নাই?

: তয় মইনসের লগে কাজ করবি যে তাগো যদি জ্বর অয়!

: তাগোডা তুমার ভাবা লাগব না। আমি তুমারে ঠকাইতে পারুম না। তারা আহে কেন আমার কাছে?

সুধার মুখে মিষ্টি হাসির ছটা, আর নাইটগার্ড বিমূর্ত।

সুধার আজকের কাস্টমার তাকে বারবার ইশারা করছে। সুধা গার্ডের সামনে থেকে হাসতে হাসতে অকুস্থলে চলে এল; সুধা বুঝতে পারছে গার্ড জ্বলছে।

: এই মাগী ডাক দিলে এত দেরি অয় ক্যান? একলগে কয় কাস্টমার ধরিস?

সুধা কোনো জবাব দিল না, তার মুখে কৃত্রিম হাসির ছটা।
সুধা নিজকে অনাবৃত করায় রত।