দিনাজপুর জিলা স্কুল ব্যাচ ২০০১–এর তত্ত্বাবধানে ‘ডিজেডএস-০১ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন’ উদ্বোধন

২০২৪ সালের ১৮ জুন দিনাজপুর জিলা স্কুল ২০০১ ব্যাচের তত্ত্বাবধানে আমরা স্কুলভিত্তিক অলাভজনক সমাজসেবা প্রতিষ্ঠান ‘ডিজেডএস-০১ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন’-এর উদ্বোধন করি। ফাউন্ডেশন তৈরির পেছনে আমাদের অনুপ্রেরণার গল্পটা একটু স্পর্শকাতর।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি, তখন করোনাকাল। দেশজুড়ে লকডাউন শুরুর তোড়জোড় চলছে। এরই মধ্যে আমাদের দিনাজপুর জিলা স্কুলের ২০০১ ব্যাচের বন্ধু মোকসেদুল করিমের সন্তানের থেলাসেমিয়া ধরা পড়ে। আমাদের চিকিৎসক বন্ধুদের সহযোগিতায় জানতে পারি, সুচিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেওয়া জরুরি। কিন্তু এর চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন এক কোটি টাকা। খবরটা জানার পর আমরা স্কুলের বন্ধুরা একসঙ্গে মিলিত হই করিমের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। করিমের সন্তানের জন্য সাহায্য চেয়ে প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন প্রকাশের পর দেশ ও দেশের বাইরে আমাদের ব্যাচের সব বন্ধু, স্কুলের জুনিয়র ও সিনিয়র ভাইসহ অন্যরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। জিলা স্কুলের ২০০১ ব্যাচের বন্ধুদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় আমরা প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করতে পারি এবং সন্তানের সুচিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠাতে সক্ষম হই। সবার দোয়া ও ভালোবাসায় দীর্ঘ ছয় মাসের চিকিৎসা শেষে শিশুটি সুস্থ হয়ে দেশে ফেরে।

স্কুল ছাড়ার ২০ বছর পর এই ঘটনা আমাদের জিলা স্কুলের ২০০১ ব্যাচের বন্ধুদের আবার একত্র করে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যেকোনো কঠিন কাজ করা সম্ভব, এর একটি বাস্তব উপলব্ধি সবার মধ্যে কাজ করে। তাই ভবিষ্যতে যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য সবাই একসঙ্গে কীভাবে কাজ করতে পারি, এর জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির পরিকল্পনা করতে থাকি।

২০২৪ সালের ২৬ এপ্রিল, আমাদের জিলা স্কুলের ২০০১ ব্যাচের সবার পরিচিত ফখরুল ইসলাম পাভেলের ফোন, ‘আগামীকাল সন্ধ্যায় (২৭ এপ্রিল) আমরা একটা ফাউন্ডেশন করার কথা ভাবছি তাই সবাই একত্র হব।’ সময় ও লোকেশন জানিয়ে মিটিংয়ে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানাল। এরপরই আতিয়ার রহমানের ফোন, ‘আগামীকাল ফাউন্ডেশন নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হবে। আমরা যাঁরা ঢাকায় আছি, সবাইকে উপস্থিত থাকতে হবে।’

২০২৪ সালের ২৭ এপ্রিল। যথাসময়ে পাভেল, আতিয়ার, ফয়সাল, রুমেন, অলিভ, দারা, কৌশিক, কুহেল, হেনা, মুরাদ, মফিজার, মাহফুজ, সবুজ, হাকিম, করিম, অমিতসহ আমরা উপস্থিত হই। প্রাথমিক আলোচনায় ঠিক করি আমাদের ব্যাচের জন্য একটি ফাউন্ডেশন তৈরির। আমাদের কর্মপরিকল্পনাও ঠিক করি। ফাউন্ডেশনের কাঠামো তৈরি করার দায়িত্ব পড়ে আমার ওপর। ফাউন্ডেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ করা হয় ঈদের পরদিন, ১৮ জুন। ইভেন্ট কো-অর্ডিনেশনের জন্য দায়িত্ব নেয় আতিয়ার ও পাভেল।

১৮ জুন। সবার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় দিনাজপুর জিলা স্কুলে প্রথম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন ডিজেডএস ২০০১ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। ‘আমরা স্বপ্ন বুনি বন্ধুত্বের মায়ায়, পথ চলি বন্ধুতার ছায়ায়’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে প্রয়োজনের সময়ে একে অপরকে সহযোগিতা করার অঙ্গীকার নিয়ে এটি তৈরি করা হয়।

দিনাজপুর জিলা স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. আবুল কাশেমের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি ছিল প্রাণবন্ত। স্কুলের মাঠে অনুষ্ঠিত ইভেন্টে ফাউন্ডেশনের লোগো উন্মোচন করা হয়। মেধাবীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করাসহ সব ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রতিশ্রুতি নিয়ে শুরু হয় আমাদের স্বপ্নের পথচলা।

সম্মানীত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের কন্ট্রোলার ও সংগঠনের উপদেষ্টা অধ্যাপক মীর সাজ্জাদ, দিনাজপুর চেক আপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও সংগঠনের উপদেষ্টা মাহবুব মোর্শেদ তমাল, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম।

আরও বক্তব্য দেন ফাউন্ডেশনের পৃষ্ঠপোষক দাদুরবাড়ী গ্র্যান্ড রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী ও সংগঠনের উপদেষ্টা আবদুল মমিন, পাটোয়ারী বিজনেস হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সংগঠনের উপদেষ্টা সহিদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন ও দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সংগঠনের উপদেষ্টা স্বরূপ বকসী বাচ্চু।

আমাদের অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল অনুষ্ঠানে উপস্থিত দিনাজপুর জিলা স্কুলের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকেরা, যাঁদের উৎসাহ ও সর্বাত্মক সহযোগিতায় আমরা অনুষ্ঠানটি সফলভাবে আয়োজন করতে পারি। ২০০১ সালের ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আমরা উপস্থিত শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের হাতে সম্মাননা স্মারক হিসেবে ক্রেস্ট দিয়ে সম্মাননা প্রদান করি।

এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আমরা স্বেচ্ছায় রক্তদান, জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিবছর মেধাবীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করাসহ সব ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে চাই। জিলা স্কুলের ১৬ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করে ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম শুরু করতে পেরে আমরা আনন্দিত।