প্রযুক্তির যুগে আমায় লেখা মায়ের চিঠি

১২ মে মা দিবস হিসেবে পালিত হয়। পাঠকের লেখা থেকে বাছাই করা লেখা প্রকাশিত হচ্ছে নাগরিক সংবাদে।

মাকে ভালোবাসার জন্য কখনোই নির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণের সীমাবদ্ধতা নেই, কিন্তু বিশেষ দিন উদ্‌যাপন নিশ্চয়ই মায়ের ডোপামিন নিঃসরণ কয়েক গুণ বাড়িয়ে তোলে। যখন কোনো সারপ্রাইজ কিংবা খুশির মুহূর্ত তৈরি করা হয়, তখন রক্তপ্রবাহে ডোপামিন তথা ‘ফিল-গুড’ হরমোন নিঃসৃত হয়, যা তাৎক্ষণিকভাবে মন প্রশান্ত করে তোলে এবং সুখানুভূতির সৃষ্টি হয়। ‘মা’ তো কখনো বিনিময় দাবি করেন না। কিন্তু মায়ের দিনগুলো রঙিন ও উৎসবমুখর করতে প্রত্যেক সন্তানের রয়েছে সেই দায়িত্ববোধ, যা মায়ের হাসির অন্যতম কারণ হবে। মায়ের জন্য করা কোনো আনুষ্ঠানিকতাই যথেষ্ট নয়, তবুও মায়ের একমুখ হাসি দেখতে, সন্তান যদি ‘মা’ বলে ডাকে এবং জড়িয়ে ধরে, তাহলেই তৃষ্ণার্থ মায়ের তৃষ্ণা নিবারণ হয়, ‘মা’ সবচেয়ে বেশি শীতল বোধ করেন।

প্রযুক্তির এ যুগে একবার মায়ের লেখা একটি চিঠি পেয়েছিলাম। যেখানে কোনো একসময়ে মায়ের পছন্দের রং জানতে চাওয়ার উত্তর এসেছিল ভিন্নভাবে। চিঠির একটি অংশ তুলে ধরছি—‘পছন্দের রঙের ব্যাপারে তুমি যেহেতু জানতে চেয়েছো, হয়তো তুমি আমার জন্য কিছু কিনবে, তবে কখনো বেশি টাকা দিয়ে কিনতে যেয়ো না। আমি যেসব রঙের শাড়ি পরি, তা তোমার জানা। তুমি যেকোনো রঙের কিছু আনলে আমার খুব পছন্দ হবে। তোমার প্রতি আমার এই ভরসা আছে।’ আমি চিঠিটা পেয়ে খুব অবাক হয়েছিলাম। এ সময়ে বাচ্চাদের হাতেও স্মার্টফোন এবং এর ব্যবহার সবক্ষেত্রেই হচ্ছে। কিন্তু মায়ের প্রযুক্তির বাইরে গিয়েও আমার জন্য চিঠির স্মৃতি তৈরি, আমার জন্য বিশেষ উপহার।

ছোট্ট এক অক্ষরের শব্দ ‘মা’। কিন্তু এই ‘মা’ ডাকের মধ্যে লুকিয়ে আছে বিশাল অমৃত স্বাদের তৃপ্তি। একবার ‘মা’ বলে ডাকলে কিংবা মায়ের মুখখানা দেখলে হৃদয়ে যে শান্তি বর্ষিত হয়, পৃথিবীর অন্যকিছু দিয়ে তার তুলনা করা ঠিক সম্ভব নয়। ‘মা’ মানে আমার কাছে জীবনে বলা প্রথম শব্দ, প্রথম ডাক, প্রথম বুলির উদ্‌যাপন। বিপদ কিংবা প্রত্যাশিত-অপ্রত্যাশিত মুহূর্তে হঠাৎই উচ্চারিত হয় ‘মা’। এ যেন সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত এক বন্ধন। সন্তানের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে মায়ের স্পর্শ ছুঁয়ে আছে। মায়ের কাছে আমি তাঁর নাড়ি ছেঁড়া ধন, ঠিক তেমনি আমার কাছেও ‘মা’ অমূল্য রতন। ‘মা’ হলেন ম্যাজিকম্যান, সন্তানের মুখের হাসির জন্য যিনি সর্বদা প্রস্তুত; তেমনি মায়ের জন্যও প্রত্যেক সন্তান হোক সুপারম্যান। প্রতিদিনই হোক মায়ের সঙ্গে সময়ের বিনিময়, মায়ের মুখে হাসি থাকুক সব সময়। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে ‘মা’ থাকুক স্মরণে। অনেক বেশি ভালোবাসি ‘মা’। ‘মা’ দিবসে পৃথিবীর সব মায়ের প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। ‘মা’ দিবসে এই আমার নিবেদন।

লেখা: কাব্য সাহা, এক্সিকিউটিভ, ল্যাবএইড হাসপাতাল

*নাগরিক সংবাদে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]