চাকরিতে বয়সসীমা ৩৫, নাকি কোটাপদ্ধতি বাতিল—কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ

ফাইল ছবি প্রথম আলো

সাম্প্রতিক কালে প্রচুর আলাপ-আলোচনা হচ্ছে চাকরিতে বয়সসীমা ৩৫ করার দাবি নিয়ে। কয়েকটি টেলিভিশনের অনলাইন জরিপে দেখা গেছে, দেশের ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী চান, চাকরিতে বয়সসীমা ৩৫ হোক। তবে অনেকের মধ্যে এই বিষয় নিয়েও আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তাঁদের দাবিগুলোও যৌক্তিক। তাঁরা বলছেন, চাকরিতে বয়সসীমা ৩৫ করলেই কি সবাই চাকরি পেয়ে যাবেন। বা বেকারত্ব দূর করা যাবে কি না, এই ব্যাপারে ভাবার অনেক সুযোগ রয়েছে। তাঁরা আরও বলছেন, তখন বেকারত্ব আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। কারণ, বয়সসীমা বাড়ানোর পাশাপাশি কর্মসংস্থান কিন্তু সমানুপাতিক হারে বাড়ানো হচ্ছে না। আবার কেউ কেউ বলছেন, চাকরিতে বয়সসীমা ৩৫ করলে সরকারি চাকরির বাজারের প্রতিযোগিতা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। পড়াশোনা শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে চাকরি পাওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যাবে। চাকরিতে বয়সসীমা যদি ৩৫ করা হয় তখন দেখা যাবে, একজন ২৬ থেকে ২৭ বছরের যুবক কোনো চাকরির জন্য নির্বাচিত হয়েও যান, তারপরও ওই প্রশাসন তাকে এ কথা বলে নিযুক্ত করতে চাইবে না যে আপনার বয়স তো এখনো অনেক বাকি আছে। আপাতত যাঁদের বয়স প্রায় শেষ পর্যায়ে, তাঁদের এ চাকরিতে নিযুক্ত হওয়ার সুযোগ দিয়ে দিন। এভাবেও দেখা যাচ্ছে যোগ্য ব্যক্তিকে ঠকানো হচ্ছে। আবার চাকরিতে বয়সসীমা যদি ৩৫ করাও হয়, তখন দেখা যাবে যত দিন না পর্যন্ত সরকারি চাকরি মিলছে, তত দিন পর্যন্ত চাকরির প্রস্তুতি ছাত্ররা নিতেই থাকবেন। পরবর্তী সময় যদি তিনি চাকরি না পান, তখন আরও হতাশার সম্মুখীন হবেন। এ ক্ষেত্রে তিনি চাকরির প্রস্তুতি অত দিন না নিয়ে নিজ উদ্যোগে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করলে অনেক ক্ষেত্রেই সফলতা আনয়ন সম্ভব। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারি চাকরি করলেই শান্তি বা জীবনে সফল হতে হলে বিসিএস হতে হবে বা ব্যাংকে চাকরি করতে হবে, এসব সস্তা মোটিভেশন যাঁরা দেন, তাঁদের দমানো উচিত বলেও আমি মনে করি।

দেশে পড়াশোনা শেষ করতে করতে সাধারণত একজন যুবক-যুবতীর ২৬ থেকে ২৭ বছর লেগে যায়। এ ক্ষেত্রে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ বিভাগে পড়াশোনা, টিউশন সবকিছু ব্যবস্থা করে, বাড়তি চাকরির পড়া পড়ার সময় ও সুযোগ খুব কম থাকে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ একটু বেশি যদিও তাদেরও পড়াশোনার পাশাপাশি অনেক সময় নিজের পরিবারকেও আর্থিকভাবে সাহায্য করতে হয়। এদিক দিয়ে বিবেচনা করলে চাকরির বয়সসীমা বাড়ানো উচিত বলে বিবেচিত হতে পারে। তবে তা কোনোভাবেই ৩৫ নয়। তা ৩২ হতে পারে কি না, ভাবার সুযোগ রয়েছে।

এ ক্ষেত্রে আরেকটা বিষয় আলোচনা করা উচিত, সেটা হলো, চাকরিতে কোটাপদ্ধতি। আমার কাছে মনে হয়, এ কোটাপদ্ধতি বাতিল করা জরুরি, যদি আমরা যোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে দেশের কাঠামো গঠন করতে চাই। আমার কাছে মনে হচ্ছে, সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা বাড়ানোর থেকে চাকরিতে কোটাপদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। কিছু ক্ষেত্রে জেলা কোটার ব্যাপারটা বাতিল করাও যেতে পারে। যদি এমনটা করা যায়, তাহলে কিছুটা হলেও সামঞ্জস্য বিধান করা সম্ভব হবে বলে মনে করি। বর্তমান সময়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবন্ধী কোটা। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁরা যোগ্য, তাঁদের সুযোগ করে দেওয়াটাই একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশের জন্য বড় সফলতা বলে আমি মনে করি। নারী কোটাও কমানো উচিত। কারণ, বর্তমানে পুরুষদের সঙ্গে নারীরা সফলতার দিক থেকে সমানতালে চলার চেষ্টা করছেন; বরং অনেক ক্ষেত্রে আরও ভালো এগিয়ে যাচ্ছেন।

পরিশেষে বলা যায়, চাকরিতে বয়সসীমা বাড়ানো হোক, তবে ৩৫ না করে তা ৩২ করা যেতে পারে। পাশাপাশি কর্মসংস্থান বাড়ানো উচিত বলেও আমি মনে করি। যুবকেরা যেন নিজে উদ্যোগে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালু করতে পারেন অতিরিক্ত সরকারি চাকরিমুখী না হয়ে, এ ক্ষেত্রে বিনা সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা যায় কি না, এটাও সরকারকে বা সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের ভাবা উচিত। অন্যদিকে সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি বাতিল করে, যোগ্য ব্যক্তিদের জায়গা করে দেওয়াটাই হবে আসল চ্যালেঞ্জ ও সফলতার জায়গা।

  • লেখক: সাহীদ বিন আহমদ, শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

**নাগরিক সংবাদে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল অ্যাড্রেস: [email protected]