প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড দেওয়া সময়ের দাবি

বেতন গ্রেড বাড়ানোসহ তিন দফা দাবিতে ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ ডাকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকেরা। পাশাপাশি বিদ্যালয়গুলোতে কর্মবিরতি পালন চলছেছবি: সাজিদ হোসেন

একটি দেশের উন্নয়নের প্রথম শর্ত হলো উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা। বলা হয়ে থাকে, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি উন্নতির পথে অগ্রসর হতে পারে না।

জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুযায়ী বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার মূল তিনটি স্তর হলো—প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তর হলো প্রাথমিক শিক্ষা, যাকে বলা হয় শিক্ষার সূতিকাগার। এখানে একটি শিশুর মানসিক, নৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের ভিত রচিত হয়। আর সেই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ। আজকের শিশুরাই আগামী দিনের রাষ্ট্রের কর্ণধার, তাই তাদের বিকাশের মূল কারিগর হচ্ছেন এই শিক্ষকেরা।

কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ এখনো তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। যা শুধু শিক্ষকদের নয়, বরং সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্যও লজ্জার বিষয়।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষকগণ সবচেয়ে কম বেতন পান। উদাহরণস্বরূপ, মালদ্বীপের একজন প্রাথমিক শিক্ষক মাসে পান প্রায় ৬৩ হাজার টাকা, ভারত ও নেপালে ৩৫ হাজার, ভুটানে ৩৩ হাজার এবং পাকিস্তানে ৩০ হাজার টাকার সমপরিমাণ বেতন। অথচ বাংলাদেশের একজন সহকারী শিক্ষক সর্বসাকল্যে পান মাত্র প্রায় ১৮ হাজার ৫০০ টাকা, যা বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে একেবারেই অপ্রতুল।

বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক বা সমমান। কিন্তু তাঁরা বেতন পান ১৩তম গ্রেডে, যেখানে একই যোগ্যতার অন্য পেশাজীবীরা, যেমন পিটিআই পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষক, পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বা নার্স—পান ১০ম গ্রেডে। একসময় এই পদগুলোও ১১তম গ্রেডে ছিল, পরবর্তী সময় তাঁদের ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা হয়। অথচ প্রাথমিক শিক্ষকগণ থেকে গেছেন বৈষম্যের শিকার হয়ে।

ফলে মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আসতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। কেউ কেউ এলেও বৈষম্যের কারণে কিছুদিন পর অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। এর প্রভাব পড়ছে সরাসরি শিক্ষার মানের ওপর।

রাষ্ট্রের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থারও সংস্কার প্রয়োজন। শিক্ষকদের সামাজিক ও আর্থিক মর্যাদা বাড়াতে হবে, নিতে হবে জীবনমান উন্নয়নের পদক্ষেপ। প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের কমপক্ষে দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা (১০ম গ্রেড) প্রদান করা সময়ের দাবি। শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধি পেলেই শিক্ষার মানও আরও উন্নত হবে, এই প্রত্যাশা রাখি।

* লেখক: শিক্ষক, ভালুকা, ময়মনসিংহ

নাগরিক সংবাদে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]