শিক্ষকদের বঞ্চনার আরেক নাম ‘সহকারী প্রধান শিক্ষক’

শিক্ষকতাপ্রতীকী ছবি

আমি একজন সাধারণ শিক্ষক। এমনিতেই তৃতীয় শ্রেণির চাকরি করি, ১৩ গ্রেডে। ৮ বছর চাকরি করার পর আমার বেতন ২৪ হাজার ৪৪২ টাকা। কোনো পদন্নোতি (প্রমোশন) তো নাই। এখন আবার সহকারী প্রধান শিক্ষক, নতুন পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে, যার ফলে একজন শিক্ষক কোনো দিনই প্রধান শিক্ষক হতে পারবেন না। কারণ—১. প্রধান শিক্ষক প্রমোশন না দিয়ে সরাসরি পিএসসি থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়, ২. সহকারী প্রধান শিক্ষকদের সরাসরি নিয়োগ দেওয়া হলে, সহকারী শিক্ষকেরা সহকারী প্রধান শিক্ষকই হতে পারবেন না, ৩. অনভিজ্ঞ সহকারী প্রধান শিক্ষক হবেন বিজ্ঞ সহকারী শিক্ষকের প্রধান।

বর্তমানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের একজন চালক ১২ গ্রেডের বেতন পান। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কম্পিউটার অপারেটর, সাঁটলিপি অপারেটর, অফিস সহায়ক—সবাই ১০ম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন। অথচ একজন সহকারী শিক্ষক, যিনি কিনা জাতি গড়ার কারিগর, তিনি বেতন পাচ্ছেন ১৩ গ্রেডে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে। সব সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকেরা চাচ্ছেন সহকারী প্রধান শিক্ষক পদটি সৃষ্টি যেন না হয়। অথচ শিক্ষকদের ওপর সহকারী প্রধান শিক্ষক পদটি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বেতন গ্রেড বৃদ্ধি করুক, কিন্তু শিক্ষকদের মধ্যে আরও বিভেদ ও সমস্যা সৃষ্টি করা এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার জন্য সহকারী প্রধান শিক্ষক পদটি না করাই শ্রেয়। শিক্ষকেরা ভালো থাকলে দেশে সুনাগরিক গড়ে উঠবে। একজন নিচুশ্রেণির কর্মচারী, যাঁদের বেতন একজন রিকশাওয়ালার থেকে কম, তিনি কী করে দেশ গড়বেন, নাকি পেট চালাবেন। এর মধ্যে পেটের ওপর লাথি মারতে উঠেপড়ে লেগেছেন আমলারা। শিক্ষকদের জীবনমান উন্নয়ন না করলে আগামী ১০ বছরে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার অনেক ক্ষতি হবে। নীতি–নৈতিকতা হারিয়ে যাবে। প্রাইমারি মেধাশূন্য শিক্ষকে ভরে যাবে।

আরও পড়ুন

কমপক্ষে তিন লাখ শিক্ষকের পরিবারকে রক্ষা করতে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া দরকার। শিক্ষার মান উন্নয়ন হলে দুর্নীতি রোধ হবে, দেশ ও জাতি সুন্দরভাবে চলবে, সবার মনমানসিকতা ভালো হবে, সর্বোপরি একটা দেশ উন্নত হওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি উন্নত হতে হয় শিক্ষাব্যবস্থা, যেটা আমরা বুঝি না।

লেখক: মো. সাইফুল ইসলাম, সহকারী শিক্ষক

আরও পড়ুন