এক থেকে এগারোতে গবিসাস

নয়নাভিরাম ৩২ একরের এক বিদ্যাপীঠ। ১৯৯৮ সালের এক মাহেন্দ্রক্ষণে যার যাত্রার সূচনা, দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেছে ২৫ বসন্ত। সেই বিদ্যাপীঠের নাম গণ বিশ্ববিদ্যালয়। আর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রাচীন অঙ্গসংগঠন গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (গবিসাস)।

দেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সংগঠনটি গতকাল শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) পা রেখেছে একাদশ বসন্তে। ২০১৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ আল আজাদের নেতৃত্বে কিছু উদ্যমী তরুণের হাত ধরে পথচলা শুরু এই সংগঠনের। সংগঠনটি নবীনতার আঙুল ছেড়ে কৈশোরে পদার্পণ করেছে।

এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে সাংবাদিকতা বিভাগ নেই, সেখানে শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে আত্মপ্রকাশ করে গবিসাস। ফেব্রুয়ারির শেষ বিকেলে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ঘাসের ওপর বসে এই সংগঠনের জন্ম দিয়েছিলেন যাঁরা, তাঁদের ও পরবর্তী স্বপ্নের সারথিদের অক্লান্ত ত্যাগ-পরিশ্রমেই গবিসাসের ঝুলি হয়েছে অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ।

১০ বছর পেরিয়ে গবিসাসের খাতায় যোগ হয়েছে নানা অর্জন। ইতিহাসে প্রথম হয়ে জন্ম নেওয়া এ সংগঠনের লক্ষ্য ছিল অনেক কিছুর প্রথম জন্ম দেওয়ার, যার সূচনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠন সংস্কৃতির জন্ম দিয়ে। ক্যাম্পাসে র‍্যাগিংয়ের বদলে জায়গা করে নেয় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম। গবিসাসের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় আইন বিভাগ থেকে ‘বিশ্ব মানবাধিকার দিবস’ পালন শুরু হয়, ফার্মেসি বিভাগ বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ‘বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস’ পালন শুরু করে, যা পরবর্তী সময়ে দেশব্যাপী চালু হয়।

এ ছাড়া গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো পিঠা উৎসব, ফুলবিজু উৎসব, বৈশাখী মেলা, বৃক্ষরোপণ, ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, ক্যারিয়ার–বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয় এই সংগঠনের আয়োজনে। ২০১৫ সালে দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে তার বিরুদ্ধে ‘সহিংসতা নয় শান্তি চাই’ শিরোনামে প্রথম কোনো সংগঠন হিসেবে মানববন্ধন করে গবিসাস।

গবিসাসের মাধ্যমে দেশের সাংবাদিক সমিতির ইতিহাস পায় প্রথম নারী সম্পাদক। এ সংগঠনের সপ্তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রথমবারের মতো দেশের স্বনামধন্য কোনো ব্যান্ডের (বাংলা ফাইভ) গান পরিবেশন হয় গণ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ট্রান্সপোর্ট ইয়ার্ড, হিটলার চত্বর, মিডিয়া চত্বর, তালতলার মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গা ও চত্বরের নামকরণ করেছে এ সংগঠনটি।

‘সৃজনশীল ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখা’ নীতিবাক্যকে ধারণ করে নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ করছে এই সংগঠন। একদল স্বপ্নবাজ তরুণের জাতীয় স্মৃতিসৌধের সবুজ ঘাসের ওপরের আড্ডা থেকে উঠে আসা সেই সংগঠনের আজ রয়েছে স্বতন্ত্র গঠনতন্ত্র ও নিজস্ব কার্যালয়। গঠনতন্ত্রের আলোকে পরিচালিত হয় গবিসাস। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতিবছর ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে গবিসাস কমিটির মেয়াদ শেষ হয়।

গবিসাসের সূচনা মোটেও সহজ ছিল না। নানা চড়াই-উতরাই পার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছে গবিসাস। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবিকে সমর্থন করে প্রশাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে এত বছরের এই যাত্রাপথ ছিল নানা প্রতিকূলতার।

পথচলার এক দশকে অর্জনের খাতায় বারবার গর্জে উঠেছে স্বপ্নদ্রষ্টা তরুণদের আলোচিত নামটি। ক্যাম্পাস হিরোর গল্পে লুকিয়ে থাকা এ সংগঠনটি যেন পর্দার আড়ালের নায়ক। সংগঠনে থাকা একঝাঁক তারুণ্য ক্যাম্পাসে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি করে ভোরের সূর্য। আলোর পেছনের কারিগরেরা আলোকিত হয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন পুরো বাংলা। সৃজনশীল ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার মাধ্যমে প্রতিভার জাগরণ ঘটানো সংগঠনটি প্রত্যেক মানুষকে সৃষ্টিশীল মনন ঘটাতে সাহায্য করে।
লেখক: শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।