পাখির কান্না
‘বালা টিক্যা পইট করো, চোখে লাগব কইলাম’- ঋতু বলতে না বলতে গুলতি ছেড়ে দিতেই মাটির গুলিটি হাতে লেগে প্রচণ্ড ব্যথা দিল। আমরা সড়কের পাশে খাঁ বাড়ির ডালে একটি কদমগাছের নিচে দুজনে ঊর্ধ্বমুখী দাঁড়িয়ে আছি। সকাল থেকেই পকেটভর্তি মাটির গুলি নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছি। আজকে একটা হেস্তনেস্ত করবই। প্রতিদিন পাখি শিকারে বের হই, ফলাফল অষ্টরম্ভা।
পড়শু দিনের আগের দিন জালশুকা এসেছি। গোসাইপুর ঘাট থেকে প্রায় এক ঘণ্টা হেঁটে বাড়ি আসতে হয়েছে। খেতের আইল, সড়কের ভাঙা অংশ আর বাড়িঘরের ভেতর দিয়ে আসতে গিয়ে আম্মার পা ব্যথায় ফুলে গেছে। বর্ষাকালে জালশুকার জার্নিটা আম্মার জন্য আরামদায়ক। পুরোটা পথ নৌকায় আসতে পারেন। সড়ক থেকে মোল্লাবাড়ির সামনের ব্রিজটায় উঠতেই বাংলাঘরের কোনায় দাদাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। ইমন চিৎকার করে ‘দাদা আমরা আইসা গেছি’ বলে পুকুরের পাশ ঘেঁষে শুকাতে দেয়া খড়ের ওপর দিয়ে দৌড়ে দাদাকে জড়িয়ে ধরল। আম্মাকে ফেলে আমিও দৌড় দেব কি না, ভাবছি। আম্মা বললেন, ‘ওই যে তোমার দাদা কতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছেন, কাছে যাও।’ আম্মার চোখের কোনের পানি চশমাটি আড়াল করতে পারেনি। মুখে হাসি, চোখে পানি; অনেক সময় বড়দের ব্যাপারস্যাপার বুঝতে পারি না। পুরো গোসাইপুরের মাটির রাস্তায় বারবার থেমে, মাঝে মাঝে ‘ওমাগো এবার পাটা মনে হয় মচকে গেছে’ বলে ইমনকে ডাকাডাকি করেছেন। বারবার বিরক্ত আম্মা অনুপস্থিত আব্বাকেও হুমকি দিচ্ছিলেন, ‘এর পর থেকে বর্ষা ছাড়া আমি জালশুকায় আসব না।’ এখন আবার খুশিতে চোখ-মুখ চিকচিক করছে। দাদাকে সালাম করতেই বুকে জড়িয়ে ধরেন। দাদি পর্দানশীন মানুষ, বাড়ির বাইরে আসেন না; তারপরও ঘরের কোনায় লেবুর শরবত নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। ইমনের চোখ-মুখ দাদি আঁচল দিয়ে মুছে দিয়ে মাথায় হাত বুলাচ্ছেন। আমাদের দেখার সঙ্গে সঙ্গে বিশাল এক ঝাঁক এন্ডাপেন্ডা জড়ো হয়েছে। ওরা খুব মনোযোগের সঙ্গে আমাদের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করছে। টিউবওয়েলের পাশে গেলে তাদের এক গ্রুপ কে কার আগে টিউবওয়েলে চাপ দেবে, ঠেলাঠেলি লাগিয়েছে। ইমনের হাতের লাক্স সাবান দেখে ‘সাবানডার বুই হুব সুন্দর’- সমস্বরে বলে উঠল।
আম্মা ঘরে এসেই ব্যাগ-বোঁচকা খোলা শুরু করেছেন। দাদি বেশ কয়বার এই বাহিনীকে যার যার বাড়ি যাওয়ার নির্দেশনা দিলেও কোনো কাজে আসেনি। বেতের ঝুড়িতে বেশ কয় রকম তরকারি ও শুকনা খাবার নানি দিয়ে দিয়েছেন। আম্মা হাতের ইশারা করে এক স্মলম্যানকে ডাকলেন। এক হাতে নাকের সিকনি মুছতে মুছতে আরেক হাতে প্যান্ট সামলে বাচ্চাটি আসতেই আম্মা বললেন, ‘তোমার নাম কী?’ আম্মা স্কুলশিক্ষক, তাই ছোট বাচ্চাদের খুব পছন্দ করেন।
ঝুড়ি থেকে কাগজের এক বিশাল ঠোঙ্গা বের করলেন। ইমন আর আমি হতবাক! একজন আরেকজনের সঙ্গে চোখাচোখি করে বোঝাতে চাইলাম ‘ও এই ব্যাপার’! ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসার পথে ট্রেনে এতগুলো লজেন্স কেন কিনলেন, সেটা মালুম হলো। আমরা তখন অনেক অনুনয়–বিনয় করে মাত্র দুটি করে পেয়েছিলাম। এই কয় দিন নানাবাড়ি থাকার সময়ে বেশ কয়েকবার আম্মার ট্রাংকে পর্যন্ত হানা দিয়েছি! বাচ্চাগুলোকে লাইনে দাঁড় করিয়ে এক এক করে লজেন্স দিয়ে বিদায় করলেন। দাদি এক ফাঁকে দেখে গিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে গেলেন ‘বউ যে কি করো’।
বিকালে ঋতুর দেখা পেলাম। গলায় একটা ব্রহ্মাস্ত্র ঝুলানো। সারাদিন জাল আর ছিপ দিয়ে বিভিন্ন পুকুর-বিল-নদীতে মাছ ধরাটা তার নেশা। মাঝেমধ্যে ভোর কিংবা সন্ধ্যায় পঞ্চবটীর শ্মশানের বাঁকে ভুতের আস্তানার(!) পাশে মাছ ধরতে যায়। তখন ওর মা এসে কান্নাকাটি করেন। পাখি আর পাখির ছানা-পোনাদের হালহকিকত এই ডানপিটে ছেলেটির থেকে কেউ বেশি জানে না । সম্পর্কে আমার ভাতিজা ও সমবয়সী । দাদি ওকে দেখেই , ‘তুই পাখি মারিস কেন’ বলে একটা বকা দিলেন।
আমি গলায় ঝুলানো ব্রহ্মাস্ত্রটি দেখে এর নাম জিজ্ঞাসা করলাম। বললো ‘গুলতি’। সঙ্গে সঙ্গে গলা থেকে খুলে আমাকে এর কার্যকারিতা বুঝিয়ে দিতে শুরু করল, ‘এই যে কাঠের ইংরেজি ওয়াইয়ের মতো অংশটা হাত দিয়া ধরো।’ দুটি রাবারের সামনের অংশের চামড়ার টুকরায় একটি ছোট মার্বেল রাখার সঙ্গে সঙ্গে ইমন ওটা নিয়ে পকেটে ভরে ফেলল । ঢাকার মার্বেল থেকে কিছুটা আলাদা দেখতে । ওইটা কাঁচের তৈরি আর এটা মাটির মতো মনে হচ্ছে। ঋতুকে বললাম, এগুলো কোন জায়গা থেকে কিনেছ? আকাশ থেকে পড়ল, এমন ভাব নিয়ে বলল, ‘এইগুলো আবার কই বেচব, আমি বানাইছি’। পকেট থেকে বাদামি-লালচে মাটির মতো মার্বেলটি বের করে আমরা দেখতে লাগলাম। পাকায় ফেললে ভাঙছে না।
আমি: আমাকে দেখাবে কীভাবে বানায়?
ঋতু: কাইল লইয়ো।
আপাতত বাড়ির পেছনের বাঁশঝাড়ের সঙ্গের শোলার পালার পাশে আমাদের শিখিয়ে দেয় কীভাবে গুলতি মারতে হয়।
পরদিন ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে ঘরের ঘুলঘুলি দিয়ে নানা নকশা করে আলো ঘুম ভেঙে দিল । পাখিদের কলকাকলির এত চিৎকার! বাঁশঝাড়ে মনে হয় পাখিদের ঈদ উৎসব চলছে। বিরাট পালঙ্কে আম্মার এক পাশে আমি অন্য পাশে ইমন । বিশাল নকশাকাটা দরজা খোলার জন্য মোড়ার ওপর দাঁড়াতেই দাদি পাশের রুম থেকে এসে দরজা খুলে দিলেন। কি সুন্দর ভোরের নরম আলো। ঢাকায় এরকম ভোরে কখনো নিজে নিজে ঘুম ভাঙেনি। দাদি দেখলাম উঠানের ওই পাড়ে হাঁস-মুরগির খোয়ারের দরজা খুলে অজু করতে যাচ্ছেন। খোয়ারটিতে দুজন প্রমাণ সাইজের বাচ্চা ঢুকতে পারে। এটা লাল-নীল কাঠের নকশা ও টিনের তৈরি একটা ছোট্ট চার চালা টিনের ঘর, চাচা বানিয়েছেন। বেশি সামনে যেতে ভয় লাগে, রাজহাঁসের জন্য। বিশাল কয়টা রাজহাঁস আছে, সামনে গেলে গলা মাটির সমান্তরালে নামিয়ে তেড়ে আসে।
বাঁশঝাড়ের দিকে তাকাতেই মনে হলো অসংখ্য ছেড়া সাদা কাপড় কে যেন বাঁশঝাড়ের মাথায় বেঁধে দিয়েছে। মাঝেমধ্যে হঠাৎ করে এক একটা সাদা কাপড়ের টুকরা নিজ থেকে চার-পাঁচ গুণ বড় হয়ে বক হয়ে পাখা মেলে আকাশে উড়ে যাচ্ছে। সামনে হলুদ ঠোঁট আর সাদা শরীরের পেছনে লম্বা দুটি পা বাংলাদেশ বিমানের লোগো উড়ন্ত বলাকার আকৃতির কথা মনে করিয়ে দেয়। সাঁই সাঁই করে মাথার ওপর দিয়ে নদীর দিকে চলে যাচ্ছে। হঠাৎ করে সিনেমার পেত্নির মতো ই-হি-ই-হি-ই-হি কর্কশ আওয়াজে বুকে কাঁপন ধরে গেছে। এই সাতসকালে পেত্নি এল কোত্থেকে? দাদি ইশারা করে বাঁশঝাড়ের পাশে টিউবওয়েলের পার থেকে ডাকলেন। দৌড়ে দাদির কাছে যেতেই আঙুল দিয়ে খালের পাশে বড় আমগাছটার দিকে দেখালেন, তখনই কানে এল ঠক ঠক ঠক ঠক আওয়াজ। কী সুন্দর একটা হলুদ ছিটছিটে পাখি! মাথায় লাল ঝুঁটি। বললেন কাঠকুড়ালি। এটা আবার কী নাম? এবার বললেন কাঠঠোকরা। কিন্তু, পেত্নির মতো আওয়াজটা কিসের জিজ্ঞাসা করতেই দাদি বললেন পাখি উড়ে যাওয়ার সময় এভাবে ডাকে।
নাশতার পর পর ঋতুর সঙ্গে পথ দিলাম। ভাঙা সড়ক ধরে পশ্চিম দিকে যেতে লাগলাম।
এটা তো গোসাইপুর যাওয়ার পথ।
-হ্যাঁ । সামনে কুমার বাড়ি।
-কুমার মানে, যারা মাটির জিনিস বানায়?
জালশুকার পশ্চিম প্রান্তে কুমোর বাড়ি। এই সাতসকালে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। কালো মাটির স্তূপ একটা বাড়ির পাশে দেখতে পেলাম। ওপরে একটা বেড়ার ছাউনি, ভেজা কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে রেখেছে। এক বয়স্ক ভদ্রলোক একটা গরুর গাড়ির চাকা মাটিতে ফেলে ঘোরাচ্ছেন। আমি হাঁটুর ওপর বসে এটা দেখতে লাগলাম।
ধুতি পরা ভদ্রলোক: জিতু মিয়া, এই পুলাডা কেডা?
ঋতু: ডাইরেক্টর সাহেবের নাতি।
ঋতুকে দেখলাম ওরা জিতু মিয়া বলে ডাকছে।
ঋতু: কদ্দুর মাটি লাগবো, গুলি বানাইতাম।
উনি কোদাল দিয়ে মাটি কেটে নিলেন। আমাকে বুঝিয়ে দিলেন দোআঁশ বা বেলে মাটি দিয়ে মাটির বাসনকোসন বানানো যাবে না, এঁটেল মাটি লাগবে। এই মাটি ওনারা প্রতিবছর পানি নেমে গেলে কোনো না কোনো জমির মালিকের কাছ থেকে কিনেন। সেটাকে ঠান্ডা জায়গায় সংরক্ষণ করেন, মাঝেমধ্যে পানি দেন, কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে রাখেন। কিছু বানানোর আগে সেটা ভালো করে ছেনে নুরিপাথর-শামুক আলাদা করেন। আমরা তিনজন দুই হাতের মাঝখানে মাটি নিয়ে প্রায় দুই-তিন শ মার্বেল সাইজগুলো বানিয়ে রোদে শুকাতে দিলাম। দুপুরে উনুনের জ্বলন্ত ছাইয়ে এগুলো দেওয়ার পর বিকালের মধ্যে লালচে-বাদামি গুলি পেয়ে গেলাম। বিকেলে পকেটে ভরে মাটির গুলি নিয়ে গুলতি প্র্যাকটিস করতে বেরোলাম। গাব গাছের পাশে খড়ের গাদার পেছনে বড় আমগাছটার নিচে ইজি চেয়ারে বসে দাদা আমাদের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করছেন। উনি এ সময় পেপার পড়েন। খেলাধুলা, এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিতে উনার অনেক উৎসাহ। আমাকে দেখে উৎসাহিত করে বললেন, ‘ভালো করে প্র্যাকটিস কর, দুই-তিন বছর পর তোকে নিয়ে বিলে বন্দুক দিয়ে পাখি শিকারে যাব’।
পরদিন যেটাই দেখি, সেটাই এইম করি। উৎসাহ টগবগ করে ফুটছে—জিম করবেট, কেনেথ এন্ডারসন না হলে পঁচাব্দী গাজী তো হতে পারব! গ্রামের দুষ্টু প্রকৃতির কিছু তরুণ আমাকে ফরদীবাড়ী কবরস্থানের পাশে শিয়াল শিকারের জন্য উৎসাহ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটু ইগো চাঙ্গা করতে ‘বাঘও থাকত পারে, ডরাইবা না তো?’ একটু সামনে এগোতেই পেছনে তাদের খিকখিক হাসির সঙ্গে ‘টুলাও পাইত না, ডরাইছে।’ শুনে ঋতুর দিকে তাকাতেই বলল ‘বন বিড়াল’। হঠাৎ মাথার ওপর দিয়ে ফরফর শব্দ তুলে একটি পাখি উড়ে যেতেই ঋতু তৎপর হয়ে উঠল। কিছুটা দূরে বড় একটি জামগাছ থেকে কুরকুর কুরকুর করে একটা মন উদাস করা আওয়াজে দেখলাম কবুতরের মতো পাখিটাকে। লম্বা লেজের ছিটছিটে বাদামি রঙের পাখিটির নজর সামনের দিকে, আমাদের দিকে তার খেয়ালই নেই; পাত্তাই দিচ্ছে না। এটাই নাকি ঘুঘু পাখি। ঘুঘু পাখি মিস করার পর হলুদ রঙের একটা ঢেউ লক্ষ করে ঋতু দৌড়াতে লাগল, ‘কুটুম পাখি, কুটুম পাখি’। কালো গলার হলুদ রঙের পাখিটি ঘুঘু থেকে অনেক সতর্ক। এত মিষ্টি আওয়াজ। যে বাড়ির আশপাশে ডাকে, সেখানে নাকি কুটুম আসে। অনেক দৌড়াদৌড়ি করে বুঝলাম হলুদ পাখির পিছে দৌড়ে লাভ নেই। ‘চলো তো দেখি সামনের বেগুন খেতে, একটা টুনির বাসায় দুইটা ছাও আছে,’ ঋতু। বেগুন খেতের পাশে টুই টুই করে সাউন্ড বক্সের আওয়াজ। লম্বা ঠোঁটের হালকা সবুজ রঙের এতটুকু পিচ্চি টুনটুনির গলাতে এত আওয়াজ! খুব চঞ্চল। একটা বড় পাতাকে পানের খিলির মতো কীভাবে ভাঁজ করল, আর কীভাবে এই পাতাটাকে দর্জির মতো নিখুঁতভাবে সেলাই করল—আল্লাহই জানেন। ভেতরে তুলার মতো কিছু একটা আর ছোট ছোট খড় দেখলাম, কিন্তু কোনো ছানাপোনা দেখলাম না। বাড়ি ফিরতেই আম্মার ঝাড়ি খেলাম।
নাগরিক সংবাদ-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
আবুনীর মা বুবু মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, ‘ভাই আমার কত্ত বড় হইয়া গেছে।’ হঠাৎ করে কোয়াক-কোয়াক করে একটানা একটা ডাক শুনে বললেন, ‘ডাউক পাখির ডিম ফুটছে। এহন সারা রাইত ডাকব, ডাকতে ডাকতে গলা দিয়া রক্ত বাইরইব। সেই রক্ত বাচ্চার চোখের ওপর দিলে বাচ্চার চোখ ফুটব!’ শুনে গা হিম হয়ে আসে। পেছনের খালের দিকে অনেকক্ষণ নজর দিতেই খুব সতর্ক একটা মুরগির মতো পাখি দেখলাম। লেজ উঁচু করে লম্বা লম্বা হলুদ পা দিয়ে পিঠের কালচে-বেগুনি অংশ আর পেটের সাদা অংশ নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেলো। এটা একটা ডাহুক পাখি। আবুনীর মা বুবু বললেন, পালিত বক আর ডাহুক পাখি দিয়ে শিকারিরা বন্য বক ও ডাহুক ধরে।
পুরো গরমের ছুটিতে অসংখ্য বক, পায়রা, ঘুঘু, ডাহুক, টুনটুনিকে গুলতি দিয়ে গুলি ছুঁড়ে শান্তিতে থাকতে দিলাম না। ধানখেতে ধ্যানমগ্ন একঠ্যাংগা লম্বা বড় সাদা বকগুলোর আশপাশেও যেতে পারলাম না। দেখে মনে হয় তারা ঘুমিয়ে আছে, কিন্তু কাছাকাছি যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হাওয়া। গ্রামের বদ টাইপের ছেলে ছোকরারা হাসাহাসি করে।
ঢাকায় আসার পথে এক ব্যাগ মাটির গুলি নিয়ে নানা বাসায় আসলাম। মনের দুঃখে এখন পাখির দিকে তাক না করে দূরের কোনো লাঠি কিংবা কৌটার দিকে তাক করি। হঠাৎ লেবুগাছের পাশ থেকে একটা মিষ্টি শীষের আওয়াজ পেলাম। আমি এখন কিছু কিছু পাখির ডাক শুনলেই চিনতে পারি, এটা নিশ্চয়ই একটা দোয়েল পাখি। কালো পিঠ আর নীলচে তামাটে গলা আর সাদা পেট নিয়ে এই স্মার্ট পাখিটি খুব চঞ্চল। না, গুলি করার কোনো স্কোপই পেলাম না । এই সময় বেলগাছ থেকে টুই টুই করে টুনটুনির আওয়াজে মন মেজাজ খারাপ করে তাক করার সঙ্গে সঙ্গে গুলতি ছুঁড়ে দেই । হঠাৎ পাখা ঝাপটে ঘুরতে ঘুরতে বেল গাছ থেকে পাখিটি নিচে মাটিতে পড়ে গেল। আমার হাত-পা-বুক থরথর করে কাঁপতে লাগল। একটা ছোট্ট টুনটুনি পাখিকে আমি মেরে ফেললাম! এটা তো খাওয়াও যায় না। ভয়, লজ্জা, অনুশোচনায় পাখির মাথায় পানি দিতে থাকলাম। এই পানির সঙ্গে মিশে গেল আমার চোখের পানিও। গুলতি ছুঁড়ে ফেলে দিলাম দূরে।
*লেখক: আসফাক বিন রহমান, সহযোগী অধ্যাপক, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ, গাজীপুর