চাঁদপুরে ইলিশের স্বর্গে ঝটিকা যাত্রা

দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের ভ্রমণপিপাসু মানুষগুলো সময় পেলে বেরিয়ে পড়েন বিভিন্ন গন্তব্যের রহস্য উন্মোচনে। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য ভ্রমণ একটি পেশা নয় বরং একটি নেশা। তারই ধারাবাহিকতায় খুঁজে বেড়ান নান্দনিক সব স্থান। অপরূপ সৌন্দর্যের এ নদীমাতৃক বাংলাদেশের চারদিকে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে দৃষ্টিনন্দন সব দর্শনীয় স্থান। তারই ধারাবাহিকতায় মৌসুমে পড়ে পর্যটকদের প্রচুর সমাগম। ভ্রমণ যে কারও মনকে সমৃদ্ধ ও প্রশান্তি করে তোলে। ভ্রমণের সঙ্গে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকে বিভিন্ন গল্প। আর এ গল্পের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করব ভেবে বেরিয়ে পড়লাম তিনটি স্থান ভ্রমণের উদ্দেশ্যে ইলিশের বাড়ির অলিতে-গলিতে।

যাত্রা শুরু ৮ জুলাই সকালের নাশতা করে বেরিয়ে পড়লাম ইলিশ চত্বর দেখতে। এই স্থানটি বড় স্টেশন নামেও পরিচিত। ২০২১ সালে এ পর্যটক স্পটি বঙ্গবন্ধু পার্ক নামে নামকরণ করা হয়েছে। মৌসুম ছাড়া যেকোনো সময় এখানে পর্যটকের প্রচুর ভিড়। কেউ আসেন ভিন্ন স্বাদের খাবার খেতে, কেউ আসেন ছবি তুলতে, কেউ আসেন পানির ডেউ, পানির শব্দ, পাখিদের গান, বাতাসে প্রশান্তির খোঁজে, আবার কেউবা আসেন  চাঁদপুরের ইলিশ দেখতে অথবা ইলিশ ভাজা খেতে। এখানে কিছু সময় কাটিয়ে শেষ করে রওনা হলাম নতুন গন্তব্যে।

লোকেমুখে শুনে ছুটে গেলাম প্রকৃতির টানে, আমি দাঁড়িয়ে আছি সেই সুন্দর লোহাগড় মঠেরি প্রাণে। যাঁরা দৃষ্টিনন্দন স্থান ঘুরে দেখতে চান, তাঁদের জন্য এ জায়গা একটি গুপ্তধন হতে পারে। চাঁদপুর লোহাগড় মঠ, ইতিহাস এবং স্থাপত্যের উজ্জ্বলতার একটি অসাধারণ প্রমাণ, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে গর্বের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে। ছুটির আনন্দময় উপলক্ষকে আলিঙ্গন করার সঙ্গে সঙ্গে, আসুন আমরা এ মোহনীয় মঠের রহস্যময় মোহন আবিষ্কারের জন্য যাত্রা শুরু করি।

লোহাগড় মঠের ইতিহাস
১২ শতকের আগে, চাঁদপুর লোহাগড় মঠটি বৌদ্ধগুরু লোহাগড় দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আশ্রয়স্থলের নির্মাণটি ছিল একটি প্রেমের শ্রম, ভক্তরা তাঁদের সময় এবং সম্পদ উৎসর্গ করেছিলেন এ দুর্দান্ত কাঠামোটি দাঁড় করাতে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, মঠটি সময়ের পরীক্ষা, বেঁচে থাকা যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং সামাজিক পরিবর্তন সহ্য করেছে।

চাঁদপুর লোহাগড় মঠের প্রাঙ্গণে পা রাখা স্থাপত্যের জাঁকজমকের রাজ্যে প্রবেশ করার মতো। মঠটি তিব্বতি, নেপালি এবং ভারতীয় প্রভাবের উপাদানসহ বিভিন্ন স্থাপত্যশৈলীর একটি অনন্য মিশ্রণ প্রদর্শন করে। জটিলভাবে খোদাই করা মঠটি, প্রকৃতি এবং স্থাপত্যের মধ্যে সামঞ্জস্যতা মঠের কৌশলগত অবস্থানে সুস্পষ্ট। সবুজ সবুজের মধ্যে অবস্থিত এবং আশপাশের উপত্যকার শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্য উপস্থাপন করে। এই দৃশ্য উপভোগ করে রওনা হলাম আরেকটি নতুন গন্তব্যে।

চাঁদপুরে হরিপুর জমিদার বাড়ির ইতিহাস
এরপর চলে এলাম ৫০৪ বছরের পুরোনো ব্রিটিশ শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত চাঁদপুরে সবচেয়ে বড় জমিদার বাড়ি, যা হরিপুর চৌধুরী বাড়ি নামে স্থানীয় লোকজনের কাছে পরিচিত। এ বাড়িটি তনু রাজা চৌধুরী হাত থেকে প্রতিষ্ঠিত। যিনি ব্রিটিশ শাসনামলের ব্রিটিশদের এই দেশ থেকে তাড়াতে সিপাহি বিদ্রোহ আন্দোলন করে। ব্রিটিশদের ধরপাকড়ের কারণে বর্তমান চাঁদপুর সদর উপজেলার মধ্যে চান্দ্রা ইউনিয়নে আত্মগোপন করেন। তারপর এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন এবং পরবর্তী সময়ে এখানের জমিদারিত্ব লাভ করেন তিনি। এই ছিল ইতিহাস।

যাওয়ার উপায়:
প্রথম ইলিশ চত্বর:
দেশের যেকোনো প্রান্তে থেকে লঞ্চে বা ট্রেনে আসেন। প্রথমে আপনি ইলিশ চত্বর দেখতে পরবেন। তার জন্য আপনাকে স্থানীয় দোকানদার কাউকে নাম বললেই দেখিয়ে দেবে। দেখা শেষে আটোরিকশায় করে চলে আসবেন হকার্স মার্কেট মোড়।

দ্বিতীয় লোহাগড় মঠ: হকার্স মার্কেট মোড়। এখান থেকে আপনাকে যেতে হবে অটোরিকশা করে ওয়্যারলেস মোড়। ওয়্যারলেস মেড় থেকে সিএনজি কে বলবেন আমি লোহাগড় মঠ খোলা যাব। অতঃপর সিএনজি আপনাকে নির্দিষ্ট স্থানে তথা প্রধান সড়কের পাশে নামিয়ে দিবেন। সেখান থেকে আপনি অটোরিকশা নিয়ে চলে যাবেন মঠ দেখতে।

তৃতীয় জমিদার বাড়ি: লোহাগড় মঠ থেকে আসার সময় পুনরায় প্রধান সড়কের পাশে আসবেন, তারপর এখান থেকে সিএনজি করে যাবেন ভাটিয়াল পুর চৌরাস্তা। সেখানে নেমে পুনরায় সিএনজি করে চলে আসবেন ‘ভুয়ার হাটের রাস্তার মাথা’ এখানে নেমে রিকশায় চলে যাবেন জমিদারবাড়িতে।

ভ্রমণ শেষ হলে পুনরায় ‘ভুয়ার হাটের’ রাস্তার মাথা থেকে সিএনজি করে সরাসরি চলে আসবেন চাঁদপুর লঞ্চঘাট, বা রেলস্টেশনে।

কোথায় খাবেন: প্রতিটি স্থানে ভালো মানের খাবারের হোটেলে পাবেন। খাবার অর্ডারের আগে দাম জেনে নেবেন। চাইলে জমিদারবাড়ি দীঘিতে গোসল করে ভ্রমণ শেষ করবেন।


*লেখক: তানবির শেখ,  শিক্ষার্থী, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়