বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ওপর কতটুকু প্রত্যাশা রাখা যৌক্তিক
ক্রিকেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সংক্ষিপ্ততম সংস্করণ টি–টোয়েন্টি। জমজমাট আসর টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৪–এর পর্দা উঠবে কয়েক দিন পরেই। ক্রীড়াপ্রেমীরা বিশ্বকাপের উন্মাদনায় এখন থেকেই বুঁদ হয়ে আছে। বিশ্বকাপের ক্ষণগণনা শুরু করে দিয়েছে বেশ আগে থেকেই। অপেক্ষার দীর্ঘ প্রহর অতিক্রম করার জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছেন ভক্ত–সমর্থকেরা। ভাবনায় যখন টি-টোয়েন্টির মতো জমজমাট আসরের কথা, প্রশ্ন তখন দলগত পারফরম্যান্স নিয়ে। সাম্প্রতিক সময়ে ওয়ানডেতে যতটা দুর্দান্ত ক্রিকেট উপহার দিচ্ছে, শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে ও একের পর এক গুঁড়িয়ে দিচ্ছে—আশার প্রদীপ ততটাই নিবু নিবু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বেলায়। এখনো বেশ অপরিপক্ব টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে। অনিয়ন্ত্রিত বোলিং, ব্যাটিং লাইনআপে ধস নামা আমাদের মূল হতাশায় ভোগার কারণ। ডেড ওভারে দলের কান্ডারি হয়ে ওঠার মতো কেউ নেই। শেষটা রাঙিয়ে নেওয়ার মতো ভরসার প্রতীক হয়ে কেউ এখনো নিজেকে শতভাগ প্রমাণ করতে পারেনি।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে শিরদাঁড়া উঁচু করে দাঁড়াতে গিয়ে বারবার দুমড়েমুচড়ে ভেঙে পড়ে। সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড এবং ক্রিকেটে নিজেদের নবজাগরণের গল্প লেখা আফগানিস্তানকে টি–টোয়েন্টিতে প্রথমবারের মতো ধবল ধোলাইয়ের লজ্জা দিলে নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দিলেও সাম্প্রতিক সময়ে আবার যেন সেই পুরোনো ভাঙনের সুর। টপ অর্ডার ব্যাটারদের টানা ব্যর্থতা ও নিম্নমানের স্ট্রাইক রেটের কারণে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে। পাওয়ার প্লেতে পাওয়ার হিটিং প্রদর্শনী দেখিয়ে ঝোড়ো সূচনা এনে দেওয়ার আমাদের আঁকড়ে ধরেছে। এত বছরেও ভয়ডরহীন খেলতে না পারার মানসিকতা আমাদের দুর্বলতার প্রতিচ্ছবি। তবু সমর্থকেরা প্রতিবারই আশায় বুক বাঁধেন। একটা সুন্দর আসরের পরিসমাপ্তি দেখার জন্য বহু স্বপ্ন পুঞ্জীভূত করে টেলিভিশনে চোখ রাখেন, কিন্তু ফলাফল আশার গুড়ে বালি।
প্রশ্ন থেকেই যায়, তবে কতটুকু আশা করা উচিত বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কাছ থেকে? সবচেয়ে সাংঘর্ষিক উত্তর মিলে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর বক্তব্যে, তিনি স্রেফ বেশি আশা না করার জন্য বলেছেন। অধিনায়কের কথায় আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি লুকানো, নিজেদের সক্ষমতার সঙ্গে স্পৃহা ও অদম্য ইচ্ছার যোগসূত্র না থাকায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার চিন্তা করাটাও দুঃস্বপ্ন। সুপার আটে ওঠার স্বপ্ন দেখা সবচেয়ে কার্যকর সিদ্ধান্ত হতে পারে। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় পেলেই দলে এটা টনিক হিসেবে কাজ করবে, যা সুপার আটে যাওয়ার পথে সব বাধা সুগম করে দেবে।
তবে কিছুটা হতাশায় ডোবাতে পারে সর্বশেষ বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স।
সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপের স্মৃতি মানেই দুঃস্মৃতি। কেউ মনে রাখতে চাইবে না। বরং শত চেষ্টা করে হলেও সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলতে চাইবে। কিন্তু গত টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পারফরম্যান্সের বিচারে সফল বাংলাদেশ। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে বাংলাদেশ জয়ের স্বাদ পেয়েছে মাত্র তিনটি ম্যাচে। প্রথম জয়টি এসেছিল ২০০৭ বিশ্বকাপে তথা উদ্বোধনী আসরে। এরপরের গল্পটা শুধুই হতাশার। একে একে ছয়টি আসরে মূল পর্বে রয়েছে জয়বঞ্চিত। সোনার হরিণ হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ টিমের জন্য। সর্বশেষ আসরে জয়ের স্বাদের মাধ্যমে ভাঙল পরাজয়ের বৃত্ত। অষ্টম আসরে সফলতার সঙ্গে দুটি ম্যাচে জয়ী হতে সক্ষম হয়। ফলাফলের এই পৃষ্ঠাটা আমাদের এবারের আসরে জয়ের ব্যাপারে তীব্র আশাবাদী করবে।
কিন্তু সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের কারণে আসন্ন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে বাজি ধরবে এমন লোকের সংখ্যা নিতান্তই কম। হতাশার ছাপে আশার পারদ একদম নিচের সারিতে। তবু জীবনে সফল হতে হলে, চ্যালেঞ্জ নিতে চাইলে, ঘুরে দাঁড়ানো বড্ড প্রয়োজন।
পূর্বের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দুর্বলতা খুঁজে বের করতে হবে এবং সেই জায়গায় পারদর্শী হতে হবে। প্রতিটি পজিশনে সেরা পারফরমার খেলানো, সেই সঙ্গে শক্তিশালী ব্যাকআপ রাখা বেশ জরুরি। কারণ, ব্যাকআপ নেই বলে ফর্মহীন কাউকে দলে রাখা হতাশা ছাড়া আর কিছু নয়, ম্যাচের কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে এই ব্যাপারটা। ক্রিকেট দলগত খেলা। তাই দলের প্রত্যেকে যার যার ভূমিকা পালন করলে, নিজেকে উজাড় করে দিলে, তবেই ধরা দেবে সাফল্য। কেটে যাবে সব আঁধার, ঘুচে যাবে দীর্ঘমেয়াদি খরা।
একটা দলের প্রাণ হতে পারে তরুণ খেলোয়াড়। কোচের গোপন অস্ত্র, তুরুপের তাস কিংবা ট্রাম কার্ড হতে পারে তরুণেরাই। তাই তরুণদের দিকে সুনজর দিতে হবে। অভিজ্ঞদের প্রমাণ করার কিছু নেই কিন্তু নতুনদের প্রমাণ করেই দলে জায়গা পাকা করতে হবে। তরুণদের প্রস্তুত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সফর দারুণ সুযোগ। অভিজ্ঞতার ঝুলিতে ভরপুর থাকা খেলোয়াড়েরা অনুপ্রেরণা ও ঘুরিয়ে দেয় ম্যাচের মোড়।
দলের কিছু কিছু জায়গায় সুনজর এবং উন্নতি করা অনেক জরুরি। একটা শক্তিশালী ওপেনিং জুটি নিশ্চিত করা, যারা ভয়ভীতি ছাড়া বিধ্বংসী বোলারদের মোকাবিলা করতে পারবে। ওয়ান ডাউন এবং মিডল অর্ডার প্রস্তুত করা বেশি জরুরি। তাদের ওপর অনেকাংশে ম্যাচ নির্ভর করে, তারা ম্যাচে রানের চাকা সচল রাখতে পারে। একজন পরিপূর্ণ ফিনিশার খুব দরকার আমাদের, যা হাড়ে হাড়ে টের পাই।
বোলিংয়ে পেস–স্পিন কম্বিনেশনটা আরও দৃঢ় করতে হবে। সর্বোপরি বিশ্বকাপের আগে তরুণ এবং অভিজ্ঞদের নিয়ে দল পুনর্গঠনের বিকল্প নেই।
লেখক: জুবায়েদ মোস্তফা, শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ
*নাগরিক সংবাদে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]